একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি
হ্যালো…
আমি একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি
সেই কবিকে চিনি না,
কবিতাটা পড়ার পর
কী এক সীমাহীন গভীর ভাললাগা অনুভূতি
আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে বার বার,
পৃথিবীর তাবত শব্দ ভাঙ্গার খেলা করে কবিরা:
শুধু মানুষের মন বুঝতে চায় না
সব কবিদের স্বপ্ন কি দুঃখে জর্জরিত হয়ে
ভেঙ্গে যায় ? হয়তো না।
কবি কার সঙ্গে কথা বলে
কেমন করে হাঁটে
কেমন করে সময় কাটায়?
কোন বিকেলের কাছে একা হয় কিনা ?
কবিতায় কিছুই লেখে না কবি,
অথচ আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে
আর কবিও বড় নির্বাক, নীরব থাকে …
কবির সঙ্গে দেখা করার জন্য
আমি শত ভাগ মন স্থির করে ফেলি
অনেক কষ্টে কবির কন্টাক্ট নম্বর জোগাড় করি,
একদিন নক্ষত্র ফোঁটা রাতে ফোন করি কবিকে।
হ্যালো…
আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?
হ্যাঁ..হ্যাঁ.. পাচ্ছি,
আপনি বলুন- হ্যালো… হ্যালো…
আপনি কি ” সকাল নামছে তোমার চোখে”
কবিতার লেখক বলছেন?
লেখক নয় লেখিকা,
জ্বী… বলছি –
আপনি কে বলছেন ?
প্লিজ আপনার পরিচয়টা বলবেন কী?
আমি কবির কণ্ঠস্বরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি ক্রমাগত –
বললাম আমি আপনার এক ক্ষুদ্র পাঠক মাত্র,
আমাকে আপনি চিনবেন না!
আমি আপনার একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি সদ্য-
আর তাই আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়,
আপনার কি একটু সময় হবে ?
যদি অভয় দেন… একটু সময়, আমার জন্য ?
দেখুন না- প্লিজ ! না করবেন না –
আমি আপনার কবিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ –
প্লিজ ! প্লিজ ! প্লিজ কবি….
আমাকে নিরাশ করবেন না —
আপনি এখন কি করছেন?
কবি বড় অভিমানী কণ্ঠে বললেন,
স্ট্রেঞ্জ ? এতসব জানার,
শোনার কি প্রয়োজন আছে আপনার বলুন তো !
কবিতার প্রেমে পড়েছেন, ব্যস –
ও পর্যন্তই থেমে যান না,
তারপর ও এত কৌতূহল কেন আপনার?
আমি কাঁপা ও চাপা স্বরে বললাম,
সেই কবিকে জানব না, শুনব না, দেখব না,
একি বলছেন আপনি? বলুন তাকি হয় ?
প্লিজ ! বলুন না এখন কি করছেন?
কবি বললেন,আমি এখন গভীর নৈঃশব্দ্যের ডানা খসিয়ে
নিঃসীম শূন্যতার সমুদ্র বুকে নিয়ে বসে আছি –
যে সমুদ্রের চারিদিক ঝড়, জল
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে নির্জন প্রকৃতি ;
আর আমি আমার দুঃখ গুলো
নিস্তব্ধ সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছি
কাগজের নৌকা করে !
এখন আমার ভেতর বাহির সবটা জুড়ে কেবল
বৃষ্টি আর বৃষ্টির উচ্ছ্বাস-
কবিকে কেউ খুঁজো না তোমরা
কবিতায় তুষ্ট থেকো,
কেন না, কবিতা আমার সৃষ্টির কারুকার্য !
আমার কাছে অবশিষ্ট আর কোন শব্দ গচ্ছিত নেই,
সব তুলে দিয়েছি কবিতার বুকে
আমার ভেতরে কেবলই ক’ ফোঁটা দুঃখ আছে,
দুঃখরা কান্নার সুর হয়ে বাজে বুকে :
জল,ঝড়,জলোচ্ছ্বাসে গভীর সমুদ্রের
বুকে কতখানি দুঃখ জমেছে
আমি একটু মেপে আসি,
তোমরা আর আমায় খুঁজো না —-
আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে
শতাব্দীর নতুন কোন এক পৃথিবী !
এরপর কেটে গেছে অনেক দিন,
অনেকটা সময় গত হয়েছে —
এক পড়ন্ত বিকেলের সবটুকু মায়া নিয়ে
এক পাঠক হাজির হয়েছে আমার বাসায়,
আমি তো রীতিমতো অবাক, এই কে তুমি?
এক গাল হেসে বলল সে –
এরই মধ্যে সব ভুলে বসে আছেন?
আমি সেই যে এক পাঠক :
আপনার কবিতার প্রেমে পড়েছি,
আপনার পৃথিবীটা আমি দেখতে এসেছি স্বচোখে….
কেমন সে পৃথিবী, আচ্ছা কবি, একটা অনুরোধ করব
“সকাল নামছে তোমার চোখে” কবিতাটা
আপনার গোটা পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে হবে,
আর কবিতার কোন কপি থাকলে
সেটাও মুছে ফেলতে হবে,
কবি একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
তা কি করে সম্ভব?
তোমার অডিসি তো কম না? ঠাট্টা করছ?
জানো তুমি কি বলছ?
