গত তিন মাসে এমন কোন দিন নাই যে দিন ৪/৫ টি মাদ্রাসা বা মসজিদ কর্তৃপক্ষ ওয়াজ মাহফিলের চাঁদার জন্য আসেনি, এদের মধ্যে প্রাইভেট মাদ্রাসা যে গুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের মাসিক ২০০ -২৫০ টাকা ফি দিতে হয়। বিষয় টা রীতিমত অসহ্য রূপ ধারণ করছে।
এসব ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব কতটুকু তা আয়োজকেরাই জানেন। ধর্ম প্রচার বা সেই জাতীয় কিছু হলে এসব মাহফিলে অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ করানোর চেষ্টা থাকতো, কিন্তু দাওয়াত দিতেই ওরা মাইকিং করে ” ইসলাম প্রিয় তৌহিদ জনতা…”
আমার প্রশ্ন হচ্ছে- যে ব্যক্তি তৌহিদের অন্তর্ভুক্ত তার তো মাহফিলের দরকার নাই। আর যদি দরকার ও থাকে তাহলে এই সমস্ত মাহফিলের জন্য চাঁদাবাজি করার দরকার কি? আর উত্তরে ওরা বলে মাহফিলের খরচ, মাদ্রাসার তহবিল গঠন ইত্যাদি …
মাহফিলের খরচের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি খরচ হচ্ছে যারা ওয়াজ করে তাদের সম্মানী, ( যদিও বিষয়টা এখন রীতিমত দর কষাকষির পর্যায়ে চলে গেছে ) অর্থাৎ পুরো বিষয় টি ধর্মবাজী আর এই ধর্মবাজেরা কিন্তু কখনোই কোন ধর্মের মঙ্গল করে নি।
আমি কোরান পড়ি নিয়মিত। কোরানের কোথার ওয়াজ মাহফিলের কথা উল্লেখ নাই। শিক্ষা ও আল্লাহ সচেতনতার কথা বলা আছে, আর ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পেক্ষাপটে যে দৃশ্য টা স্পষ্ট তা হচ্ছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বেড়ে চলেছে। পর পর তিন সপ্তাহে একই জায়গায় তিন পক্ষের মাহফিল! কেন?
বলে কিনা ঐ সপ্তাহে ওরা যে মাহফিল করেছে তার জবাব! আবার এমনও দেখা যায় একই মহল্লায় একই গ্রামে একই দিন একাধিক ওয়াজ মাহফিল। কেন?
কে কার চেয়ে বেশী মানুষ জড়ো করতে পারে আর কে কার চেয়ে বেশী টাকা (চাঁদা) ওঠাতে পারে।
প্রত্যেক পক্ষই আল্লাহ আর আল্লাহর রসুলের কথা বলছে, তবে এত বিভেদ কেন? এত মত পার্থক্য কেন? এসব কি বাড়াবাড়ি নয়? আমি আল্লাহর শোকর করি- কারণ আল্লাহ আমাকে আমার দিন শুরু করার সুযোগ দেন দান করার মাধ্যমে। আর সেটা আমি খুব আন্তরিক এ নীরব মুহূর্তে করে থাকি। এবং নিয়মিতই করে থাকি। আর এতে আমার অন্তরে প্রশান্তি মিলে।
কিন্তু তথাকথিত ওয়াজ মাহফিলের নামে এই চাঁদাবাজির জন্য যখনই কেউ আমার কাছে আসে আমার অস্বস্তি লাগে। কারণ- আমি দান করতে অভ্যস্ত, চাঁদা দিতে নয়। আর সেই দান যেই দান আমার কল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
আমার সাথে যে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন, অথবা এসব ওয়াজ মাহফিলের পক্ষে হাজারো যুক্তি দেখাতে পারেন, আমি তাদের অসম্মান করি না। আমি শুধু বলতে চাই ধর্ম তাই যা প্রশান্তি এনে দেয়। আল্লাহ তার হাবিব কে ওহির মাধ্যমে সর্ব শেষ গ্রন্থ দান করেছেন, এর আগে তিনি তার বান্দাদের প্রতিটি জনপদে স্ব স্ব ভাষার রসুল ও নবী পাঠিয়ে গ্রন্থ দান করেছেন, আর কোরান হচ্ছে তাদের সর্বশেষ ও শুদ্ধ সংস্করণ-
