নিজ বুদ্ধিমত্তা
– এই তুই আবার আইলি ক্যান?
– ভাইজান, কোনহান থিকা কি হইতাসে কিচ্ছু বুসতাসি না।
– এতো বুঝার দরকার নাই, আগে নিজে ঠিক হ
– আমি কি ঠিক নাই?
– তুই বলদ না বোকা নাকি সরলমনা তা বুঝার জন্য নিজেরে কয়ডা প্রশ্ন কর।
– কী প্রশ্ন?
– ফুলের মধ্যে মধু থাকলে মৌমাছি আসে না?
– তাতো আসেই।
– তর কাছে টাকা থাকলে কী বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে যায়?
– হ্যাঁ, বেড়ে যায়।
– তাদের সবার বাড়ি চিনিস?
– না, সবার বাড়িতো চিনি না
– এই পর্যন্ত তুই বলদ, এবার পরের প্রশ্ন।
– জি বলেন।
– কেউ একজন মুখ কাচুমাচু করে বললো, আমার ৬ মাস চাকরি নাই, বাচ্চার দুধ কিনতে পারি না, পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার দেন ভাই দুই মাসের মধ্যে দিয়ে দিবো, তুই কি টাকা দিবি?
– যদি এক বছর ধরে চিনে থাকি তাহলে দিবো।
– এক বছর ধরে চিনিস মানে? ফেসবুকে চেনা নাকি এক বছর ধরে তার বাসায় যাতায়াত?
– না মানে বাসায় হয়তো যাওয়া হয় নি কিন্তু অনেক বিজ্ঞজনের সাথে এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গের সাথে মিশতে দেখেছি।
– এই পর্যন্ত তুই বোকা এবং সরলমনা এর মাঝামাঝি অবস্থানে আছিস, পরের প্রশ্ন।
– জি বলুন।
– ধর তোর একটা সুনাম হলো, হতে পারে এটা ভালো লিখালিখি করে বা ভালো গান করে বা ভালো অভিনয় করে বা রাজনীতি করে অর্থাৎ তোর একটা ভালো ইমেজ তৈরি হলো, তখন কেউ তোর মাথায় কাঁঠাল ভাংতে আসলে বা তোকে ইউজ করতে আসলে বুঝতে পারিস?
– এই বিষয়টাতে আমার বুঝতে একটু দেরি হয়।
– কেন?
– আমাকে তখন যদি কেউ অমুক কমিটির সহ সভাপতি, তমুক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, অমুক গ্রুপের নির্বাহী সদস্য, তমুক মানবিক সংগঠনের সভাপতি বা অমুক পুরস্কার, তমুক সম্মাননা এই জাতীয় অফার আসলে বুঝে উঠতে পারি না কি করা উচিত।
– এখন মনে হচ্ছে তুই বোকা না। কিন্তু ওই সময় তোকে না বলা শিখতে হবে।
– কেন?
– তোকে দেখতে হবে সে জন্য তোকে যা পদবী বা সম্মাননার অফার দেয়া হচ্ছে তার পেছনে তোর কতটুকু অবদান আছে বা আদৌ অবদান আছে কি না আর অবদান থাকলে ওই সম্মাননা কে দিচ্ছে বা তা সরকার স্বীকৃত কি না ।
– ও
– ধর তুই কোনও ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলি এবং সরকার স্বীকৃত পুরস্কার পেয়ে গেলি, তখন তোকে সব অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ দিলে তুই কি যাবি?
– টাকা দিলে যাবো।
– না, এটাও ঠিক নয়।
– কেন?
তখন তোকে শোকেজের ফুল বানিয়ে অঘা মঘারা সব ফায়দা লুটবে।
– আমি জনপ্রিয় হলে মানুষ আমাকে দেখতে চাইলে যাবো না? এটা কী বলেন আপনি?
– আমিতো যেতে নিষেধ করি নি কিন্তু বাছ বিচার করে যেতে বলেছি।
– সেটা কেমন?
– যেমন কোনও গ্রুপের প্রধান তোকে অনেক টাকা দিয়ে তাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির আমন্ত্রণ দিলে তোকে ওই গ্রুপের নাড়ি নক্ষত্র জানতে হবে, ওখানে কারা আছে, তাদের ইতিহাস কী ইত্যাদি।
-ও
– আর তোর যদি মনে হয় কোনও একটি গ্রুপ অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে কিন্তু তোকে আমন্ত্রণ করার মতো সামর্থ্য নেই অথচ ওখানে অমানুষ নেই, মানুষ আছে তাহলে আমন্ত্রণ ছাড়াই উপস্থিত হয়ে পেছনের সীটে বসে থাকবি।
– কেন?
