একজন দার্শনিক হিসেবে বলছি… ৫
আমাদের দুজনের দেখা হওয়া মানে একটা সোনাচড়াই। পাখির যতটুকু প্রথমেই আঁকা হয়ে আছে — তুমি। আমি নিজের ভাগটায় চটপট স্কেচপেন চালাচ্ছি।
কিন্তু ছবিতে নিজেকে বসাতে গিয়ে যদি বেশি ঝলসে উঠি, গাঙশালিক তার সমস্ত শরীর নিয়ে আমার দিকে ছুটে যাবে, তোমার প্রতিভায় ফিরতে পারবে না। এবার যত তার আমাকে ঘিরে ওড়া, তত বিমূর্ত হতে হতে একবার ভস্ম হয়ে যাবে ডানা লুটিয়ে। অথবা যেন অনিঃশেষ তার কন্ঠনালির মধ্যে পাখিকে লুকিয়ে নিল। কিন্তু মরে গেলেও গাঙশালিক নদীচর ছেড়ে কোথাও নড়বে না, দেখো। তুমি যে ওখানেই দিনরাত বাসা বেঁধে ছিলে!
আমরা দুজনে হাত ধরলেই ভারুইপাখি। এবার আমার স্বপ্ন একাই গোটা মাংসপালক হয়ে ওঠার। প্রথমে মনে হয় অনেক সময় দরকার, কিন্তু মুহূর্তেরা খোলামকুচির মতো দ্রুতগামী; যত দিন যায়, প্রতিটা সেকেন্ড থেকে অসংখ্য আমি জন্ম নিয়ে একে অন্যকে অনুসরণ করতে থাকে, যতক্ষণ না শালুকপাতায় একবিন্দু মরীচিকামাত্র হয়ে উঠেছি। ভারুই সেই অবাস্তব আমাকে ত্যাগ করে, যদিও একটু ঘনভাবে লক্ষ করলে বোঝা যাবে পাখি আসলে যাকে হারিয়েছে সে তুমি, তার অনেকদিনের ড্রয়িং।
একটা গাঙশালিক আমি আর তুমি মিশে গেলে। কিন্তু তোমার ঐশ্বর্যের কাছে সমর্পণের শক্তি, তার মানে তোমার সীমাবদ্ধতার কাছে নিজেকে ছুঁড়ে দেওয়ার সাহস আমার আর নেই। ধন্যবাদ, মুখের সামনে আয়না ধরেছিলে, কিন্তু প্রতিচ্ছবির মধ্যেও নিজের বাঁগালের টোল খুঁজে নিতে হয় — সম্ভাবনার পারদ শুধু অর্ধেক সত্যি কথাই বলে যে!
সুতরাং পাখি পৃথিবীর নদীচর ধ’রে আকাঙ্খা আর বিষাদে ভেঙে দুটুকরো হয়ে আছে। আমি শুদ্ধ ব্যঞ্জনবর্ণ, তোমাকে না পেলে কথন হবো কীভাবে?
‘প্রতিটা সেকেন্ড থেকে অসংখ্য আমি জন্ম নিয়ে একে অন্যকে অনুসরণ করতে থাকে, যতক্ষণ না শালুকপাতায় একবিন্দু মরীচিকামাত্র হয়ে উঠেছি।’
চমৎকার শব্দকথন। শব্দশৈলীর অসাধারণ বহির্প্রকাশ প্রিয় চন্দন দা।