দেবী ও কবি

Devi-Kab

জীবনের হাত ধরে মনের বিচরণ
কোনটা চারণ ভূমি
জীবন না মন?
তুমি বললে ‘মন’
তবে মনের ডানায় ভর করে জীবনের বিচরণ হোক
-তবে তাই হোক
-এসো,আমি তোমাকে দেব জীবনের আরেক গগন
-ছেড়ে দেবে জানি, আসছি তবুও
– কি করে জানলে ছাড়বো
– কত দিন ধরে খুঁজছি ‘মানুষ’ নিজে একবার মানবী হবো
– আমি কি তা নই? হে মানবী, আগলে ধরো দু হাতের করতলে
আমি তোমার বিশ্বাসের অশ্রদ্ধা করি তার আগে আমাকে নিঃশেষ করো
উন্মোচন করো
বুকের জমিনে বপন কর অগাধ স্বপ্ন
-স্বপ্নইতো ভয়! স্বপ্নের আড়ালে দহনের বিভীষিকা
বড্ড ভয় হয় স্বপ্ন হাতড়াতে গিয়ে আচমকা পড়ে যাই যদি
-আমি তোমায় পড়তে দিলে তো
-হাহাহা
– হাসছো যে
-একটাই জীবন !
চলে যাবে !
আমি আর স্বপ্ন দেখি না প্রিয় ।
স্বপ্ন-হীন অনেক ভালোই আছি ।
ভুলে আছি ।
দাগের সীমানায় কত্তো রক্ত স্রোত বইলো
রক্ত শুকিয়ে দাগ হলো ফের
কিন্তু সেই দাগ থেকে যায়
-আমার সব দিয়ে তোকে সুখী করব
– করুণা কক্ষনো সুখ হয়না
-করুণা বলছো কেন?আমার অধিকার…
-গ্রহণ করুন আমার নিষ্কণ্টক বন্ধুত্বের দাবীটুকু
-আমি আপনাকে বন্ধুই জানি
মানি। মানবোই
-এইযে পর্দা খুলে আসছো বেরিয়ে
-হুম …দেখছি
-কি
– পথের বাঁক
– হ্যাঁ পথের উপারেই স্বপ্নের বন বাদঁড়
-নতুন বসন্তের কোমল প্রবণ
তোমার পিঠে শুবো বনো হরিণীর মত, তুমি আমার ভর নিয়ে লিখবে যুগল কবিতা
-স্বপ্ন দেখাচ্ছো?
-না জীবন বুনছি
অনন্ত কাল ধরে খুঁজছি যে ‘মানুষ আজ আমি তার হচ্ছি
– আমি সত্যটা অনুভব করতে পারি
-জানি
-আমি জানি না কতদিনপর হাসছি
খুব হাসছি…খুব…
-আমি খুঁজে পেয়েছি অনন্ত কবিতা
-তুমি ডাকলে আমি ফুলের মৃত্যু ভুলে
পাখির ক্রন্দন রেখে ছুটলাম তোমার দিকে…
-অদ্ভুত!
-কেন?
-এত্তো ভেসে আছো জানতাম না
– কি করবো অগাধ সমুদ্র
আজ জানলে
-হুম… বুঝতে পারিনা এতটা
-আর কি …
-জানলাম বেলা পুরালো, যখন জ্যোৎস্নার আলো মাটির বুকে উম নেয় না
-উমের আশায় থাকিনা । শিথিলতাই শান্তি
বর্ষার ছন্দময় শীতলতা… বুকে লেপ্টে থাকা মেঘের কান্না
-আমি শুনছি তোমার বুকের দ্রুত স্পন্দন
শান্ত হও মনা……
জানো একদিন রাস্তা হারিয়ে খুঁজলাম গন্তব্য।একজন জিজ্ঞেস করলো
তোমার বাসায় কে কে আছে
আমি বললাম কেউনা।লোকটি এক গাল হেসে বল্লো –তবেতো সারা পৃথিবীই তোমার
যেখানে খুশি থামো , নামো…।
আজ থামলাম।
-তবে কি ফের চলা শুরু করবে?
– উপায় কি?
-আমি বোধ হয় পড়েই রব বিদীর্ণ ষ্টেশনের মত
-না মনা
আমি একা চলবো তা না
তোমার সাথে তোমার কবিতার সাথে , বৃষ্টির কান্নার সাথে
আমি জানি দহন কি!
-খুব ইচ্ছে হয় নীল একটা প্যারাসুট নিয়ে আকাশে উড়ি…
আচ্ছা তুমি জ্যোৎস্না বৃষ্টি দেখেছো?
– কি জানি দেখেছি হয়তো , মনে নেই
– জলের উপর পরেছে তোমার ছায়া
প্রিয় তুমি … আমার হলে না !
বুকের পাশে রাখি তোমার মুখ
তুমি আমার ছিলে না !
অপেক্ষাতে মরতে মরতে
জীবন কাঁদছে …
প্রিয় তুমি কি আমার হবে না ??……
-আমি তো তোমার হয়েই আছি।
“দেখ রাতের বুক চিরে নামলো বর্ষণ-ধারা
তীব্র ভষ্মতায় এবার সুখের শীতল ছোঁয়া লাগুক
খুলে দাও জানালার কপাট তুলে দাও ভারী পর্দা
ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় ফিরে আসুক আধরা মাধুকরী
খুলে দাও চুলের বাঁধন মেলে দাও গোপন সমীরণ
মুক্ত গগনের উন্মুক্ত আন্দোলনের হোক সফল বিচরণ
অঞ্জলি পেতে বরণ কর
বুভুক্ষুর যত্তো ক্ষুধা আজ হোক নিবারণ
আমাকেও সিক্ত কর
রিক্তের আড়ালে আসতে দাও প্রবণের হর্ষ
মৌমিত উৎকর্ষে ডুবে যেতে দাও
লুটে যাক সকল জলাঞ্জলির মোহ
মিটে যাক দীর্ঘশ্বাসের অতলে চাপা বিরহ
ছুটে যাক চেতনার সুতীব্র প্রাঞ্জলতা
অনিন্দ্য আবহে জীবনের রান্ধ্রে রান্ধ্রে পৌঁছে যাক মমতা।”
– আমি আসবো একদিন তোমার রুগী হয়ে
– রুগী হয়ে নয়
– এসো প্রিয়া হয়ে
– রুগী না হলে কি তুমি আমার কপাল ছুবে ??? বল !!
– রুগী হলে শুধু কপাল
– আর প্রিয়া হলে কত কি…
– তুমি জান না !
প্রিয়াদের ছুঁতে নেই …
– আমিতো ছুঁবো না
– ওদের ছুঁলেই তুমি কবিতা শূন্য হয়ে যাবে
– আমি তমাকে অনেক কবিতা দিব …
– যদি কখনো দেখা হয়
– আর আমি অবগাহন করবো আনন্দলোকের আলোয়

