ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আধুনিক বাঙালির মননে ও সৃজনে জ্যোর্তিময় এক প্রতীক। বাঙালির প্রাণের মানুষ তিনি। কবিগুরু প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতায় উজ্জ্বল করে তুলে বিশ্বসাহিত্য আসরে সুপ্রতিষ্ঠিত করে বাংলা ও বাঙালী জাতিকে অনন্য এক মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। এ প্রবল অনুরাগ ও অকুন্ঠ শ্রদ্ধার আসনে প্রতিটি বাঙালীর প্রাণে তার অধিষ্ঠান। সুখে ও সংগ্রামে, বেদনা ও উচ্ছাসে, প্রেম ও প্রকৃতিতে তার ছিল অবাধ বিচরণ।

কোথায় নেই তিনি। গানে, কবিতায়, নাটক-উপন্যাস ও গল্পে তিনি বাংলা ও বাঙালীকে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে গেছেন। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম।
জন্মের এত বছর পরেও তিনি বাঙালির জীবনে প্রবাদের মতো আছেন।

তিনি চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি। জন্মদিন মানে নতুনের আহবান। এটাই ভাবতেন আমাদের বিশ্বসেরা কবি রবীন্দ্রনাথ। তাই নিজের জন্মদিনে কবি নিজেই আরো লিখে গেছেন–
‘ উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে মোর চিত্ত-মাঝে, চির নূতনেরে দিল ডাক, পঁচিশে বৈশাখ’।

বাঙালীর প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের কনিষ্ঠ পুত্র। রবীন্দ্রনাথের বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের নাম সারদা দেবী। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন সমাজ সংস্কারক ,
রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাষ্মধর্মের প্রধান সংগঠক।

তাঁর অনুগামীরা তাঁকে মহর্ষি বলে ডাকতেন। সেই সনাতন সময়েই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র ছিল। চার বছর বয়সের সময় থেকে রবির বিদ্যা শিক্ষা শুরু হয়, শৈশবেই উত্সচরিত হয় তার মেধা ও বুদ্ধির বিকাশসত্ত্বা। ছোটবেলা থেকেই তার কবিতা পড়তে খুব ভাল লাগতো ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ এ কথাটি লিখেই তার কবিতা লেখার উত্সাবহ যোগায়।

তিনি বাংলা ভাষায় বহু কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করে থাকেন। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত¡ বোধিনী পত্রিকাতে তাঁর ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা।

১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা কালক্রমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ (গীতাঞ্জলী) লিখে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি শুধু ভারতের কবি নন, সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবি বলে খ্যাতি লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি। প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীত¯্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন।

কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর সামগ্রিক চিঠিপত্র উনিশ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী ‘রবীন্দ্রনৃত্য’ নামে পরিচিত।

১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বকবি। ২৫ শে বৈশাখের রবি চির অস্তমিত হল ২২শে শ্রাবণের নিস্তব্ধ সন্ধায়।

আসুন, আমরা সকলেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মজয়ন্তীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জানাই। বিশ্বকবি রবিঠাকুরকে শুধু জনগনের বন্দনায় বিশ্ববন্দিত করে তুলি।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!

ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পঁচিশে বৈশাখ আসে মনের হরষে,
দুঃখ দৈণ্য যত ঘুচে সুখের পরশে।
এসো হে বৈশাখ! আনো আরো উত্তাপ,
ঘুচে যাক কালিমা, শোক জরা তাপ।
ধরায় নবরূপে আসুক প্রতি বরষে।
পঁচিশে বৈশাখ আসে মনের হরষে,
আজি বসুধায় বাজুক মিলনের শংখধ্বনি,
ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ, শুনি পদধ্বনি।
রবীন্দ্র সংগীতের সুরে বৈশাখের আগমনী।
এসো হে বৈশাখ! মোরা কান পেতে শুনি।

এসো হে পঁচিশে বৈশাখ এ বসুধায়,
বেজে উঠুক আবার। সুরের মূর্ছনায়
জন্ম নিক আবার আরো এক রবি কবি,
যার কিরণ ছটায় নির্মল প্রকৃতির ছবি।
সারা বসুধায় বাজুক মিলনের শংখধ্বনি,
ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ, শুনি পদধ্বনি।
রবীন্দ্র সংগীতের সুরে বৈশাখের আগমনী।
এসো হে বৈশাখ! মোরা কান পেতে শুনি।

এসো হে নতুন! বৈশাখের আগমনে বাজুক
শংখনিনাদ। বিদুরিত হোক জগতের কালিমা
হে কবি রবি ঠাকুর! আবার এসো এ ধরায়।
নাটক, আবৃত্তি আর তব সংগীতের মহিমায়।
সারা বসুধায় বাজুক মিলনের শংখধ্বনি,
ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ, শুনি পদধ্বনি।
রবীন্দ্র সংগীতের সুরে বৈশাখের আগমনী।
এসো হে রুদ্র বৈশাখ! কান পেতে শুনি।
নব নব রূপে তাই আসুক প্রতি বরষে,
ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ মনের হরষে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

5 thoughts on “ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ

  1. 'নব নব রূপে তাই আসুক প্রতি বরষে,
    ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ মনের হরষে।'

    কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধার্ঘ। ধন্যবাদ মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আধুনিক বাঙালির মননে ও সৃজনে জ্যোর্তিময় এক প্রতীক। বাঙালির প্রাণের মানুষ তিনি। কবিগুরু একাই একশ'। ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

  3. আজি বসুধায় বাজুক মিলনের শংখধ্বনি,
    ঐ আসে পঁচিশে বৈশাখ, শুনি পদধ্বনি।
    রবীন্দ্র সংগীতের সুরে বৈশাখের আগমনী।
    এসো হে বৈশাখ! মোরা কান পেতে শুনি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  4. ‘উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে মোর চিত্ত-মাঝে, চির নূতনেরে দিল ডাক, পঁচিশে বৈশাখ’।

    বাঙালীর প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হৃদয়ের স্পন্দন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif 

  5. এসো হে পঁচিশে বৈশাখ এ বসুধায়, বেজে উঠুক আবার। সুরের মূর্ছনায়
    জন্ম নিক আবার আরো এক রবি কবি, যার কিরণ ছটায় নির্মল প্রকৃতির ছবি।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।