শাহ্ সাকিরুল ইসলাম এর সকল পোস্ট

চাঁদের যত কথা

সৃষ্টির শুরু থেকেই চাঁদ
বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর
কাছে ধর্মীয় উপাসনার বস্তু!

জার্মান সাহিত্যিক ই.ফন গ্যোটে
শশীকে সান্ত্বনার উপমা হিসেবে…
আর আমাদের সুকান্ত ভট্টাচার্য
উর্বীর এ পূর্ণিমা-উপগ্রহকে
‘ঝলসানো রুটি’-র
সাথে করেছেন তুলনা!

আদিমকালে অনেক জাতিগোষ্ঠীই
এটাকে করত বিবেচনা ধর্মীয় শক্তির মত,
তারা করত নিয়মিত পূজা এ চাঁদার!
আবার অমাবস্যা-পূর্ণিমা দিয়েই
দিন ও মাস করে গণনা কোন ধর্মে?

সেদিন চন্দ মামা, মঙ্গলগ্রহের খুব
কাছে এসে তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য নিয়ে
‘ব্লাড মুন’ হিসেবে দিয়েছিল ধরা,
এ বিরল আভার রক্তিম সৌন্দর্যের
উপভোগ করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ!
ওধিনাথের অনন্য এ সৌন্দর্যের
দেখা কিন্তু মেলে খুব কম সময়ই৷

চন্দ্রমাকে উপস্থাপন করা হয়
নিষ্পাপ বা ভার্জিন মেরির প্রতীকায়নে,
রোম্যান্টিকতাতেও সে কম যায়না!
উড়ুপের জাদুকরী সৌন্দর্য আছে
তাই বার বারই হয়ে উঠেছে
শিল্পের অনুপ্রেরণা!

শীতাংশু ও নিশাচর প্রাণীর মাঝে
রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক,
তাই পেঁচা শশাঙ্কের আলোয়
তার ডানা মেলাকে করে উপভাগ,
নেশা জাগানিয়া সোমের এ প্রভাব
বোধ হয় পড়েছে মানুষের মাঝেও!
পক্ষধরের সাথে প্রেমের এক সম্পর্ক,
আসলে প্রতিটি মানুষই একটি চন্দ্র
ছেলে বা মেয়েই হোক…
তার একটি অন্ধকার দিকও আছে!
কিন্তু এ অন্ধকার দিকটাকে
কাউকে দেখাতে চায় না সে!

মানব ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের
চন্দ্রজয় একটি মাইলফলক,
শুধু জয়-ই নয় এটি,
এ জয়ের মধ্য দিয়েই
কলাধরের সব গোপন রহস্য
বের করে মানুষ!

================o
—————————————————————————————————
চাঁদ > শশী, চাঁদা, চন্দ, ওধিনাথ, চন্দ্রমা, উড়ুপ, শীতাংশু, চন্দ্র, চন্দ, শশাঙ্ক, সোম, পক্ষধর < কলাধর
—————————- ———————————————————————–

উত্তর আমেরিকা
১২ ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

প্লাটিপাস

প্লাটিপাসরা স্তন্যপায়ী
মানুষও তাই…

ওরা মোটেই পাখি বা মাছ নয়,
তবে সন্তান প্রসব করে,
দুধ খাওয়ায় সন্তানদের…
হাঁসের মতো চোখ চঞ্চু ও পা
বাদামী রংয়ের ছোট্ট এক প্রাণী!
মানুষের চোখ ও পা আছে
কিন্তু চঞ্চু নেই…

প্লাটিপাসদের নেই বাড়ি,
সাদু পানিই তাদের বাসা!
নিঃসঙ্গ অবস্থায় ঘোরাঘুরি,
দিনের বেলায় ঘুম আর
রাতের বেলা চলাফেরা,
খাওয়া ঘুম এগুলোতেই
কাটিয়ে দেয় তাদের ১৫-২০
বছরের জীবনটা!

পানি এদের শরীরে লোমগুলোর জন্য
সেটাকে ভেদ করে পারেনা ঢুকতে,
সারাদিন পানিতে থাকায় লাগেনা গরমও
আবার লোমস-চামড়ায় তাপ থাকে বলেই
শীতে বা ঠাণ্ডায় শরীর যায় না জমে!
মানুষের কিন্তু…

মানুষের মত দাঁত নেই তাদের,
ঐ এক চঞ্চুই সব কিছু করে!
চ্যাপ্টা এটির গায়ে আছে
অনেকগুলো সংবেদনশীল স্নায়ু…
তা দিয়েই পানির নীচ থেকে
চামচের মতো গুগলি শামুক জেলিফিশ
লার্ভা কৃমি সবই তুলে নিয়ে আসে…
সঙ্গে তুলে আনে নুড়ি আর মাটি!
নুড়িগুলোই দাঁতের মতো কাজ করে,
শক্ত খোলসের ভেতরের মাংসল অংশ
চিবিয়ে খেতে সাহায্য করে নুড়িগুলো,
কতই না বুদ্ধি ওদের!

