কুরবানি/০২

কুরবানি/০২

আমিও একজন অদ্ভুত টাইপের মানুষ। কিছুটা হিমালয় হিমালয় গন্ধ করে। তবে আমি হিমালয়ের মতো বরফের পাঞ্জাবি পড়ি না। লুঙ্গি পড়তে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। রাত-বিরাতে ঘুরে বেড়ানোও আমার পছন্দের তালিকায় নেই। বড় জোর জামতলা থেকে তিনকোণা পুকুরপাড়। তাও আবার বিষন্ন বিকেলবেলা। এখন বাইরে বের হলেই একটা প্রচ্ছন্ন ভয় এসে গলা টিপে ধরে। দিনকাল আর আগের মতো নেই। অনেকাংশ বদলে গেছে। প্রাগৈতিহাসিক নাট্যকলা ফিরে আসতে শুরু করেছে।তবে এরচেয়ে বড়ো কথা কালের চেয়ে মানুষ গুলো বদল গেছে অনেক অনেক বেশি। অবশ্য এ কথাও সত্যি যে, যে ভয় পায় না; সে মানুষ-ই নয়। জিন-পরী টাইপ কিছু একটা হবে। কেউ তাকে দেখে না, সে সবাইকে দেখে। তবুও কেউ কেউ আমাকে দরবেশ দরবেশ ঠাওরায়। আবার কারো কারো মতে, আমি একজন নিরেট ভণ্ড। তবে গাছ থেকে তাল পড়ার মতো দুই একটা কথা হঠাৎ জায়গা মতো লেগে যায়।

যাক এসব পচাবাসি কথা। সেদিন নীলুর বিয়েতে আমিও ছিলাম। কথা বাড়িয়ে বলা অথবা আগবাড়িয়ে বলা মানুষের এক প্রকার স্বভাব। আমি নিজেও সেসব দোষে কিছুটা হলেও দুষ্ট। সত্যি কথা বলতে কি, প্রকৃতির সেই রুদ্র রুপ আমি আজো ভুলতে পারিনি। একেবারে বদ্ধ পাগলের মতো অবস্থা। জ্ঞানহীন বৃষ্টি আর অবুঝ বাতাসের সেকি ভুতুড়ে সেক্স। এরচেয়ে অদ্ভুত কথা, এতো যে বৈরি আবহাওয়া, প্রতিকুল পরিবেশ, মান্দারের কাঁটার মতো প্রতিবেশ —তবুও নীলুর বিয়ের কোনো আয়োজন আটকাতে থাকেনি। সকাল আর নীলুর ভয়াবহ মুখ দর্শন শেষে আমিও চেয়েছিলাম রোজ কিয়ামতের মতো কিছু একটা হোক। অন্তত আজকের মতো নীলুর বিয়েটা বন্ধ হোক। আমার দরবেশির নিকুচি করি। হিমালয়কে পাগলা কুত্তা একশো একবার কামড় দিক। আকাশ থেকে বড়ো বড়ো বরফ পাহাড় পড়ে বিয়ে বাড়ি তামাদি হোক…তবুও আমি নিষপ্রাণ দুইটি দেহে প্রাণের সঞ্চার করার শেষ প্রচেষ্টা করে দেখতে চাই। বিধাতাকে বলি, আমাকে শধু একটা সুযোগ দাও। মাত্র একটা।

জীবনে কতো পাপ করেছি মাছির চোখের মতো তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আজ না হয় আরো একটি নতুন পাপের পালক পুরাতনের সাথে যুক্ত হবে। হউক। এ বিষয়ে আমার কোনো তদবির নেই। তুমি শুধু এই আশ্বিনা মমহাপ্রলয়কে আরো একটু তাতিয়ে দাও। ওর জোড়া ডানায় আগুন জ্বালিয়ে দাও। সেই আগুনে এই বিয়ের সকল অনুষঙ্গ খড়কুটোর মতো ভেসে যাক।।

6 thoughts on “কুরবানি/০২

  1. আজ দ্বিতীয়াংশ পড়লাম। আমার কাছে মনে হচ্ছে পর্বটি বেশ ভালোই এগুচ্ছে।
    মনে হয় লিখার বিষয় বস্তু এবং ভাবনা সকল যেন আমারই।
    একজন লিখকের সার্থকতা পাঠকের মন বুঝে নেয়া। :)

    1. অফুরান ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা ভাইয়া।

  2. কুরবানি/১ এর মত কুরবানি/২ ও খুব ভাল লেগেছে।
    অনেক ধন্যবাদ :)

    1. অফুরান ধন্যবাদ আনু আনোয়ার ভাই।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।