তেঁতুলগাছের ভুত

2880 উজাড় বাড়ি আসলে উজাড় নয়। একটা সময় গভীর জংগলে ছাওয়া ছিল। এই বাড়ির নাম শোনামাত্রই এখনও মানুষের গা ছমছম করে। যদিও আগের মতোন ঝোপ-ঝাড় এখন আর নেই। তবে এখনো যে পরিমাণ গাছগাছালি আছে, তাও একেবারে কম নয়। বিশেষ করে নাম না জানা কয়েকটি বড় বড় গাছ। এদের ডালপালাগুলোও এতো বিশাল যে, মাঝারি আকারের গাছের চেয়ে বড়। এখনো এই উজাড় বাড়িতে এমন কয়েকটি জায়গা আছে, যেখানে সূর্যের আলো-কেও অনেক কষ্ট করে প্রবেশ করতে হয়। সেই উজাড় বাড়ির উত্তর পাশে একটি তেঁতুলগাছ আছে। ইয়া বড়সড়। সেই তেঁতুলগাছের তলায় একটা ধানী জমি। সেই জমিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন ডাকসই খেলে। মাগরিবের আজান হলেই যে যার বাড়িতে ফিরে যায়।

প্রতিদিনের মতোন আজও সবাই সেখানে খেলাধুলা করছে। তাদের আনন্দের যেন আর সীমা নাই। কখন যে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে কেউ খেয়াল করেনি। এমন সময় তেঁতুলগাছের ভেতর থেকে একটি আচানক আওয়াজ বেরিয়ে এলো। আর সেই আওয়াজটা হল, তেতুল.. তেতুল.. তেতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে…! এই ভয়ংকর কথা গুলো সবার আগে যার কানে ঢুকল, তার নাম ঐশী। ঐশী তখন চিৎকার করে বলল, সবাই খেলা বন্ধ কর। আমি তেতুলগাছের ভেতর একটি ভয়ানক আওয়াজ শুনেছি। সাথে সাথে সবাই খেলা বন্ধ করে ঐশীকে ঘিরে ধরে বলল, তুমি কি শুনেছ.. তাড়াতাড়ি বল। আমাদের আর তর সইছে না। এমন সময় আরো জোরসে সেই আওয়াজটি আবার স্পষ্ট শোনা গেলো।

তেতুল.. তেতুল.. তেতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে…!

ইউশা বলল, এটা নিশ্চয়ই ভুতের গলার আওয়াজ। আমি ইউটিউবে ভুতের গল্প শুনেছি। একদম সেইরকম কন্ঠস্বর। ভুতেরা সব সময় কাঁপাকাঁপা গলায় কথা বলে। এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। সবাই চল… আমরা বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু ছোট্ট মেয়ে আরশি বলল, আমি ওসব ভুতপ্রেত এ বিশ্বাস করি না। বাবা বলেছেন, ভুত বলতে আসলে কিছুই নেই। ওরা কেবল গল্পেই থাকে, বাস্তবে থাকে না। আরশির কথায় সায় জানিয়ে পড়শি বলল, এটাই সঠিক কথা। আমিও শুনেছি। তখন ইউশা বলল, তাহলে তোমরা থাক, আমি চলে গেলাম। এই বলে ইউশা বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো। এমন সময় ঐশী বলল, চলো আমরা দাদাভাইকে নিয়ে আসি। দাদাভাই অনেক জ্ঞানী আর সাহসী মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই এই রহস্যের একটা কিনারা করতে পারবেন। সবাই তখন সমস্বরে বলল, সেটাই ভালো হবে। সবাই চলো..চলো..। যাওয়ার সময় সবাই আবার শুনতে পেলো, তেতুল.. তেতুল.. তেতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে…!

যাক অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ঐশীর দাদাভাই আবদুল হামিদ সাহেবকে নিয়ে ফিরে আসলো। ইতোমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবকিছু শোনে ঐশীর দাদাভাই জিজ্ঞেস করলেন, আওয়াজটা কি তেঁতুলগাছের কাণ্ড থেকে এসেছে নাকি শাখা-প্রশাখা থেকে? অন্য কেউ জবাব দেওয়ার আগেই আরশি বলল, আমার যতটা মনে হয়েছে আওয়াজটা তেঁতুলগাছের গোড়ার দিক থেকেই এসেছে। আরশির কথা শেষ হতে না হতেই আবার সেই আওয়াজটি শোনা গেলো। এখন আরও স্পষ্ট এবং পরিষ্কার। তেতুল.. তেতুল.. তেতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে…! ঐশীর দাদাভাই বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি। তেঁতুলগাছের গোড়ার দিকে একটা বিশাল গুহা আছে। সেখান থেকেই আওয়াজটা এসেছে। ঐশী আমার টর্চলাইটটা দাও তো বোন। ঐশী দাদাভাইয়ের হাতে টর্চলাইটটি দিয়ে মনে মনে গৌরব বোধ করলো।

সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো তেঁতুলগাছের ভুত ধরার এ্যাকশন। আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। চারপাশে সুনশান নীরবতা। সবাই বিড়ালের মতো পা টিপে টিপে তেঁতুলগাছের সেই গুহাটার মুখের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঐশীর দাদাভাই সাথে সাথে গুহার ভেতরে টর্চ জ্বালিয়েই হেসে উঠলেন। বললেন, আরে… সাজিদ যে! তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয় বলছি। সাজিদ ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে এলো। মাটির দিকে মুখ। সবাই হা হা করে হাসতে লাগলো। ঐশীর দাদাভাই বললেন, সাজিদ কাজটা তুমি ভালো করনি। ভয় দেখানো দুষ্টু ভালো মানুষের কাজ নয়। তাছাড়া এসব গাছের গুহার ভেতরে বিষধর সাপ থাকে। আর কোনোদিন এমন কাজ করো না। সাজিদ মুখে কিছু বলল না, কেবল মাথা নেড়ে সায় জানালো।

1 thought on “তেঁতুলগাছের ভুত

  1. শিশুতোষ কবিতা ছড়া এবং অণুগল্প আপনার হাতে অসাধারণ উঠে আসে প্রিয় কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।