(দ্বিতীয় অংশ)
তাছাড়া, রাজনৈতিক গুরুরা এও বলে গেছেন যে “নিরপেক্ষতা” একটা ভাঁওতাবাজি, সবার চোখে শ্রেণীস্বার্থ খেলা করছে। কাজেই নিজের দিকে, নিজের মতামতের উদ্দেশ্যে বিশ্লেষকের চোখ নিয়ে, সমালোচকের মনোভাব নিয়ে তাকানোর দায় থাকল না।
অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের নৈতিকতা এর ফলে ঝাপসা হয়ে আসে।
মানুষ আসলে সেই ধরণের প্রাণী যারা একে অন্যের সঙ্গে মানবিক সম্পর্কে যাওয়ার জন্যে আর সেইসাথে মানুষের একটা পূর্ণ সংজ্ঞাতে পৌঁছনোর মানসে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু একজন মানুষকে নিজের হয়ে-ওঠা এবং অপরের সঙ্গে সম্পর্কে আসা — এই দুটোকেই অর্জন করতে গেলে তার চেতনার মধ্যে এমনভাবে একটা নৈতিকতার মাত্রা স্থাপন করতে হবে যাতে ওই মর্যালিটি সত্যিকারের সামাজিক লক্ষ্য পায়। একে নৈতিকতার বাধ্যবাধকতা বলতে পারি। প্রত্যেক চেতনার মধ্যেই এই নীতিবোধের মাত্রা আছে, কিন্তু তাকে অন্য চেতনাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার কাজটাই হল আসল। আসল, কিন্তু অসম্ভব কঠিন নয় — কারণ আমাদের চেতনা অপরিহার্যভাবে অন্যের উপস্থিতির সঙ্গে জুড়ে থাকে। এইরকম চেতনাকে বলতে পারি স্বরূপ; যে নিজেকে অপরের স্বরূপ বলে মনে করছে। আর, অন্যের সঙ্গে যার সম্পর্ক থাকে সেই বাস্তবকেই তো নৈতিক চেতনা বলা যায়।
কিন্তু আমরা দেখছি, আমি-ও-আমার-দল অথবা আমি-ও-আমার-মতবাদ হচ্ছে ইউনিট “আমি”, এর বাইরে যা — সেই অন্যের সঙ্গে আমার যোগাযোগ শুধু বিয়োগকেন্দ্রিক। এখানেই একজন মহৎ ভাবনার মানুষকে চাইছে আমাদের সময়। ধরা যাক, রবি ঠাকুরকে চাইছে, যার উপন্যাসের পরাধীন-ভারতীয় প্রোটাগনিস্ট “বিদেশি বর্জন” আন্দোলনের বিরোধিতা করে যেহেতু গরীব মানুষের কেনা সস্তা আর টেঁকসই ব্রিটেনের মিলের কাপড় আন্দোলনকারীরা পুড়িয়ে ফেলছে তাদের জন্যে বিকল্প ব্যবস্থা না রেখেই। ফলত, চরমপন্থী আর সন্ত্রাসবাদীদের কাছে রবীন্দ্রনাথ “ইংরেজের দালাল” হয়ে পড়েন। এদিকে অসংখ্য মানুষ তার গানে লেখায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়েও তো পড়ছে। তাই, “দালাল” রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের চরও ঘুরে বেড়ায় সব সময়।
আজ পর্যন্ত যে আশি-নব্বই জন মানুষ মারা গেলেন টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে, তাদের মৃত্যুর দায়িত্ব কে নেবে — এই প্রশ্ন করেছেন তো; ক্যাশ অর্থনীতির ভগ্নদশা জিডিপি-র দুয়ের তিন অংশের উৎপাদনের ওপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে চলেছে — এমন আশঙ্কার কথা বলতে চেয়েছেন তো আপনি হয়ে যাবেন “কালো টাকার মালিক” এবং “দেশদ্রোহী”; আর যদি ফলিত অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা যায় বিমুদ্রাকরণ কালো টাকা, হাওয়ালা ও জাল নোটের ব্যবসাকে আঘাত করার একটা তাৎক্ষণিক ও কার্যকরী উপায়? তাহলে আপনার জন্যে তোলা আছে বাকি দুটো বিশেষণ — “স্বৈরাচারী” আর “সাম্প্রদায়িক”।
বেশ, এবার দুটো কাজই করুন একসঙ্গে! নির্ঘাত আপনি সাপ আর ব্যাঙ দুজনের গালে চুমু খাওয়া চরিত্রহীন জীব, না না, একটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্র। কেননা, আপনার জন্যে রাজনৈতিক মননে কোনও পরিসর ছেড়ে রাখা নেই। আপনি আছেন নো ম্যানস ল্যান্ডে যেখানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে নৈতিক চেতনা আর দেশের সাধারণ নাগরিক।
(আর অল্প একটু বলবো)
এপার বাংলা বা ওপার বাংলা বুঝিনা। আলোচনার প্রেক্ষিতে এটা সত্য যে … আমরা আছি নো ম্যানস ল্যান্ডে যেখানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে নৈতিক চেতনা আর দেশের সাধারণ নাগরিক। আমাদের জন্যে রাজনৈতিক মননে কোনও পরিসর ছেড়ে রাখা নেই।
শুভ সকাল প্রিয় চন্দন দা। ধন্যবাদ।