বিদেশে পথে পথে আমরা

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকসহ অন্য পেশাজীবিরা ভিসায় উল্লেখিত পেশার বাইরে কোনো কাজ করতে পারবে না। বিশেষ করে রাজনীতি, পেশাজীবি বা অরাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবে না। শ্রম ভিসায় গিয়ে অনেকে সাংবাদিকতা অর্থাৎ বাংলাদেশে খবর পাঠান অভিযোগের প্রমাণ হাজির করে সৌদি পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এক বাক্যে বলেছেন, প্রেস ভিসা ছাড়া অন্য কেউ সৌদিতে সাংবাদিকতা করতে পারবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিধিদের এই বলে সতর্ক করা হয় যে বাংলাদেশ মিশনের কেউ যাতে এসব কর্মে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সমর্থন কিংবা অনুমোদন না দেয়। দৃষ্টি আকর্ষণের পরও যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব কর্মে সম্পৃক্ত রয়েছে মর্মে প্রমাণ মিলে তবে, অবশ্যই তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি অবহিত করছে। ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরণের অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

এরপরও কোন ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের আওতায় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হওয়াসহ দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সৌদি সরকার জানায়, এখানে অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা প্রেস ভিসা ব্যতিরেকে যে সকল বাংলাদেশি নাগরিকগণ সাংবাদিকতা করছেন বা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রেও এসব অপরাধের জন্য জেল জরিমানাসহ দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্মুখীন করা হবে বলে জানানো হয়।
সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বর্ণিত বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

অধিকাংশ লোক জায়গা বিক্রি করে, ধারদেনা করে কিংবা সুদের হিসাবে টাকা ধার করে বিদেশে যায়, এর মধ্যে সামান্য একটা অংশ কিছু সৌদি লোকের সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্যে মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করে যেটা তারা দেশে বসে কল্পনাতেও হিসাব করেনি। এরাই কিছু লোক নিজেকে নেতা পরিচয় দিতে শুরু করেন। অনেক সময় স্থানীয় কোন এমপি বা নেতাকে আমন্ত্রণ করে, হোটেলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমপি বা নেতাকে দিয়ে একটা সংগঠন এর নাম ঘোষণা করানো হয় এবং সেই সাথে কিছু পদ পদবিতে নাম ঘোষনা করা হয়। বিভিন্ন পদে উপনীত ব্যক্তিগণ নেতা হিসাবে পরিচিয় দিয়ে আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করেন। এইসব নেতারাই বিভিন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। আমাদের দেশে এই একটি মাত্র পদ আছে যে পদের জন্য কোন যোগ্যতা লাগেনা শুধু মাত্র পাগল না হলেই হলো, সেটা হচ্ছে নেতা। অবশ্য মন্ত্রী, এম পি হতেও যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই। কিছু টিভি চ্যানেল বিদেশে শ্রমিক হিসাবে যাওয়া কিছু লোককে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেয় যাদের ভাষা জ্ঞান তেমন নেই। এরা ভালো বাংলা উচ্চারনে কথা বলতে পারেন না, অবশ্য এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু যখন এদেরকে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেটা বুঝতে পারিনা। যারা সাংবাদিকতা করবেন, লাইভ সম্প্রচার করবেন তারা অবশ্যই উচ্চারণ এবং ভাষাজ্ঞানে সমৃদ্ধ থাকার কথা।

এই দিকে বাংলাদেশের কোন উড়োজাহাজ কুয়েতে ঢুকতে পারবেনা। ইটালীতে অনেক আগে হতে বাংলাদেশী ঢুকতে পারছেনা অথচ হাজার হাজার বাংলাদেশি যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশিরা ইটালীতে করোনা সনদ জালিয়াতি করে খবরের শিরোনাম হয়েছে সবার জানা কথা। জাপানও আজ বলে দিয়েছে বাংলাদেশের লোক ঢুকতে পারবে না। পাপুলের ভিসা জালিয়াতি করায় কুয়েত হয়তো নিরহ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নিতেও পারে। এখন হতে সরকার দক্ষ কূটনীতিক তৎপরতা চালানো দরকার যাতে শ্রমিক ফেরত না পাঠায়। সরকার এবং জনগণের বুঝা উচিত অকাতরে প্রবাসী ফেরত আসলে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যা কাটিয়ে উঠা দুরূহ ব্যাপার হবে।

মাসুম নামে এক লোক আমেরিকা বসে প্রায় প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ করে সরকারের বিরুদ্ধে। উনি আবার একটা ফেসবুক গ্রুপও করেছে রেমিটান্স ফাইটার অফ বাংলাদেশ (আরএফবি) নামে। যেখানে প্রবাসীদের এড করে এবং প্রচার করছে উনি নাকি সরকারের পদত্যাগ চায়। এবং সরকার বিরোধী যেসব লোক আছে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছে। আসলে সব হলো মিথ্যা এবং ধান্দাবাজি। আমেরিকার মাসুম, কাতার প্রবাসী একজন, এসকে মিডিয়ার টিপু চৌধুরী এবং সৌদি প্রবাসী মিনার মাহমুদের ভিতর মতবিরোধ শুরু হয়। মাসুম তার লোক দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে সৌদিতে মিনারকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। সে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে ডাক্তারী পেশার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে এবং বিভিন্ন বাংলাদেশী শ্রমিকও এইসব করে ( করোনা নিয়ে এবং মানুষের বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করতো আমিও দেখেছি )। তবে মিনার মাহমুদ একজন ভালো লোক কিন্তু তার এই লাইভ করা সৌদি আইনে নিষিদ্ধ এবং অপরাধ, জানতে পেরেছি সে এখন জেলে। যার কারণে সৌদি সরকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে। প্রথম হতে মাসুমের সরকার বিরোধী ফেসবুক লাইভ দেখে আমার মনে হয়েছে লোকটা বাটপার। কোন মতলব নিয়ে সে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় যাতে তার লাভ হয়। প্রিয় প্রবাসী ( রেমিটান্স যোদ্ধা ) ভাইবোন আপনারা এইসব মতলবাজ ধান্দাবাজ কূটচালবাজ এবং অসৎ লোক হতে দুরে থাকুন। বিদেশে বসে দেশে কোন দল সরকার থাকে তা নিয়ে রাজনীতি না করে আপনি নিরাপদ সুস্থ ও সবল থেকে সৎ পথে রোজগার করে বৈধ পথে টাকা পরিবারের কাছে পাঠান। এতে পরিবার চলবে, সমাজ দেশ উপকৃত হবে। সজাগ থাকুন ধান্দাবাজ আপনাকে ব্যবহার করে যেন উপরে উঠতে না পারে। মনে রাখবেন আপনি হলেন লাল সবুজ পতাকা, রক্তমাখা মানচিত্র ও জনমদুঃখী মায়ের সন্তান।

সূত্রঃ বিভিন্ন নিউজ পেপার ও ফেসবুক ভিডিও।

5 thoughts on “বিদেশে পথে পথে আমরা

  1. বেশ সচেতনাবোধ লেখা মহী দা 

    শুভ হোক প্রবাসীজীবন———-

  2. প্রবাসে অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখাই ভালো। কেননা প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব আইন আছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে; মর্যাদা আছে। সম্মান দেখানো উচিত। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. প্রবাসের জীবন কখনো সহজ নয় তবে, সেখানের নিয়ম-কানুন সবকিছু আমাদের মেনে অবশ্য কর্তব্য। দারুন লেখা প্রিয় লেখক।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।