নেই বাড়ি, নেই খাবার
আছে গরম, আছে শীত
কাজ আছে, কাজ নেই কখনো,
বিহার নেই, খাদ্য নেই!
মানুষ প্লাটিপাস হলে কেমন হত?

==================o

উত্তর আমেরিকা
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

গাছের শক্তি

গাছ জড় বস্তু নয়, তাদের
প্রাণ আছে কিন্তু নড়তে পারেনা!
মানুষ ও প্রাণীদের সে সমস্যা নেই।

পৃথিবীতে সবকিছুতেই সর্বব্যাপী
এক পদার্থের প্রয়োজন, পানি!
যা জীবন দান ও রক্ষা করে,
এটা ছাড়া মানুষ উদ্ভিদ আর
প্রাণিজগতের অস্তিত্ব সম্ভব কি?

অদ্ভুত আঠালো গুণ রয়েছে পানির,
এ কারণেই তার অণুগুলির মধ্যে
সংযোগ হয়, মসৃণ পৃষ্ঠে পানি-বিন্দুগুলো
গাছের কান্ডের অতি ক্ষুদ্র-নলে বা টেস্ট-টিউবে
বা নলে আটকে থাকে!

প্রাণী ও উদ্ভিদের মূল উপাদান জল,
এ বিহীন কেউ কি বাঁচতে পারে?
মানুষ মায়ের গর্ভে পানির মধ্যেই
জীবন শুরু করে, গাছ কিন্তু পারেনা তা!
তাহলে গাছ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে
উপেক্ষা করে শাখা-প্রশাখা-পাতায়
মূল্যবান পানি উপরে কিভাবে পাঠায়?

মানুষের ও প্রাণির দেহে আছে পাম্প
যার কারণে তাদের রক্ত চলাচল করে,
কিন্তু গাছের হৃৎপিণ্ড নেই!

গাছ দুই মিলিমিটারেরও কম ব্যাসের
ক্ষুদ্র-নলে পানিকে অনেক উচ্চতায় পারে উঠাতে!
নল যত সরু হবে, পানি তত উপরে উঠে
নালীগুলো এতই পাতলা যে অনায়াসে
অনেক পানি শোষন-টান সৃষ্টি করে!
গাছের উপরের দিকে পাতায় বাষ্পীভবন
বা অপসারণের কারণে সৃষ্টি হয় ঊর্দ্ধমুখী প্রবাহ!
পানির এ দু’টি বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে হয় সবই,
কোন পাম্পের প্রয়োজন হয়না!

আমাদের মহাবিজ্ঞানী ই
গাছকে দিয়েছেন এ রকম শক্তি,
যা দেননি বস্তু মানুষ বা কোন প্রাণিকে!
গাছের এ শক্তির কথা জেনে আমরা কি
বিশ্ববিধাতাকে স্মরণ করতে পারিনা?

==================o

উত্তর আমেরিকা,
১৯ শে বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

ভ্রাম্যমাণ আদালত

ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন!
এ শতকের নয়-সালে,
আইনটি সংবিধান
মতে সাংঘর্ষিক জালে!
শুরু থেকেই ছিল বিতর্ক,
নামের শেষে ‘আদালত’
নিয়ম অনুযায়ী বিচারে
এদেশ হয়নি যে সতর্ক!

তিনি ইউ.এন.ও,
বিচারক ভ্রাম্যমাণ আদালতের,
সেদিন নিরপরাধ এক গরীবের!
জরিমানা আর জেলও দিয়েছেন,
তথ্যের ভিত্তিতে বিচারে তিনি
অনেক বাহবাও পেয়েছেন!

অভিযোগ করলো বা একজন তথ্য দিল,
যাচাই-বাছাই না করেই
সহকারী কমিশনার সিদ্ধান্ত নিল!
বিচারে হয়নি কোন নিয়ম মানা,
মনে হলো সত্যি! করলেন জেল-জরিমানা !

