একাই একান্নবর্তী

টুকু স্কুলে বেরনোর সময় মাকে বলে – মা, আজকে একটু অন্যরকম করে জুতোর ফিতেটা বেঁধে দাও না। মানসী আর এক প্যাঁচ ঘুরিয়ে বেঁধে দেয়। তাই দেখে টুকু বলে – মা, তুমি একদম পিকলু দাদার মত জুতোর ফিতে বেঁধে দিলে।
মানসী হাসে গতবার হোলির সময় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে সবার সঙ্গে বেশ হৈ চৈ করেছিল টুকু। দাদার ছেলে পিকলুকে ভোলে নি।
পরদিন টুকু আবদার করে – মা, আজকে একটু সুক্তো করবে। সেই সুক্তো খেয়ে টুকু মাকে জড়িয়ে ধরে বলে – গ্রীষ্মের ছুটিতে জেঠিমা যে রকম রান্না করেছিল একদম সেরকম। রাতে পড়তে বসে টুকু ঘুমে ঢুলু ঢুলু। বকা দিতে শুরু করল তাপস। তাই দেখে মানসী এগিয়ে আসে। বলে – তুমি বাবা হয়ে একটু আদর করে বুঝিয়ে বলে পড়াবে। তা না? সরো, আমি দেখছি।

মানসী টুকুর চোখে মুখে ভাল করে জল দিয়ে মুছিয়ে একটু টুকরো ক্যাডবেরি মুখে দিয়ে টুকুকে বলে – চল আমরা আকাশ দেখে আসি। আজ কি সেই আগের মত তারাগুলো সব জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু পরে ছাদ থেকে নামতে নামতে টুকু বলে – মা তুমি একেবারে আমাদের বেস্ট মোহিত স্যারের মত বুঝিয়ে দিলে। চলো, আমি আমার বাকী পড়াগুলো করে নিই।
মানস দেখল বাধ্য ছেলের মত টুকু পড়ছে। রাতে বিছানায় শুয়ে টুকুর আবার সেই বায়না – মা, গল্প বলো।
মানসী গল্প বলতে শুরু করার আগে স্পাইডারম্যান ব্যাডম্যান আর কুট্টুসের কিছু কথা টুকুকে দিয়ে বলিয়ে নেয় তারপর তাদের মধ্যে ব্যাঙ্গোমা ব্যাঙ্গোমি আর রাজপুত্তুর জুড়ে দিয়ে গল্প বলে।

সকালে টুকু বলে – মা, কাল তুমি দাদু ঠাকুমার মত কি সুন্দর গল্প বললে। আমার কখন ঘুম এসে গেল বুঝতেই পারি নি। সকালবেলা একটু পাশের বাড়ির সঙ্গে আর এক পাশের বাড়ির শুরু হল ঝগড়াঝাটি। তার মধ্যে টুকুর বাবাও জড়িয়ে পড়ল। মানসও ছাড়বার পাত্র নয়। যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য কোমর বাঁধতে শুরু করেছে। আর তখনি কাজের মাসিকে রান্নার সব বুঝিয়ে মানসী সামনে এসে দাঁড়ায়। ব্যাস একটু বুঝিয়ে বলতে পাশের বাড়ির দুজনেই নিজেদের মধ্যে পরে বোঝাপড়া করবে বলে তখনকার মত চুপ করে যায়।

ঘরে এসে মানস বলল – আমার মত মেনে নিল না হলে আমি একহাত নিতাম ওদের।
অফিস যাওয়া জন্য রেডি হতে হতে মানসী বলে – তুমি কি একটু পরে বেরোবে? তাহলে ওসব কথা বাদ দিয়ে একটু টুকুকে দেখো। আম আসছি।
মার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে টুকু ভাবে – আমি তো মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে যাই। ওখানে সবাই আছে। দাদু ঠাকুমা কাকা কাকীমা জ্যেঠু জ্যেঠিমা দাদা দিদি পিসিমণি সবাই আছে। কত আনন্দ হয়। কিন্তু এখানে ফ্ল্যাটে আমরা তিনজন। তবু আমার মায়ের জন্য মনে হয় সবাই আমার সঙ্গে আছে। সেই আনন্দ হুল্লোড় আদর আবদার সব আছে।
মানসী ভাবে – টুকুকে একলা হতে দিলে চলবে না। আমাদের ট্রান্সফার জবে কিছু তো করার নেই। তাই যতটা পারি গ্রামের বাড়িতে মাঝে মাঝে নিয়ে যাব। না হলে বড় হবে কি করে?
আর মানস ভাবে – মানসী আমার দশভুজা। একাই যেন একান্নবর্তী জীবন।

4 thoughts on “একাই একান্নবর্তী

  1. অণুগল্পটি পড়লাম। ভালো লাগে আপনার লিখা। শুভ শারদীয়া প্রিয় কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।