ভাইয়ের রক্তে ভাইফোঁটা দীপাবলী সংকলন-১৪২৬

বোনের কিডনি দিয়ে ভাইফোঁটা
তথ্যসংগ্রহ ও সম্পাদনা – লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।

ভাইয়ের জন্য ক’জন বোন এমন ‘যমের দুয়ারে কাঁটা’ দিতে পারেন!
আয়ু বাড়াতে ভাইয়ের কপালে ঘি, চন্দনের ফোঁটা দেন বোনেরা। সেই উৎসবই ভাইফোঁটা। মঙ্গলবার রাজ্যের ঘরে-ঘরে ভাইদের কপালে এমন ফোঁটা দিয়ে যখন দীর্ঘায়ুর কামনা করছিলেন বোনেরা, তখন ইএম বাইপাস সংলগ্ন মুকুন্দপুরের হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে দাদার জন্য আক্ষরিক অর্থেই ‘যমের দুয়ারে কাঁটা’ দিয়েছেন মধ্যমগ্রাম সাজিরহাটের বাসিন্দা বেবি মুখোপাধ্যায়।
কী ভাবে?
বেবির দাদা বছর পঁয়তাল্লিশের বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি কিডনি বিকল হয়ে পড়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে দাদাকে নিজের একটি কিডনি দান করেছেন বেবি। এ বার বোনের কিডনি শরীরে নিয়েই নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার পথে এগোচ্ছেন বাপিবাবু।
ডাক্তাররাই হেসে বলছেন, উৎসবের ভাইফোঁটা থেকে এই ‘ভাইফোঁটা’ কীসে কম!
চলতি বছরের মে মাসে আচমকাই বাপিবাবুর দু’টি কি়ডনিতেই সমস্যা ধরা পড়ে। কিডনির সমস্যা চরমে ওঠায় প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায় বলে জানিয়ে দেন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকেরা। নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে বাপিবাবুর বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং কন্যাসন্তান। কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে প়ড়েছিল তাঁদের।
বাপিবাবুর স্ত্রী দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দাদার এমন অবস্থা শুনেই কিডনি দানে এগিয়ে আসেন তাঁর থেকে দু’ বছরের বোন। দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ ‘ও-পজিটিভ’। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেও কিডনি প্রতিস্থাপনে কোনও সমস্যা ছিল না। বেশ কয়েক বার তারিখ অদলবদল করে শেষমেশ অস্ত্রোপচারের দিন স্থির করেন চিকিৎসক। তবে সেটাই যে ভাইফোঁটার দিন, তা কারও খেয়াল ছিল না। বাপিবাবুর স্ত্রী দীপান্বিতা এবং বেবির স্বামী অলীক মুখোপাধ্যায় দু’জনেই বলছেন, কী ভাবে যেন দিনটা মিলে গেল! দীপান্বিতার কথায়, ‘‘তখন যা টেনশনে ছিলাম, এ সব কথা মাথাতেই আসেনি। অপারেশনের পরে খেয়াল হল, দিনটা তো ভাইফোঁটার।’’
মঙ্গলবার ভাইফোঁটার দিন ইএম বাইপাসের কাছে মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালে নেফ্রোলজিস্ট প্রতীক দাস এবং দুই ইউরোলজিস্ট তাপস সাহা ও সুরেশ বাজোরিয়ার নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল বোনের শরীর থেকে দাদার শরীরে কি়ডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। বাপিবাবু এখন আইসিইউয়ে রয়েছেন। বোন আইটিইউয়ে চিকিৎসাধীন। বুধবার আইটিইউয়ে শুয়েই বেবি তাঁর বৌদিকে শুধু বলেছেন, ‘‘দাদার জন্য কিডনি দিয়ে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
পরিবহণ দফতরের কর্মী বেবির বাড়িতে স্বামী ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে রয়েছে। এ দিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই স্বামী অলীকবাবু জানান, তাঁর স্ত্রী নিজের দাদাকে কিডনি দান করবেন, এটা জানার পর কোনও আপত্তি করেননি তিনি। বরং স্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। শুধু চিন্তা ছিল কঠিন এই অস্ত্রোপচার নিয়ে।
চিকিৎসক দলের প্রধান প্রতীক দাস এ দিন জানিয়েছেন, প্রতিস্থাপন সফল ভাবেই হয়েছে। দু’জনকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তাঁরা। বুধবার রাত পর্যন্ত কারও শরীরে সমস্যা দেখা যায়নি। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘বোনের কিডনি আগেও ভাইয়ের শরীরে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাইফোঁটার দিনে এমন অপারেশন করিনি।

