সাহিত্যে নকলবাজ যারা

চুরি এবং সিনাচুরি। দুটি শব্দই আমাদের পরিচিত। নকল করে সাহিত্যে আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা নতুন নয়। যারা নকল করে, করার চেষ্টা করে, এদের ‘অমেধাবী মূর্খ’ বলেন বিজ্ঞজনেরা। আমি তাদের বলি ‘সাহিত্যের সারমেয়’, আমি ওদের বলি ‘সাহিত্যতস্কর’। ইদানীং আমাদের চারিপাশে এমন তস্করের সংখ্যা বেড়েছে। পিএইচডি’র থিসিস থেকে শুরু করে, কবিতা – গান অনেক কিছুই চুরি হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের কিছু ‘বোদ্ধা’ আছেন, তারা বলেন – ‘আরে খারাপ কিছু তো করছে না, সাহিত্য করছে। তাকে একটু সমর্থন দিয়েই যাও না।’ আমি সেই ‘বোদ্ধা’দের সবিনয়ে দুটি প্রশ্ন করতে চাই।
১। কা’কে সমর্থন দিতে হবে? সাধনা, চর্চা, অধ্যবসায় ছাড়া যে লেখালেখিতে এসে অন্যের মৌলিক লেখা চুরি করলো, সমর্থন দেব তাকে? কেন দেব? কোন নীতিতে দেব?

২। সাহিত্যের নামে যারা জঙ্গলের জাঙ্গাল তৈরি করছে- তারা মূলত তো সাহিত্যে দূষণ তৈরি করছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা মানে, দূষণকে সমর্থন করা। কেন করবো? এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামের আগে – ‘কবি’, ‘গীতিকার’, ‘সাহিত্যিক’ তকমা লাগানো অনেক একাউন্ট চোখে পড়ে। এরা কারা? কি তাদের কর্ম? কি তাদের পরিধি? এর উত্তর অনেকে না জেনেই, তাদের বাহবা দেন। যারা বাহবা দেন, তাদেরকেও যদি আমি ‘মূর্খের পাহারাদার’ বলি – তবে কি ভূল বলা হবে? আমরা হতাশ হয়ে দেখছি, যে গীতিকার আজ থেকে ৪৫ বছর আগে যে গানটি লিখেছেন, আজ কেউ এসে সেই গানের স্তবক প্রায় পুরোই নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। অথচ তার গান লেখার বয়স পৌনে তিন বছর! ভাব, চিত্রকল্প, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, শব্দচয়ন, সুর, সাধনা – মিলিয়ে প্রথম যিনি গানটি লিখেছেন, তিনিই এর জনক। কেউ এসে তিন লাইন চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার মতলব টি কি? এদের যারা মদত দেন, তাদের উদ্দেশ্যই বা কি?

শুধু তাই নয়, এই সময়ে আমরা দেখছি, যে অন্যের গান চুরি করেছে, সে’ই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে অভদ্র, অশোভন, বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলছে। আর আমাদের কেউ কেউ তা দেখে মজা লুটছেন! একটি গান প্রথম যিনি লিখেছেন, গানটির পদকর্তা তিনি। তুমি তা চুরি করবে, আবার মূল পদকর্তাকে গালিগালাজও করবে- এটা তো হতে পারে না।

আমি সবিনয়ে যে কথাটি বলতে চাই, যারা সৃষ্টিশীল ভাবনায় নিজেদের ব্রত রাখেন সময় এসেছে তারা সবাইকে প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। না হলে, আজ একজনের শব্দভাণ্ডার, পংক্তি, চরণ, গান চুরি হয়েছে। কাল আপনার হবে। সাধনা কঠিন বিষয়। সাধনায় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে না থাকলে, শব্দ কাউকে ক্ষমা করে না। কথাটি যেন আমরা ভুলে না যাই।

©
নিউইয়র্ক / ০৩ অক্টোবর ২০২০

4 thoughts on “সাহিত্যে নকলবাজ যারা

  1. একমত। কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি … যারা নকল করে, করার চেষ্টা করে, এরা অমেধাবী মূর্খ। আমরাও তাদের বলতে চাই ‘সাহিত্যের সারমেয়’, ‘সাহিত্যতস্কর’। :(

  2. একমত। কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি … যারা নকল করে, করার চেষ্টা করে, এরা অমেধাবী মূর্খ। আমরাও তাদের বলতে চাই ‘সাহিত্যের সারমেয়’, ‘সাহিত্যতস্কর’।

  3. লেখা যারা নকলে অভ্যস্ত, তাঁরা তাঁদের বিবেক বুদ্ধিও বিক্রি করে ফ্বলছে বলে মনে করি। সুন্দর সময়োপযোগী পোস্টখানার জন্য নিরন্তর শুভকামনা থাকলো।            

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।