মানুষের এক জীবনে যা কিছু দরকার- ইহকাল ও পরকালে সফল হবার জন্য যা কিছু দরকার তার সব কিছু তিনি সহজ সরল ভাষা কোরানে উল্লেখ করেছেন, শিখিয়ে দিয়েছেন, তা ছাড়া নবীজী (সাঃ) সমগ্র জীবনী-তো নিদর্শন হিসেবে রয়েছেই। আমার মনে হয়না রসুল ( সাঃ) জীবনী বা আদর্শের বাহিরে অন্য কোন কিছু পৃথিবীর কোন মানুষ পা প্রাণীর জন্য প্রয়োজন রয়েছে।
বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজী সে কথাও উল্লেখ করে গেছেন, যে- তোমার জন্য আমি দুটি আলোক বর্তিকা রেখে যাচ্ছি একটি হচ্ছে আল্লাহর কালাম (কোরান) আর অন্যটি হচ্ছে আমার জীবনী আদর্শ ( হাদিস)
আমি বুঝিনা মানুষ কেন এত বিভ্রান্ত! যখন তাদের সামনে দু টি অনির্বাণ শিখা প্রজ্বলিত।
মাফ করবেন প্রিয় পাঠক-
আমি ধর্মের ছাত্র নই আর এই বিষয়ে আমার নূন্যতম জ্ঞানও নাই। আমি শুধু জানি ধর্ম – কর্ম খুব সহজ সরল সাবলীল একটি পথ, যেখানে বাড়াবাড়ির কোন স্থান নাই। আল্লাহ সকলের সহায় হওন।
দাউদুল ইসলাম। ২৭ ফেব্রুযারী ১৭
নীরবেই উত্তর দিয়ে গেলাম জনাব।


সালাম জানুন দাদু ভাই।
মৌসুমী মাহফিল সব এলাকাতেই মোটামুটি একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মহল্লায় ১০০ গজের মধ্যে ৪ টি মসজিদ। যার ২ টি মাদ্রাসা। কোমলমতি শিশুরা পড়ে।
চার মসজিদের ৪x২ = ৮টি মাইকে রাস্তা অবরোধ করে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে। আদায়কারীদের দেখে মায়াই লেগেছে। ভাড়া করা ভাষ্যকার একই সুরে পথচারী পথরোধ করেছেন। অর্থ আদায়ে বাধ্য করেছেন। নইলে উচ্চস্বরে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করানো হয়েছে। তারপর এলাকা চিহ্নিত সমাজ সেবীরা ব্যাক্তিগত গ্রুপ তৈরী করে বাড়ি-বাড়ি হানা দিয়েছে। বেহেস্ত পাবার শর্টকাট রোড এর দাওয়াত দিয়েছেন।
অতঃপর মাহেন্দ্রক্ষণে উচ্চস্বরে মধ্যরাত পেরিয়ে মানুষ দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ৪ সপ্তাহে ৪ টি মাহফিল আর আল্লাহর রাস্তায় মানুষকে ফেরানো তাগাদা আমাদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে। কখনও কখনও জিহাদ শব্দটিও আমাদেরকে ভীত করে তুলেছে।
আমরা কি আসলে বা আদৌ ২০১৭ সালে আছি !! আমি জানিনা।
ধর্ম অর্থ ভয় অথবা লোভ দেখানোর বিষয় নয়। ধর্ম হচ্ছে মানবকল্যাণে বিধান।
আপনার পোষ্টের মুল বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
শুভ কামনা।
“অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বেড়ে চলেছে।”
দ্বিমত করছি না। শুভেচ্ছা রইলো।
আমাদের আশে পাশেও এই মাইকিং হুজুরদের । রাতে ঘুমানো যায় না । আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম । আমার বাপে খুব ধার্মিক । সেও অসহ্য হয়ে গেছে তাদের জ্বালায় । কি আর বলবো ।
শুভকামনা কবির জন্য ।