ভাইয়ের রক্তে ভাইফোঁটা
দীপাবলী সংকলন-১৪২৬

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

অশ্রু ঝরানো ভাইফোঁটা আজ বাংলার ঘরে ঘরে,
ছিন্ন হয়েছে স্নেহের বন্ধন দুই নয়নে অশ্রু ঝরে।
সংসারে আজ অশান্তির ঝড় ভেঙেছে খেলাঘর,
অশান্তিতে জ্বলেপুড়ে মরে ভাই বোন আজ পর।

ভাইবোনে মিল নেই আজ ভাই নাহি চেনে বোন,
খবর রাখেনা কেহ কারো করে নাকো কভু ফোন।
আত্ম কলহে মেতে ভাইবোন জ্বলে পুড়ে হিংসায়,
পাড়াপ্রতিবেশী মুখ টিপে হাসে করে না হায় হায়।

বর্ষে বর্ষে ভাইফোঁটা আসে, আসে নাকো কভু ভাই,
বোনের দুচোখে অশ্রুজল ঝরে ভাই বুঝি তার নাই।
হাসির চেয়ে কান্না যে দামী আজকের ভাইফোঁটায়,
হিসাব রাখি না আজও কারা কাঁদে নিষ্ঠুর দুনিয়ায়।

কবিতার পাতায় বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহিনী বোন কাঁদে,
ঠকে শেখো বোন বিদ্রোহ করো পড়ো না কভু ফাঁদে।
গর্জে উঠুক বোনেরা সবাই মুছে ফেলুক ভ্রাতৃত্ববোধ,
ভাইয়ের রক্তে ভাইফোঁটা দিয়ে নিতে হবে প্রতিশোধ।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “ভাইয়ের রক্তে ভাইফোঁটা দীপাবলী সংকলন-১৪২৬

  1. হাসির চেয়ে কান্না যে দামী আজকের ভাইফোঁটায়,
    হিসাব রাখি না আজও কারা কাঁদে নিষ্ঠুর দুনিয়ায়।

    শুভেচ্ছা রাখি সেই বোনের জন্য যে কিনা ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে অঙ্গ দান করেছেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      সাথে থাকুন। জয়গুরু।

  2. বর্ষে বর্ষে ভাইফোঁটা আসে, আসে নাকো কভু ভাই,
    বোনের দুচোখে অশ্রুজল ঝরে ভাই বুঝি তার নাই।
    হাসির চেয়ে কান্না যে দামী আজকের ভাইফোঁটায়,
    হিসাব রাখি না আজও কারা কাঁদে নিষ্ঠুর দুনিয়ায়।

    অনেক সুন্দর লিখেছেন কবি ভাণ্ডারী দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      সাথে থাকুন। জয়গুরু।

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      সাথে থাকুন। জয়গুরু।

  3. ভাইয়ের রক্তে ভাইফোঁটা দীপাবলী। ভাই বোনের সম্পর্ক আজন্মকাল থাক অটুট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      সাথে থাকুন। জয়গুরু।

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      সাথে থাকুন। জয়গুরু।

  4. ভাই বোনের ভালোবাসার তুলনা হয়না। এই ভালোবাসা যেন না হারায়। 

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
      সাথে থাকুন। জয়গুরু।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।