-আসলেই তুমি কবিতার আকাশ
-কি জানি !
-তুমি না বল …
-সত্যি বলছি
-আমার যখন খুব কাব্য তৃষা লাগে
-তোমার কবিতা পড়ি
–ব্যাস নতুন করে উজ্জ্বেবিত হই
-বুকের উপর রেখেছি আমার হাত
তুমি দেখতে পেলে না !
ঠোঁটের উপর রেখেছি আমার সুখ
তুমি ডুবিয়ে দিলে না !
যখন মদির মাতাল
জীবন শুকায় ভাসতে দিলে না …
-আমি প্রকম্পিত!
-তোমার জল ভরা চোখ
-তবুও আমার কাঁদতে দিলে না !
-তোমার কালিতে ভরে নেব আমার কলম
বুকের উমে কবিতায় খাতা
-তনুমন চিনে চিনে আমি কুড়িয়ে নেব শব্দ
-ওষ্ঠের নোনতা স্বাদে ভিজিয়ে দেব বহুদিনের খরা-মাঠ
-জানি তুমি সইতে চাইবেনা
-উম … উষ্ণতা !
উষ্ণতার ধার সহা সহজওনা
তুবু তোমাকে সইতে হবে
আমার কবিতার জন্য
আমার জন্য
-বন্ধু আমি উষ্ণে ডরাই
উষ্ণে অনেক ভয় ,
তোমার কাছে রয়ে গেলো
অনেক দিনের ক্ষয় ।
-হোক ভয়
হোক ক্ষয়
অথবা হোক কোন তাণ্ডব লীলা
সখি, এই টুকু সইও
– সইলাম …জানি না আসলেও পারব কিনা !

আমার আকুতি ভরে তুমি তোমার অক্ষমতার জ্বলা
তোমার ব্যথার লীলা…ঢেলে দিও।।
– আমি অমৃতের সুরার মতো পান করে মেটাবো
বেদনা কেবল বেদনাই বাড়ায়
জন্ম জন্মান্তরের জ্বালা
মরে যাবে
-না নতুন করে বেচে উঠবো
দুজন
-তুমি ত জান কষ্ট কি !!
কেন আরও কষ্ট চাও ??
– এই যে শব্দের দেহে লেপ্টে আছে কষ্টরা
এরাই এখন সব
-এই কষ্ট না হলে বেচে থাকার আনন্দই বা কি?
আমি দেখেছি তোমার পৃথিবী
সেখানে তুমি কারো প্রবেশাধিকার রাখ নি
কিন্তু আমি জানতাম
আমি জানতাম
-তবে তুমি দেখনি সেই দ্বার
তবে বলো যা জানো
-তোমার বৃত্তের ভেতরে অন্য এক তুমি লুকিয়ে আছ
যার খোঁজ খুব কম মানুষই পেয়েছে ।
-আমাকে উন্মোচন করবে?
-না!
-সোনা প্লিজ!
-না
কখনোই না !
-তবে মরি!
-মর !কিন্তু তবুও না !
-মরবো । একটি সত্য বলবে?
শেষ কবে দেখেছো অক্ষি-রস
-মনে নেই
কাজল ছুঁইয়ে পড়া এক একটি স্বপ্ন?
-জানিনা
-তবে যে মরতে বলছো
-কি করবো যদি বাঁচাতে নাই পারলাম
দেহের মাঝে ধরেছি তোরে
দেহের ভেতর নাই ,
হৃদ মাঝারে আছো গো সাঁই
হৃদ কোমলে পাই ।….

2832a

© দেবী ও কবি কাব্য গ্রন্থ থেকে

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

1 thought on “দেবী ও কবি

  1. দেহের মাঝে ধরেছি তোরে
    দেহের ভেতর নাই,
    হৃদ মাঝারে আছো গো সাঁই
    হৃদ কোমলে পাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।