প্রচলিত আদালতের বিচারিক
রীতি-নীতিতে এ আইন চলেনা,
বলেই অভিযুক্তের পক্ষে কোনো
আইনজীবী নিয়োগের কথা বলেনা!
আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যবস্থা নেই?
দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু সত্যিই সেই!

এ আদালত জনসম্পৃক্ত কিছু ক্ষেত্র…
ভেজাল খাদ্য, উচ্চ-দ্রব্যমূল্যের
মতো বিষয়ে কিছু তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা!
গণমাধ্যমের কারণে তা প্রচারে
গণ-মানুষের সমর্থনের অবস্থা!
কিন্তু এ আদালতের অনেক
দুর্বলতা দৃশ্যমান প্রায় সময়!
অপরাধ হয়েছে মনে করলেই
বিচারকের শাস্তির জয়!

এসব দুর্বলতা ও বিতর্কে সব দেশে
তুলে নেয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত!
ভারতে কিছু অঞ্চল ছাড়া
বাংলাদেশেই কার্যকর আলবত!

————————————-
ইউ.এন.ও < উপজেলা নির্বাহী অফিসার

=====================o

উত্তর আমেরিকা
২৬ শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

ভাষার অসুখ

বাংলা ভাষা সেরা ভাষা,
মধুর ভাষা খুবই খাসা!
বাংলা ভাষা আন্দোলন,
একই কথা সব জনগন!

বিকাশ তার ৮০০ সাল,
১৮০০ তে ধরলো হাল!
চর্যাপদ প্রাচীন নিদর্শন,
বিকৃতির বাঁঁধা প্রয়োজন!

১৯৪৭ থেকে ৫২ সন,
ভাষার জন্য সবার মন!
৮৭ তে প্রচলন আইন,
খেলাপে হয় কি ফাইন?

ভাষা-আয়না এক চির
ব্যবহারে অনেক ধীর!
ধীরে ধীরে হচ্ছে ক্ষয়,
অসুখের পর মৃত্যু হয়!

রাষ্ট্রীয় কাজে কী দায়?
সারাদিন ইংরেজী খায়!
ভাষার বিকৃত উচ্চারণ,
কোথায় এখন সে মন?

বাংলা সংস্কৃতি বিভব,
হয়না তাদের তত রব।
বিকৃতির অতলে হারা !
এ দায়িত্বে ছিল কারা?

শব্দে-প্রতিধ্বনি নিস্তব্ধ!
করি কি তাদের জব্দ ?
মনুষ্যবোধ থমকে যায়
বাংলা ভাষা, মৃত্যু হায়!

============o

উত্তর আমেরিকা,
৩০ শে বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ

গাণিতিক জীবন

শূন্য দিয়ে বিকাশ তার পেছনে ঈশ্বর,
চন্দ্র সুর্য সাগর পর্বত গাছ নারী-নর।

সৃজন করেছে সবকিছু তিনিই এক,
তৈরি করেছেন সৌম্য ধরায় হরেক।

ইহকাল পরকাল দু’টি পাবে এক গা,
ধনাত্মক ঋণাত্মক সে সাথে দুটি পা।

অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ মিলে তিন,
জন্ম মৃত্যু বিয়ে তার কাছে যে ঋণ!

কিতাব খলিফা হামাগুড়ি সবই চার,
কোন ব্যস্ততা? ভুল যে হয় বারবার!

পাঁচ বার নামাজ, ধর্মে স্তম্ভ যে পাঁচ
কেউ মাংস খায় কেউবা সব্জি-মাছ।

ক্রিকেটে ছক্কা, জয়ে আছে যে ছয়!
গণিত কি জীবনের সবদিকেই নয়?

সাতের বেশী স্বর্গ,লাকি নাম্বারে হাত,
সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি তেও সাত!

এক অক্টেটে আট, ছাতাতে কত ছাঁট?
হাত পা কান চোখ, চার-জোড়া,আট।

নব্বইএ হয়না যার, তেমনি হয়নি নয়ে
মানি-কোড মতে চলে মিতব্যয়ী হয়ে!

মানুষের দুই হাতে দশ, দুর্গারও দশ,
গাণিতিক জীবন চলে,পেতে যত যশ!

==================o

অক্টেট : আট বিট (কম্পিউটার সায়েন্সে)
দুর্গা : হিন্দুধর্মে এ দেবীর দশ হাত
– – – – – – – – – – – – – – – – – – – –

উত্তর আমেরিকা,
৩রা বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