কোন কবির পৃথিবী থেকে তার লেখা কবিতা মুছে ফেলা সম্ভব?
তুমি শুনেছ কখন ও ?
খোঁজ নিয়ে দেখো তো?
ওই কবিতাটা আমার পৃথিবী জুড়ে
একান্তই দুঃখ কথা — আর তুমি?
কবির মন থেকে সেই দুঃখকথা মুছে ফেলতে চাইছ?
কতখানি দুঃসাহস তোমার ?
দেখো, চেষ্টা করে পার কিনা –
পাঠক বলল, হ্যাঁ আমাকে পারতেই হবে
বিশ্বাস করুন, আপনার গোটা পৃথিবী থেকে
আমি কবিতাটা মুছে দেব কেন জানেন ? কবিতাটা একান্তই
আমার ভালবাসা হয়ে গেছে !
কবি বললেন, সে তোমার ব্যাপার,
তবে চেষ্টা করে দেখো তুমি —
আগন্তক পাঠক মুখ তুলে বলল,
অনেক দিন সময় লাগবে।
তবে আমি কথা দিচ্ছি,
আমি কবিতাটা আপনার মন থেকে মুছে দেবোই,
কবি বললেন, কত আর সময় নেবে তুমি?
এই ধরো, এক মাস দু’ মাস, ছ’ মাস, এক বছর এক যুগ –
যত খুশি সময় নাও- আমার কোন আপত্তি নেই –
পাঠক কবিতার এক একটি শব্দ মোছে
আর থমকে দাঁড়ায় —
এই ভাবে প্রায় দু’ বছর সময় গড়িয়ে গেল ,
কবিতাটা মোছা খুব কঠিন কাজ ছিল,
কবিতাটা মোছা প্রায় শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে –
হঠাৎ এক রাত্রে পাঠক আবিষ্কার করল,
কবিতা মোছা শেষে কবির ছবিটায় ঘুরে ফিরে কবিতা হয়ে উঠছে,
পাঠক তখন মুগ্ধ কবির প্রেমে !
পাঠক একদিন ভর দুপুরে এক রাজ্য ক্লান্তি
নিয়ে কবির বাসায় হাজির হলো,
কবি জানতে চাইলেন শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে….
আর একটাও শব্দ অবশিষ্ট নেই?
পুরো কবিতাটা কি মুছে গেছে?
তবে কি আমিই হেরে গেছি তোমার কাছে?
পাঠক একটু একটু করে মুখ তুলে বলল,
না —
প্রথমত, আমি আপনাকেই ভালবেসেছি,
দ্বিতীয়ত, আপনার সৃষ্টি কর্ম কবিতাকে :
আমি যতবার কবিতাটাকে মোছার চেষ্টা করেছি,
ঠিক ততবার আপনার ছবি কবিতা হয়ে
ফুটে উঠেছে কবিতার ক্যানভাসে –
আমি অভিভূত …
আমি বিস্মায়াভূত! আপনার প্রেমে পড়ে ;
সব শেষে বুঝতে পেরেছি —-
আমি আপনাকেই ভালবেসেছি কবি !
কবি এক কঠিন দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে বললেন,
আমার একান্তই দুঃখটুকু তুমি মুছে দিতে চাইলে দু’ হাতে?
ও কবিতাটা আমার বুক জুড়ে ক্ষত ভরা এক দুঃখ জমিন–
ওকে তুমি কি করে মুছবে?
ওটুকু দুঃখ যে আমার কষ্ট বিলাসী মনটা আঁকড়ে বেঁচে আছে –
আর আমিও বেঁচে আছি দুঃখ বিলাসী হয়ে…
যাও – তোমাকে ক্ষমা করে দিলেম,
তুমি আমার ভালবাসার মেঘ অরণ্য শিশির হয়ে
অভিনব কৌশলে অভিনয় না করলেই পারতে,
তোমার ভালবাসার জয় হয়েছে হেরে গেছি আমি….
একটা কবিতার প্রেমে পড়েছি কথোপকথন একটানা পড়ে গেলাম প্রিয় রানু দিদি ভাই। অভিনন্দন জানালাম।
দীর্ঘ কবিতা। লিখা বেশী ঝুলে গেলে পাঠক সাড়াও আনুপাতিক হারে কমে যায়। অনেকে সাদরে এড়িয়ে যায়। আপনার কবিতাটি পড়লাম আবৃতির মতো করে। ভালোই লেগেছে আমার কাছে বোন হাসনাহেনা রানু। প্রচ্ছদ অসাধারণ।
মন থাকলে ভিন্ন মনে আকৃষ্ট হবে। হৃদয় থাকলে ভিন্ন হৃদয়ে প্রবেশ করতেই চাইবে।
কবিতাটি আবৃত্তি করে ইউটিউবে পাবলিস্ট করলে এর ভাব আবেগ অনুভূতি প্রকাশ পেত। আমি হেডফোনে শুনে শুনে কুড়াতাম একটা কবিতার প্রেমের স্বাদ। ভালো লেগেছে।
সুন্দর।
নান্দনিক লিখা কবি।
কবিতায় শুভেচ্ছা জানবেন
কবি বোন রাণু!
শুধু শুভ কামনা রইল
আপনার কবিতায় মুগ্ধতা রেখে গেলাম, শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
আবৃতি করে পোস্ট দিলে আগ্রহ নিয়ে শুনব!