এগারো
ক
সমভঙ্গ তিনি, একটি শ্বেত পুণ্ডরীকের ওপর পঞ্চরথ ভদ্রপীঠে দাঁড়িয়ে আছেন
অয়ি বজ্রকুণ্ডলমণ্ডিতা, দৃষ্টি দক্ষিণ দিকে, জটামুকুটে আধাচাঁদও;
হাতে বসেছে ব্যাখ্যানমুদ্রা, পাশ ও অঙ্কুশ, চতুর্থ-য় অক্ষমালা নাচে
বাগীশ্বরী ভাঙতে ভাঙতে বাসুলী, এবার চণ্ডীদাস কাব্য ভ’রে কাঁদো
গুহার ভেতরে যাচ্ছি — স্বপ্ন, আত্মা, তুরীয়-র তিনখানি অপ্রকট বাক
যাজক গাইডবৃত্তি, গঙ্গাইকোণ্ডের কথা শুনতে রাজি একশো মৌচাক
অতিভুজ বৃদ্ধি হয়, নয়-দশ হাতে চিন্তা, ব্রহ্মকপাল
আহ, ইনিই নিষ্পন্না চণ্ডী, মহাদুর্গা, শ্রুতদেবী, সরস্বতীকাল…
সন্ধেয় হোটেলে ফিরে খেতে ইচ্ছে করছে না… টিভি দ্যাখা, একটি স্নান, ঘুম
রাত দুটোতে জাগ্রত, রাস্তা-আলো বিছানায়, গায়ে তাপ কুসুম-কুসুম।
টি-শার্ট গলিয়ে নামি, বেয়ারার স্বপ্নদেহ মেঝেয়, দরজা নেই এঁটে
শূন্য থেকে অটো এসে তুলে নিয়ে ছেড়ে দিল (ফের উধাও) মন্দিরের গেটে
খ
তার সামনে উবু হয়ে মাটিতে বসেছি
পাথরে নখের দাগে কর্ণিকা আঁকলাম
চার বর্ণ কর্ণিকাতে, বাইরে গোলক
গোলক না বৃত্ত, তুমি বলো মনস্কাম।
আটখানা পদ্মপাতা, তাদের কেশর
দুটো ক’রে স্বর দিয়ে নির্মিত, আটটা —
বর্গ আট পদ্মপত্র ধারণ করেছে
বাইরে লিখি চতুর্দ্বার, চতুষ্কোণ কাটা।
“ওঁ মেধায়ৈ নমঃ” ক’য়ে মেধান্যাস করি
বাগীশ্বরী-যন্ত্রে হয় শঙ্খস্থাপন
আকাশে অমৃত, তাতে কামনা মিশুক
প্রলয়সমুদ্রে বীজ ফেলে যাচ্ছে মন
এই গর্ভঘরে রাত টেনশানে স্থির
অন্তরীক্ষ-ব্যালকনি ভেঙে পড়বে না তো!
বাক-এর তিনটে স্তর গুটিয়ে শুয়েছে
এবার তুরীয় — তুমি নিনাদ-সংযত।
“সামান্য আঙুল ঠোঁট ছুঁতে ইচ্ছে করে”
বলি আমি শ্বাস চেপে, মুখোমুখি দেহ,
এবং ইশারামাত্র ওষ্ঠ আধখোলা
মধ্যে শ্বেতপাপড়ি যেন হাসল — “ক্ষিদে হোক”।
ডান বুকে হাত রাখি — নম্র পাথর,
নীল শিরা তৈরি হয় জতু ব্রা-র নীচে;
চোখনৌকে ছইরূপ মণি জন্ম নিল
চুমুই পতিত চুম্বনের বিচোঁবিচে।
আমার ফুসফুস থেকে কন্ঠ আকাশ,
তারার নিষাদ-ব্যাধ বাজছে সেখানে।
সূক্ষ্ম নীল ধকধক জ্যোতিপ্রভা তার,
দৃশ্য ঘুরে চলে যায় আরেক সোপানে…
.
[গ্রন্থ : ছোট পুষ্পবৃষ্টি হোক]
নিপুণহাতে অতুলনীয় উপলব্ধি
শব্দ ভাবনার অসাধারণ প্রকাশ প্রিয় কবি চন্দন ভট্টাচার্য দা।