কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর আগমনী স্তবগাথা- দ্বিতীয় পর্ব

কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর
আগমনী স্তবগাথা- দ্বিতীয় পর্ব

তথ্য সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

হিন্দুধর্মে যে কোনও দেব বা দেবীমূর্তিই আদপে প্রতীকী। হিন্দু শাস্ত্রে ব্রহ্মকেই একমাত্র সত্য বলে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি নিরুপাধি, নির্গুণ। মায়াকে আশ্রয় করে তিনি সগুণ রূপ লাভ করেন। এই সগুণ ব্রহ্মই ঈশ্বর, স্রষ্টা। পুরুষ ও প্রকৃতির লীলার মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, অতঃপর স্থিতি ও বিলয় ঘটে থাকে। শক্তি হলেন প্রকৃতি স্বরূপিনী। তিনি জগন্মাতৃকা। আদ্যাশক্তি নিরাকারা এবং মানুষের কল্পনার অতীত। কিন্তু ভক্তের সুবিধার্থেই তাঁকে মানুষের ইন্দ্রিয়বোধ্য রূপে কল্পনা করা হয়ে থাকে। দেবী কালীর প্রচলিত ও সাধারণ্যে পূজিত মূর্তিটিও তাঁর তেমনই একটি কল্পিত রূপমূর্তি। কিন্তু এই রূপকল্পনার বিশেষ শাস্ত্রীয় তাৎপর্য রয়েছে। তাঁর মূর্তির প্রতিটি অংশই গভীর প্রতীকী অর্থ সম্পন্ন। কীরকম সেই অর্থ? সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক—

১. দেবীর মাথায় কালো চুলের ঢল। তাঁর এই মুক্ত কেশপাশ তাঁর বৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দ্বারা লৌকিক মায়ার বন্ধন ছেদন করেছেন। তাই তিনি চিরবৈরাগ্যময়ী।

২. দেবীর গায়ের রং কালো। আসলে তিনি যে কোনও বর্ণের অতীত। আর কালো রং সকল বর্ণের অনুপস্থিতির প্রতীক। কখনও দেবীকে গাঢ় নীল বর্ণেও কল্পনা করা হয়। তিনি গাঢ় নীল আকাশের মতোই অসীম। তাঁর নীল গাত্রবর্ণ সেই গগনসম অসীমতার ইঙ্গিতবাহী।

৩. দেবী ত্রিনয়ন সম্পন্না। এই ত্রিনয়ন চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নির ন্যায় অন্ধকার বিনাশকারী। এই ত্রিনয়নের মাধ্যমে দেবী যেমন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দর্শন করে থাকেন, তেমনই প্রত্যক্ষ করেন সত্য, শিব ও সুন্দরকে; অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কে।

৪. দেবী সাদা দাঁতের দ্বারা নিজের রক্তবর্ণ জ্বিহাকে কামড়ে ধরে রয়েছেন। লাল রং রজোগুণের ও সাদা রং সত্ত্বগুণের প্রতীক। দাঁতের দ্বারা জিহ্বাকে চেপে ধরে দেবী তাঁর ভক্তকুলকে বোঝাতে চাইছেন, ত্যাগের দ্বারা ভোগকে দমন করো।

৫. দেবী মুণ্ডমালিনী। দেবীর গলায় রয়েছে মোট ৫০টি মুণ্ডের মালা। এই মুণ্ডগুলি ৫০টি বর্ণ (১৪টি স্বরবর্ণ ও ৩৬টি ব্যঞ্জনবর্ণ) বা বীজমন্ত্রের প্রতীক। এই বীজমন্ত্রই সৃষ্টির উৎস। দেবী নিজে শব্দব্রহ্মরূপিনী।

৬. দেবী চতুর্ভুজা। তাঁর ডানদিকের উপরের হাতে রয়েছে বরাভয় মুদ্রা, নীচের হাতে আশীর্বাদ মুদ্রা। কারণ দেবী তাঁর সন্তানদের যেমন রক্ষা করেন, তেমনই ভক্তের মনোবাঞ্ছাও পূর্ণ করেন। বাঁ দিকের উপরের হাতে তিনি ধরে রয়েছেন তরবারি, আর নীচের হাতে একটি কর্তিত মুণ্ড। অর্থাৎ জ্ঞান অসির আঘাতে তিনি যেমন জীবকুলকে মায়াবন্ধন থেকে মুক্তির পথপ্রদর্শন করতে পারেন, তেমনই মায়াচ্ছন্ন জীবের মস্তিস্কে প্রদান করতে পারেন প্রজ্ঞা কিংবা বিশেষ জ্ঞান।