– এতে তোর গুরুত্ব কমবে না বরং বাড়বে, কিন্তু টাকার বিনিময়ে অঘা, মঘা, দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিপরায়ণ, স্বার্থপর, ধান্দাবাজ এই সব বাছ বিচার না করে গড়ে হরিবোল মারিস তাহলে তোর গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা এক সময় মানুষ আর নেবে না।
-ও
– আর খেয়াল রাখবি তুই যখন প্রতিষ্ঠার পথে তখন তোকে নানান ভাবে ইউজ করা শুরু হবে।
– একজন লেখক অনেক লিখেও যা পাচ্ছে না তা তোকে দেয়ার জন্য কেন অফার করছে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে, প্রয়োজনে সেই সম্মাননা কৌশলে ফিরিয়ে দিতে হবে।
– এতে আমার ফ্যান বা ভক্তরা আমাকে অহংকারী মনে করবে না?
– না, কেন তা মনে করবে, বরং তারা বুঝতে পারবে যে ভেজালের যুগেও ভালো মানুষ আছে।
– শোন, কিছু মেধাবী মানুষ আছে যারা সরল প্রকৃতির, নিজে যেমন সরল তাই সবাইকে সরল মনে করে কিন্তু এখন এমন একটা সময় যখন সরল এবং গরলের মিশ্রণে চলতে হবে।
– ও
– ধর তুই জনপ্রিয় হতে চলেছিস কিন্তু কখন তোকে মিষ্টি কথা বলে বলে আড্ডায় নিয়ে চাঁদাবাজের খাতায় নাম তুলে দেবে বুঝতেই পারবি না।
– ও
– কবি লেখকদেরও এখন চৌকস এবং চালাক হতে হবে, কে কেন ডাকছে, কোথায় ডাকছে, কেন সম্মাননা বা পদ পদবী দিতে চাচ্ছে তার নাড়ি নক্ষত্র যাচাই বাছাই করার সময় এখন এসেছে।
-ও
– অর্থাৎ তোকে যেন কেউ ঠকাতে না পারে বা অমুক তমুক ব্যবসার মালিকানার নামে তোর কাছ থেকে টাকা বের করে নিতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
– ও
– মানুষ যদি একবার বুঝতে পারে তুই বলদ বা বোকা তাহলে এমন নিত্য নতুন প্রতারণার কৌশলে আটকে দেবে যা তুই ভাবতেও পারবি না।
– মানুষ এমন বিচিত্র কেন?
– যিনি মানুষ বানিয়েছেন স্বয়ং তিনিই বলেছেন ” মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ ” তাহলে আর কিছু কি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে?
– সুতরাং সাধু, শয়তান এবং ভালো মন্দ বুঝতে নিজ বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করতে হবে।
বেশ সমৃদ্ধ আলাপন। পড়লাম মি. ইলহাম। শুভ সকাল।
মানুষ এমন বিচিত্র কেন?
– যিনি মানুষ বানিয়েছেন স্বয়ং তিনিই বলেছেন ‘মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ’ তাহলে আর কিছু কি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে?
সঠিক ব্যাখায় আর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন দেখি না।
আজকের আলোচনা একটু বেশী আলোড়িত মনে হলো। শুভেচ্ছা কবি ইলহাম দা।
মনোযোগ সহকারে পড়লাম আর বুঝলাম এখন সব কাজে বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।
শুভেচ্ছা জানবেন
আলাপন চলকু নিরবধি কবি ইলহাম ভাই।
আপনার লিখা পড়তে ভালো লাগে কবি ইলহাম।
শ্রদ্ধেয় দাদা, বর্তমান যুগে শয়তান মানুষগুলান, তথ্যপ্রযুক্তি অবলম্বন করে চলছে। শত বুদ্ধি খাটিয়েও ওদের চেনা যায় না বা চিনতে পারি না। ওদের চেনার উপায় বের করার জন্য বর্তমানে আধুনিক কোনও যন্ত্রপাতি বের হয়েছে কিনা, দয়া করে জানালে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু উপকৃত হতাম। আধুনিক শয়তানের যুগে চলা বড় মুশকিল হয়ে গেছে দাদা।
আপনার লেখা পড়ে একটু হলেও, হুশ হয়ে গেছে দাদা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আর হ্যাঁ, এই শব্দনীড়ে আসার পর আমার করা দুই তিনটে পোস্টে, আপনার করা মন্তব্যের উত্তর দেওয়া হয়নি দাদা। তা নিজের সময়ের কারণে হয়েছে। গতকাল সেসব পোস্টগুলো ঘেঁটে দেখি আপনার করা মন্তব্যের রিপ্লাই দেওয়া হয়নি। এখন জবাব দেওয়ার অপশনও পাচ্ছি না। হয়তো ব্লগ থেকেই আপনা আপনি সেই অপশন বন্ধ হয়ে গেছে। তা যা-ই হোক দাদা, সেই ভুলের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দাদা।