ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড নবম পর্ব

ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড নবম পর্ব

সিঁথির বিবর্ণ সিঁদুর
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সুনয়নার চোখে জল। সে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে বলে-
“একদিন অগ্নিসাক্ষ্য রেখে তুমি আমায় গ্রহণ করেছিলে। আজ বলছো তুমি আমায় ভালবাসো না। অমন কথা তুমি বলো না গো। আমি যে তোমার সহধর্মিনী। তোমার সাথে আমার বিয়ে…..

“হয় নি। যেটা হয়েছিল সেটা শুধুমাত্র মালাবদল আর হস্তবন্ধন। সিঁদুরদান বিয়ে নয়, সিঁদুর খেলা। ” – সুধাংশু সজোরে চিত্কার করে বলে ওঠে।

“আমার গর্ভে তোমার সন্তান – তাকে তুমি অস্বীকার করবে?
সুনয়না কেঁদে কেঁদে বলে।

“ও সন্তান আমার নয়। বিয়ের আগে তুমি যার সাথে অবাধে মেলামেশা করেছো তার। আমি চাই না অবাঞ্ছিত সন্তানের পিতা সাজতে। তাই আজ, এখুনি তুমি এ ঘর ছেডে় চলে যাবে। আর কোনদিন আসবে না এই বাড়িতে পা রাখতে।”
কথাগুলো বলেই সুধাংশু চলে যায়।

কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে আবার বলে- “যদি পারো তোমার সিঁথির সিঁদুর তুমি মুছে দিও।”

সুনয়নার মাথায় ওর কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। কি করবে সুনয়না। চোখের জল মুছে ফেলে বাপের বাড়ি যাওয়ায় স্থির করলো সুনয়না।

নিজের সুটকেশ খানা গুছিয়ে সেদিন নিঃশব্দে বেরিয়ে এসেছিল সুনয়না।
বাড়িতে যখন এসে পৌঁছালো তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে।

মা তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রণাম করছে আর সেই সময়েই এসে হাজির হলো সুনয়না। মা বললে- আয় মা। কাছে আয়। কতদিন তোকে দেখি নি রে!

সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত মা-মেয়ের কথাবার্তা হলো।

এমনি করে রাত কেটে ভোর হয়। শুরু হয় নতুন দিন। দিন যায় মাস যায়।
তারপর একদিনকে সুনয়নাকে সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। নরম্যাল ডেলিভারি। সুনয়নার ছেলে হয়েছে।

আনন্দে সুনয়নার হৃদয় নেচে ওঠে। পরক্ষণেই তার অন্তর এক অজানা আশঙ্কায় কেঁদে ওঠে। নবাগত সন্তান যেদিন জানতে চাইবে তার পিতৃপরিচয়- কি উত্তর দেবে সুনয়না?

সুনয়নার সিঁথির বিবর্ণ সিঁদুর তখনো জ্বল জ্বল করছে।

*****************************

প্রতি উত্তরের আশায় বা মন্তব্য পাওয়ার প্রত্যাশায় মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

2 thoughts on “ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড নবম পর্ব

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।