শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন পঞ্চম পর্ব- পূজোর কবিতা-৫

শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
পঞ্চম পর্ব- পূজোর কবিতা-৫

কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সকাল-দুপুর আর অলৌকিক সন্ধ্যার পর ভরা পূর্ণিমায় ঢাকের শব্দ ভেসে আসে দূর গ্রাম থেকে। নির্জন মাঠে নিঃশব্দে বেড়ে ওঠে নিকট ভবিষ্যতের আমন। নিশুতি রাত একটু গড়ালে কাঁসর আর ঢাকের শব্দ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন শাপলা-শালুকেরা পৃথিবীর মোহমায়ায় দু-একটি পাপড়ির ভাঁজ খোলে। উদাস দুপুরেও খালের টলটলে জল একেবারেই স্থির, নিশ্চুপ। এই নিস্তব্ধতা যেন কাশ-শিউলির কোমল পাপড়িকে স্বাগত জানাতে। এভাবেই শারদীয় দিন আসে, আসে শরৎ, শুভ্রতার প্রতীক হয়ে। শরতের আকাশ কখনো ধোয়ামোছা, পরিচ্ছন্ন হয় না। তার নীলচে বুকছেঁড়া মেঘের আবরণে ঢেকে রাখতে চায়। ছেঁড়াখোঁড়া মেঘগুলো যেন একেকটি নাটাই-সুতাহীন ঘুড়ি, সারা দিন স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়ায় আকাশময়। ধীরে ধীরে বর্ষার সেই উত্তাল ঢেউয়ের ভয়াবহ অজয় নদীটাও এইসময় শান্ত হয়ে আসে।

বর্ষার-বর্ষণমুখর অনুজ্জ্বল দিনের পর শরতের মেঘের মতো আমাদের মনও যেন হালকা হয়ে আসে। শরতের দিনগুলোকে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। চারপাশে ছড়িয়ে থাকে অনেক স্বপ্ন। আমরা সেসব স্বপ্ন কুড়িয়ে নিয়ে ভাবতে বসি কত কিছু! শরতের আকাশ, শরতের নদী, শরতের ফুল—সবকিছুই কেমন শান্ত-মায়াময়। শরতের এই শুভ্র রূপ পবিত্রতার প্রতীক। বিলের শাপলা, নদীতীরের কাশফুল, আঙিনার শিউলি—সবই কোমল, পবিত্র। যখন শিশিরের শব্দের মতো টুপটাপ শিউলি ঝরে, তখন অনুভবে শরৎ আসে। কাশবনে দল বেঁধে আসে চড়ুই পাখিরা। শান্ত নদীতে দুকূল ছাপানো ঢেউয়ের বদলে দৃশ্যমান হয় কাশবনের ছোট ছোট রূপালি ঢেউ।

শরতের স্নিগ্ধতাকে আরও মোহময় করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী কিংবা জলার ধারে ফোটে কাশ-কুশ, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য জলজ ফুল। শেষরাতে মৃদু কুয়াশায় ঢেকে থাকা মায়াবী ফুলেরা যেন আরও রূপসী হয়ে ওঠে। শিশিরভেজা শিউলি, বাতাসে মৃদু দোল খাওয়া কাশবনের মঞ্জরি, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি শরতের চিরকালীন রূপ। সত্যিই বিচিত্র রূপ নিয়ে শরৎ আমাদের চেতনায় ধরা দেয়।

সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে কাশফুলের সাদা ঢেউ শরতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার আনাচকানাচে কাশফুলের অপরূপ শোভা চোখে পড়ে। শ্রাবণ শেষে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ, মাঝেমধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়ে সেই মেঘ আরও হালকা হয়, আরও সাদা হয়। সে মেঘের ছায়া পড়ে নদীর ধারে, কাশবনে। মেঘ, আকাশ আর কাশফুলের ছায়া পড়ে অজয় নদীর জলে।

শরৎ মানেই শিউলির মধুগন্ধ ভেসে বেড়ানোর দিন। শিউলির আরেক নাম শেফালি। শিউলি বা শেফালি যা-ই বলি না কেন, চমৎকার এ ফুল নিয়ে দুটি গ্রীক ও ভারতীয় উপকথা আছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাসে শিউলির বিশাল বন ও তার তীব্র ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ—সবাই বারবার শিউলির প্রশংসা করেছেন। ফুলকলিরা মুখ তোলে সন্ধ্যায়। সূর্যের সঙ্গে এদের আড়ি, নিশিভোরেই ঝরে পড়ে মাটিতে। বোঁটার হলুদ রং টিকে থাকে বহুদিন। নদীধারে কাশবনের কাশ ফুল শরতের অনন্য ফুল। আবহমান বাংলার চিরায়ত ফুল। শরতে কাশবনের স্নিগ্ধ শোভা প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত রাখে। কাশবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে অজয় নদীর তীরে কিংবা জলার ধারে। সেখানে বেশ নিশ্চিন্তেই ফোটে শুভ্র কাশ। তবে এখন আর অজয়ের দুধারে আগের মতো কাশবন দেখা যায় না।

শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন
পঞ্চম পর্ব- পূজোর কবিতা-৫

কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আজি এ শারদ প্রাতে প্রভাত হাওয়া মাতে
পূবের আকাশ হয় লাল,
গগনে উঠেছে রবি হেরি অপরূপ ছবি
আসে নব সোনালী সকাল।

শরতের রং লাগে হৃদয়ে পুলক জাগে
কেঁপে উঠে আমলকী বন,
প্রভাতে রবির কর ছড়ায় ভুবন পর
মেতে উঠে দেহ আর মন ।

গাঁয়ের পথের বাঁকে সবুজ তরুর শাখে
পাখি সব সুরে গীত গায়,
অজয়ের নদীচরে সোনালী রোদ্দুর ঝরে
নৌকায় মাঝিরা বৈঠা বায়।

প্রভাত সময় কালে শিউলির ডালে ডালে
শিউলি ফুটেছে রাশি রাশি,
শরতের নীলাকাশে শঙ্খচিল যায় ভেসে
উড়ে যায় সাদা মেঘ ভাসি।

ঢাকীরা ঢাক বাজায় আনন্দেতে নাচে গায়
শরতের সোনা রোদ ঝরে,
শরতের আগমনে ফুল ফোটে বনে বনে
আনন্দে হৃদয় ওঠে ভরে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

11 thoughts on “শরতের আগমনী-পূজোর কবিতা সংকলন পঞ্চম পর্ব- পূজোর কবিতা-৫

  1. আজি এ শারদ প্রাতে প্রভাত হাওয়া মাতে
    পূবের আকাশ হয় লাল,
    গগনে উঠেছে রবি হেরি অপরূপ ছবি
    আসে নব সোনালী সকাল। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. পূজোর কবিতায় শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দা। আশা করবো ভাল আছেন। শুভেচ্ছা  https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. সাথে থাকুন। শারদ-শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন কবিবোন।।
      জয়গুরু।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।