মানুষের কাতারে দাঁড়াবার দৌড়ে আমি বারবারই পরাজিত হই।
আমার শয়নকক্ষে যে অর্ধভাঙা ঝাড়বাতি দু’দশক থেকে ঝুলে
আছে, তা বদলাবার সাধ্য আমার জুটেনি এখনও। তাই মাঝে
মাঝে বাতিটির অর্ধ আলোয় নিজেকে চিনতে বার বার ভুল করি।
নিজস্ব কোনো ইমেজ না থাকায় কখনও ঢেউ, কখনও ধ্বনির কাছ
থেকে ধার নিই উত্থান অথবা পতনের সর্বশেষ সংজ্ঞা।
যে ঘরের সামনে আমি এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আছি, এই ঘরের
বা’পাশে বহুকাল আগে একটি গ্রহগাছ ছিল। সে গাছের ছায়ায়
দাঁড়িয়ে যে কয়েকজন বালক-বালিকা বাল্যশিক্ষার পাঠ নিতেন,
তাদের একজন ছিলেন আমার প্রপিতামহ। তার রোজনামচা পড়ে
জেনেছি, গাছটি নিজের পাতায় ধরে রাখতো গ্রহণকাল। তাই
গাছটিকে ‘গ্রহগাছ’ বলেই আখ্যা দিয়েছিলেন পাড়া-প্রতিবেশী।
এটাও জেনেছি, সেকালের মানুষ আলোর উৎস সন্ধানে খালি পায়ে
হাঁটতেন মাঠের পর মাঠ। গ্রামের পর গ্রাম।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি যখন গ্রামশূন্য ভূখণ্ডের মধ্যপ্রদেশে দাঁড়াই—
তখন দেখি, দু’টো পালকহীন পাখি আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
চামড়াশূন্য মানুষের দৌড়দৃশ্য আবারও আমার চোখে ভাসে। যারা অন্ধকারকে
স্বাগত জানিয়ে নগর থেকে আলোবিন্দুকে বিদায় জানিয়েছিল—
তাদের প্রতি আমার করুণা হয়।
জগতে যারা গ্লানি কিংবা ধিক্কারের করুণা নিয়ে বাঁচে, তারা কি
আদৌ কোনোদিন দৌড়াতে পারে !
আমি পুনরায় দৌড়াবার জন্য পায়ের পেশিগুলো শক্ত করতে থাকি।
দেখি— আমার প্রতি ধেয়ে আসছে অন্ধকার। যে সংবিধান মানুষের
কল্যাণে নিবেদিত হবার কথা ছিল— তার শরীরের ক্ষত দেখে আমি
আঁতকে উঠি। যুথবদ্ধ সংশোধনী হরণ করেছে আমার চেতনার স্বাধীনতা।
মৃত্তিকায় নত হবার প্রগাঢ় মূল্যবোধ।
আমি সবগুলো সংশোধনীকে অমান্য করে একটি গ্রহের ঈশান কোণের
দিকে দৌড়াতে থাকি। আমার রক্তের পরতে পরতে বাজতে থাকে
সংঘর্ষ বিষয়ক দ্বৈত সেতার।
আমি সবগুলো সংশোধনীকে অমান্য করে একটি গ্রহের ঈশান কোণের
দিকে দৌড়াতে থাকি। আমার রক্তের পরতে পরতে বাজতে থাকে
সংঘর্ষ বিষয়ক দ্বৈত সেতার।