শুভ্রবসনে নিথর দেহ
কফিনে শুয়ে আছে লোকটি
না
তিনি নিজের ইচ্ছেয় শোয় নি
তাকে শোয়ানো হয়েছে,
তিনি এখন লোক নয়, মৃত্যু তাকে লোক থেকে লাশ বানিয়ে দিয়েছে
লাশের ইচ্ছের কোন সুযোগ নাই
বলা উচিত লাশটি রাখা আছে কফিনে
যিনি একজন মানুষ ছিলেন, অথবা লোক
এখন তিনি নাই!
লাশটি হয়ে শুয়ে আছেন।
মানুষ থেকে লাশ
কিন্তু লোকটি… অর্থাৎ মানুষটি এখন কোথায়?
সে কি করছে
সেকি জানে সে আর মানুষ নাই?
এই বাড়ি উঠোন পুকুর
প্রিয় কামরা,খাট.. বারান্দায় দোল খাওয়া দুপুর
এখন কিছুই তার নয়
এখন সে বিদায়ী যাত্রী! ..
মানুষ টি বিচলিত হয়ে উঠে… ব্যতিব্যস্ত হয়ে ডাকছে প্রিয়তমা স্ত্রীকে
আরে!
এতো আত্মীয় স্বজন, পরিবার পরিজন, নিকট দূরের এতো চেনা মুখ….
এগো…. উনাদের বসতে দাও
চা পানি…
আরে সবাই এমন বিমর্ষ কেন? কি হয়েছে? আরে কাঁদছো কেন তোমরা..
মানুষ টি উতলা হয়ে জড়িয়ে ধরছে স্ত্রী পুত্র কন্য
নাতি নাতিন বন্ধু…
আরে কি হলো তোমাদের? আমাকে কেউ কিছু বলো…
এই ঘর
ঐ ঘর… ছুটছে আর মানুষের ভীড় গলিয়ে একে একে সবাই কে ডাকছে..
কেউ তার কোন কথাই শুনছে না
কেউই ফিরে তাকাচ্ছে না
জবাব দিচ্ছে না!..
সবাই ব্যাস্ত.. কান্নার রোল
বিলাপ
রান্নার আয়োজন, বাতি, চেয়ার.. ডেকোরেশন,
খুন্তি কোদাল বাঁশ…
মানুষ টি দৌড়াচ্ছে… সে ভাবছে সে গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখছে..
কিন্তু আয়নার সামনে দাড়িয়ে সে নিজেকে খুজে ফেলো না..
কোথায় সে?
কই সে… আমি নিজেকে দেখছিনা কেন?
আমি কই?
মুহূর্তে উঠোনে এলো
কফিন
লাশ… সাদা বস্ত্রাবৃত দেহ..
আমি শুয়ে আছি কেন?
তাহলে আয়না… কান্না… বিলাপ.. রান্না.. এতো সব আয়োজন…
না না আমার কিছু হয়নি!
এই
এই শোনো তোমরা.. এই দ্যাখো আমি
আমি মরিনি!..
এই যে আমি কথা বলছি, দেখছি, শুনছি…
আরে
কেউ তো শুনো……
চারদিকে আতর চন্দনের মম ঘ্রাণ
দুলে উঠা দোলনা
চল্লিশ কদম গুনার শব্দ, কালেমা শাহদাত..
মানুষ টি দেখলো মাঠ ভরা মানুষের ঢল..
সারি সারি
কান্না জড়িত কণ্ঠে শুনছে নিজের জীবনবৃত্তান্ত
তারপর তাকবির
নামাজ
মাটির গর্ত…… কবর!..
সবাই মিলে লাশটা নামিয়ে মাটি চাপা দেয়
অন্তিম প্রার্থনা শেষে
কেউ কেউ কাদছে
সব শেষে ফিরে যায় সবাই স্বজন- পরিজন
চল্লিশ কদম দূরে পৌঁছুতে না পৌঁছুতে
প্রোথিত লাশটি আর লাশ থাকেনা!..
মুহূর্তের মধ্যে পাথর চাপা দুর্ভেদ্যতা নিয়ে জেগে উঠে মানুষ
অথচ হাত নাড়তে পারেনা
দাড়াতে পারেনা
অন্ধকার
ভেজা সোদা গন্ধ আর দমপাটা শূন্যতা ভেদ করে দুজন ব্যাক্তি আগমন করে
খুব পরিচিত একটা ভাব
মানুষ টি মনে মনে আশ্বস্ত হয়, এই ভেবে যে হয়তো ওরা তাকে এখান থেকে উদ্ধার করতে এসেছে
কিন্তু
ওরা বলে
ওরা নাকি সারাজীবন মানুষটির দু কাধেই ছিলো
আর ওরা নাকি তার সকল কর্মের চাক্ষুষ সাক্ষী
ভালো মন্দ সব কিছুর দলিল দস্তাবেজ রয়েছে!
ওরা বেশ ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে জানতে চায়
তোমার রব কে?
তোমার ধর্ম কি?
তারপর নূরের আলোয় উজ্জ্বল একটি মুখ মোবারক সামনে আসবে ( মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ)
ফেরেস্তারা জানতে চাইবে উনি কে?
এর আর কোন অন্তঃ নাই
উত্তরের উপর নির্ধারণ হয়ে যাবে তার পরিবর্তী জিবন জগৎ
দেখানো হবে
স্বর্গ নরক
শুরু হবে ভোগ… দুর্ভোগ!….
তিনি এখন লোক নয়, মৃত্যু তাকে লোক থেকে লাশ বানিয়ে দিয়েছে
লাশের ইচ্ছের কোন সুযোগ নাই …