৭. দেবী কোমরে কর্তিত হাতের মেখলা পরিহিতা। এই হাত কর্মের প্রতীক। মানুষের সমস্ত কর্মের ফলদাত্রী দেবী। জীবনচক্রের শেষে সমস্ত আত্মা স্বয়ং দেবীর অঙ্গীভূত হয়। এবং পরে মাতৃজঠর থেকেই পুনরায় তাদের কর্মফল অনুসারে জন্মলাভ করে।

৮. দেবীর পদতলে শিব শায়িত। শিব স্থিতি, দেবী গতি। শিব ব্রহ্মচৈতন্য, দেবী ব্রহ্মশক্তি। তাঁদের সম্মিলন ব্যতীত সৃষ্টির উৎপত্তি সম্ভব নয়। বঙ্গে সাধারণত দক্ষিণা কালীর পুজো হয়ে থাকে। এই মূর্তিতে দেবীর দক্ষিণ পদ বা ডান পা শিবের বুকে স্থাপিত থাকে।

৯. দেবী নগ্নিকা। তিনি বিশ্বব্যাপী শক্তির প্রতীক। তিনি অসীম। এই চিরশক্তিকে আবৃত করে এমন সাধ্য কোন বস্ত্রের রয়েছে! দেবী তাই দিগম্বরী।

উগ্রচণ্ডা মহাকালীর স্তবগাথা

ওঁ মহামায়ে জগন্মাত কালিকে ঘোর দক্ষিণে ৷
গৃহাণ্ বন্দনে দেবী নমস্তে শংকর প্রিয়ে ৷৷
ওঁ প্রচন্ডে পুত্রদে নিত্যং সুপ্রীতে সুর নায়িকে ৷
কুলদ্যোতকরে চোগ্রে জয়ং দেহী নমোহস্তুতে ৷৷

কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..দীপাবলী সংকলন-১৪২৬
দীপাবলীর আগমনী কবিতা-২

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে,
বরণডালা সাজিয়েছি মা অশ্রুভরা নয়নজলে।
যার রূপে এ ভুবন ভরা,
তিনি আবার দুঃখ হরা,
বামহাতে তার খড়্গ ধরা নরমুণ্ড মালা গলে।
আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে।

আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে,
বরণডালা সাজিয়েছি মা অশ্রুভরা নয়নজলে।
মুক্তকেশী মা চতুর্ভূজা,
মাকে সবে করে পূজা,
এসো মাগো চামুণ্ডাকালী এসো মা ধরাতলে।
আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে।

আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে,
বরণডালা সাজিয়েছি মা অশ্রুভরা নয়নজলে।
মা মহাশক্তির আগমনে,
পুলক জাগে হৃদয় মনে,
বসুন্ধরার কোণে কোণে ধূপ দীপ ওঠে জ্বলে।
আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে।

আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে,
বরণডালা সাজিয়েছি মা অশ্রুভরা নয়নজলে।
ঢাক বাজে কাঁসর বাজে,
আসবেন মা ধরার মাঝে
ভক্তিপুষ্পে করবো পূজা ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ বলে।
আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

16 thoughts on “কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর আগমনী স্তবগাথা- দ্বিতীয় পর্ব

  1. প্রণাম মন্ত্র 

    জয়ন্তী মঙ্গলা কালীভদ্রা কালী
    কপালিনীদূগা শিবা সমাধ্যাতীসাহা
    সুধা নমস্তুতে।

    ওঁ  নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে , নিবেদয়ামি চাত্মানংত্বং গতিঃ পরমেশ্বরঃ ।

    ওঁ কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিনি দেবী নারায়ণী নমস্তুতে ,মহিষাঘ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনী আয়ুরোগয় বিজয়ং দেহি দেবী নমস্তুতে । এষ পুস্পাঞ্জলিঃ শ্রীমদ্দদক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ ।

    1. সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম। গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম।
      সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

  2. আলোচনায় বেশ কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা পরিস্কার হলো কবি মি. ভাণ্ডারী। ধন্যবাদ।

    1. সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম। গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হলাম।
      সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

    1. সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

  3. কালী কালী মহাকালী দেবী আগমনী…..শুভ দীপাবলীর আগমনী স্তবগাথা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

  4. ঢাক বাজে কাঁসর বাজে,
    আসবেন মা ধরার মাঝে
    ভক্তিপুষ্পে করবো পূজা ভাণ্ডারী লক্ষ্মণ বলে।
    আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

    1. সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

  5. আদ্যাশক্তি মহাকালী এসো মাগো ভূ-মণ্ডলে,
    বরণডালা সাজিয়েছি মা অশ্রুভরা নয়নজলে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

    1. সাথে থাকুন। শুভ দীপাবলীর অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই।
      জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।