এই শরতের দ্বিতীয় বসন্তে নীড়ের মাথায় অদ্ভুত একটা ভাবনা চেপেছে দূরের কোন এক কাশবনে ঘুরতে যাবে। ও ঠিক করল, ওর খুব কাছের বন্ধু বিপ্লবকে সঙ্গে নেবে। এত বন্ধুর ভীড়ে এক বিল্পব ওর খুব কাছের বন্ধু। ও হঠাৎ বিপ্লবকে ফোন করল, হ্যালো হ্যালো বিপ্লবের সেল ফোনে নীড়ের নম্বরটা ভাসছে। ফোন রিসিভ করল বিপ্লব হ্যালো নীড়! ক্যামন আছিস? নীড় ছোট্ট উত্তর দিল ভাল। আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবি? বিপ্লব একটু চমকে যায়। বলে, কি রিকুয়েস্ট বল? এভাবে বলছিস কেন? আজ পর্যন্ত তোর কোন কথাটা আমি রাখিনি বল? নীড় বলল, হুম শোন না । শরৎ প্রায় যায় যায় করছে। তুই আমাকে একটা বিকেল দিবি? আমরা সে বিকেলের হাত ধরে দূরের কোন কাশবনে হাঁটতে যাব।
হেসে ওঠে বিপ্লব, ওহ এই কথা। কেন দেব না? চল না কবে যাবি? নীড় বলল, তবে আর দেরী কেন? আজই চল না বিকেলেই বেরিয়ে পড়ি। আজ? বিপ্লব বলল, ওকে ম্যাডাম বিকেল চারটায় আমরা যাচ্ছি তাহলে। নীড় লাইনটা কেটে দিল।
– ওরা বিকেল চারটায় স্বপ্নপুরী যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করল। শহর ছেড়ে অনেক দূরে। বিপ্লব বাইক নিয়ে এসেছে। যেতে যেতে পথে হালকা বৃষ্টি হল। ওরা দু’ জনেই বৃষ্টিতে ভিজেছে। বিপ্লব বলল, এই নীড় অনেক দিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। আজ তোর সঙ্গে বৃষ্টি বিলাস করছি বেশ লাগছে। নীড় বলল, হুম বিপ্লব তুই দেখছি বেশ রোমান্টিক হয়েছিস। কবে থেকেরে। বিপ্লব হেসে ওঠে বলল, কেনরে এ যাবৎ আমাকে কি তোর আন রোমান্টিক মনে হয়েছে? এই নীড়, এত কিছু থাকতে তোর হঠাৎ কাশবনে ঘোরার শখ হল কেন? ঘুরতে যাওয়ার আরও অনেক জায়গা ছিল। নীড় বলল হুম, তা হয়ত ছিল। কিন্ত তুই কি জানিস, শরৎ হল দ্বিতীয় বসন্ত। কাশফুল শুভ্রতার ডানায় থোকা থোকা সাদা মেঘের আঁচল বিছিয়ে শরতের আবির্ভাবে আমার মনটা উচ্ছ্বাসিত হয়ে ওঠে। ঠিক কাশফুলের মতো।
আমার মনটাও নরম হয়ে যায়। ও তুই বুঝবি না বিপ্লব। আগে চল কাশবনে তারপর দেখ কি মায়াময় সৌন্দর্যের কারুকার্যের উচ্ছ্বাস লেগে আছে প্রতিটি কাশফুলের ছড়ায় ছড়ায়। আরে আমিতো রীতিমতো কাশরাজ্যে স্বপ্ন বিলাসী কাশ মহল বানানোর কথা ভাবছি। কিন্ত কি জানিস সে স্বপ্ন মহলে মনের মানুষ নেই। আমি বড় একারে!
বিপ্লব হেসে ওঠে, আরে তুই তো আস্ত একটা “কাশকন্যা” শরৎ প্রকৃতির ঠোঁটে। নরম কাশফুলের মতোই সাদা তোর মন। ওরা এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেল স্বপ্নপুরী কাশ অরণ্যে। রোদ, বৃষ্টি আর হাওয়ায় দুলছে কাশবন। বিপ্লব কাশবন আর নীড়কে আলাদা করতে পারে না। নীড় আজ পরেছে কাশফুলের মতোই শুভ্র পোশাক। স্বপ্নপুরীর দিগন্ত জোড়া মাঠের পর মাঠ কাশবন। বিস্ময়ে অভিভূত হয়েই সেদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বিপ্লব। নীড় কাশবনে পা রেখেই ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে, ওয়াও বিপ্লব! স্বর্গ যদি কোথাও থেকে থাকে তো এখানেই আছে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
বিপ্লব বলল, সত্যিই নীড় আজ আমি না আসলে খুব খু-উ-ব মিস করতাম এমন হৃদয় কাড়া অপূর্ব দৃশ্য। নীড় বলল, তুই আসবি না মানে? তোকে হাজার বার আসতে হত। তুই ছাড়া আমি অচল জানিস না? তুই ছাড়া এমন দৃশ্য আমি একা দেখবো নাকি? জানিস তো ভীষণ একটা বোরিং লাইফ পার করছিরে। মাঝে মধ্যে তোর সঙ্গ ভীষণ ভাল লাগে। তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল তো?
বিপ্লব বলল, কেনরে তুই না কাইফিকে ভালবাসিস? উত্তরে নীড় বলল, নারে তোর জানায় ভুল আছে। ওটা আমি তোকে বানিয়ে বলেছি। আর তুই তো ক্যাইসাকেই ভালবাসিস বিপ্লব। বিপ্লব বলল, নারে তোর জানাতে ও ভুল আছে। আমিও তোকে বাড়িয়ে বলেছি। তবে ঠিক কোনটা বিপ্লব! আমি তোকে ভাল কথা শেষ করতে পারে না বিপ্লব। ওর গলাটা কেঁপে কেঁপে থেমে গেল। হাতটা বাড়িয়ে দে নীড় । মুহুর্তে নীড়কে কাছে টেনে দু’ হাতে ওর চিবুক উন্মোচন করে বলল, তুই কি আজও আমায় বন্ধু ভাবিস। নাকি বন্ধুর চেয়ে একটু খানি বেশি। এক ঝটকায় নীড়কে বুকে টেনে নিল বিপ্লব। ও বুকে পড়ে নীড় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। এই একটা সত্য কথা বলতে তুই এতটা সময় নিলি। বিপ্লব বলল, বাহরে! দেরী হলেও আমি তবু তো বলেছি। তুইতো সেটুকুও পারলি না। বোকা মেয়ে। বিপ্লব ফিসফিস করে বলল,
ডেকেছিস কেন এই নিরালায়?
কিছু কি বলবি আমায়? বল না
বল
আমি শুনবো
তোর সব কথা
কি বলবি আমায়?
কেন এত লুকোচুরি খেলা
আর নয় লুকোচুরি ধাঁধাঁ
বরং খোলামেলায় বল
দৃঢ় উচ্চারণে
আমার প্রেমে অঙ্কুরিত
কাশকন্যা তুই
ভালবাসার ফ্রেমে বাঁধা
তোকেই শুধু চাই
বল না
শেষ শরতের কাশকন্যা
আমি শুধুই তোর
তোকেই ভালবাসি
ভালবাসি ভালবাসি কি যে
ভীষণ মিষ্টি কাশফুল ঘ্রাণের মতোই
ভালবাসি !
নিজের বিস্ময় আড়াল করে দ্রুত নিজেকে সামলে নিল নীড়। পর মুহুর্তে বলল, উফ্ আমার কথা ছাড়। এতক্ষণ তুই আমার কথাই বললি। তুই তখন কি যেন বলতে যেয়ে থেমে গেলি। বল না সোনা । যে কথা আজও আমার শোনা হয়নি। হ্যাঁ, বলব বলেই তো হাজার বিকেল থেকে এই একটি বিকেল তুলে রেখেছি তোর জন্য নীড়। কাছে আয় না পাখি আরও কাছে । বিপ্লব নীড়ের কানে ফিসফিস করে বলল, আমি তোকে ভালবাসি নীড় । তুই শুধুই আমার কাশকন্যা। নীড় স্থির চোখে বিপ্লবের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল …
অনেক পথ খুঁজেছি তোকে
কোথাও পাইনি
তুই ছিলি কোন সে অতল
কাশফুলের আদরে
শুভ্রতার আঁচলে
তুই কি ছিলি মিশে জনম জনম ধরে
তিন সত্যিই বলছি
আমি ভালবাসি তোকেই
শরৎ ও একদিন ফিরে আসে নীড়ে
তুই চিরদিন পাশে থাক
আমায় গহীন অরণ্যে কাশকন্যা করে রাখ
দিক্- দিগন্তে ইথারে ভেসে ভেসে
মিষ্টি মধুর কাশঘাণ বার মাস
ছড়াব তোর হৃদয়ে;
তোর সংস্পর্শে ভিজে যাক এ গহন বুক
তুই আমার শরৎ প্রকৃতির সবটুকু সুখ
এ অন্দরে বহু আগেই তোর অনুপ্রবেশ
তোর মতো আমিও আছি তোর
স্বপ্নের ভেতর.!
নীড়ের চোখে জল চিকচিক করে ওঠে। বিপ্লব ওর চোখে চোখের জল মুছে দিতে বলে, তবে কাঁদছিস কেন? আমি তোর। শুধু তোর। নীড় ছল ছল চোখে বলে, জানি। এ জন মুছিস না, এ আমার আনন্দ অশ্রু! তোকে আমার করে পাবার। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চল আজ আর হাতে সময় নেই। ফেরা যাক। গন্তব্যে ফেরার জন্য
ওরা হৃদয়ের গহীনে পা বাড়ায়।
অসাধারণ অণুগল্প কবি হাসনাহেনা রানু। শুভেচ্ছা।
শেষ শরতের কাশকন্যা গল্পটি আমার কাছে বেশ লেগেছে প্রিয় কবি দিদি ভাই।
সুন্দর অণুগল্প।
আমার প্রেমে অঙ্কুরিত কাশকন্যা তুই
ভালবাসার ফ্রেমে বাঁধা তোকেই শুধু চাই
বল না …শেষ শরতের কাশকন্যা
আমি শুধুই তোর; তোকেই ভালবাসি
ভালবাসি ভালবাসি কি যে ভীষণ মিষ্টি কাশফুল ঘ্রাণের মতোই ভালবাসি !
কবিতার পাশাপাশি গল্পেও আপনি যথেষ্ঠ অনবদ্য। শুভেচ্ছা আপা।
ভালো লিখেছেন আপা।