ফাগুন রাঙানো অরুণ প্রভাতে

নব বসন্তের পবিত্রতম দিনগুলি
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে সবে পেরিয়ে এলাম আমরা। সরস্বতী পুজোয় শীতের আমেজ একটু হলেও ছিল। তবে এবার বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। সঙ্গে মনও ফুরফুরে। দরজায় কড়া নাড়ছে প্রেম দিবস। এই দিনটি কিন্তু এখন আর একা আসে না, মা দুর্গার মতো সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছে ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রেম দিবস।

অনেকেই মনে করেন প্রেমের জন্য আলাদা কোনও দিন হয় না, প্রত্যেকটা দিনই প্রেমের দিন। আবার কেউ কেউ বেশ ঘটা করেই উদযাপন করেন প্রেমের সপ্তাহ।

জেনে নিন সপ্তাহভর প্রেমের বাহানার জন্য কবে কোন দিন রয়েছে ক্যালেন্ডারে?

রোজ ডে
প্রেমের সপ্তাহ শুরু হচ্ছে এই দিনটা দিয়ে। রোজ ডে। ৭ ফেব্রুয়ারি। এই সময় বাজারে নানা রঙের গোলাপ পাওয়া যায়। নানা রঙের গোলাপ দিয়ে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে একদিন সারপ্রাইজ দিলেন না হয়। আহা! ভালোবাসার মানুষকে যে লাল গোলাপ দিতে হবে, তার কোনও মানে নেই। হলুদ, গোলাপি, কমলা বেগুনি যে কোনও রঙের গোলাপ দিতে পারেন আপনার সঙ্গীকে।
প্রোপোজ ডে
সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনটি প্রোপোজ ডে। ৮ ফেব্রুয়ারি। যারা এখনও পছন্দের মানুষকে জানিয়েই উঠতে পারেননি নিজের ভালোবাসার কথা, এই দিন তাঁদের জন্য। আর ইতস্তত না করে বলেই ফেলুন মনের কথা।
চকোলেট ডে
আপনার যদি চোখে চশমা আঁটা, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নেওয়া প্রেমিকাও থাকে, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে চূড়ান্ত অস্বস্তি থাকলেও এই দিনটায় এক বাক্স চকোলেট পেলে গলে যেতে বাধ্য। ৯ ফেব্রুয়ারি চকোলেট ডে। এই দিনটায় প্রেমিকদের তুলনায় প্রেমিকারাই বেশি যত্নে থাকবেন, এ আর বলার কী আছে!
টেডি ডে
আহা! স্কুল কলেজের দিনগুলোয় ভালোবেসেছেন, আর প্রেমিকাকে টেডি বিয়ার দেননি! ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ করেছেন মশাই। ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না, যদি না এবার একটা মিষ্টি টেডি উপহার দেন আপনার প্রিয়াকে। তার জন্য সবচেয়ে ভালো দিন ১০ ফেব্রুয়ারি।
প্রমিস ডে
কথায় যদি বা বলে ‘প্রমিসেস আর মেন্ট টু বি ব্রোকেন’, তবু কী করবেন বলুন? শীত বিদায়ের এই সময়টারই যত দোষ। কথা দিয়ে দিতে ভারী ইচ্ছে হয়। মন খুলে প্রমিস করুন এই ১১ ফেব্রুয়ারি। শুধু জেনে শুনে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলবেন না, যা আপনি রাখতে পারবেন না।
হাগ ডে
কাছের মানুষকে জড়িয়ে ধরতে কার না মন চায় বলুন? ভালোবাসার উদযাপন করতে এই ১২ তারিখ উষ্ণ আলিঙ্গনে রাখুন আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে।
কিস ডে
প্রেম ব্যক্ত করা হয়ে গেছে। প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন হাতে হাত রেখে। শুধু চুমুটাই খেয়ে উঠতে পারেননি এখনও প্রেমিক কিমবা প্রেমিকাকে? এই ১৩ ফেব্রুয়ারি চুমুটা খেয়েই ফেলুন না।
ভ্যালেন্টাইস ডে
সাত দিন একটু একটু করে যে উদযাপন করলেন প্রেমের মরশুম, আজ তা বাঁধনছাড়া হবার পালা। প্রিয় মানুষের সঙ্গে নিজের মতো সময় কাটান। মনে রাখবেন গাঁটের পয়সা খরচা করলেই সুন্দর সময় কেনা যায় না। কোয়ালিটি টাইম কাটান, যা আপনাদের বছরভর মনে থাকবে।

ফাগুন রাঙানো অরুণ প্রভাতে এমনি এক মধুর রাতে হয়েছিল আমাদের মধুর মিলন।
আজ সেই শুভদিন। ১২ই ফেব্রুয়ারী। আজ আমাদের শুভ চব্বিশতম বিবাহ বার্ষিকী।
আজকের পূণ্য লগ্নে সবাইকে জানাই আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।
জয়গুরু!

ফাগুন রাঙানো অরুণ প্রভাতে
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ফাগুন রাঙানো বিবাহ বার্ষিকী
এলো আজি শুভদিন,
কমল কাননে অলি গুঞ্জরণে
হৃদয়ে বাজিছে বীণ।

এসেছে ফাগুন হৃদয়ে আগুন
রেঙেছে খুশির রঙে,
আজি শুভদিনে মধুর মিলনে
মিলেছি প্রিয়ার সঙ্গে।

সেই সুমধুর মিলন বাসরে
সানাই বাজিছে সুরে,
রাত্রি দ্বিপ্রহরে মাল্যদান করে
রাঙাই সিঁথি সিঁদুরে।

মিলন রাতের সেই স্মৃতি আজি
সবার হৃদয়ে বাজে,
তরুশাখে তাই পিকদল গায়
বসন্তে ধরিত্রী মাঝে।

উলুধ্বনি আর শঙ্খের নিনাদ
জাগে মনে সেই স্মৃতি,
বিবাহ বার্ষিকী মধুর লগনে
জানাই শুভেচ্ছা প্রীতি।

ফাগুন রাঙানো অরুণ প্রভাতে
কোকিলের কুহুতান,
চতুর্বিংশতম বিবাহ বার্ষিকী
মেতে ওঠে দুটি প্রাণ।

পূর্ব প্রকাশিত আরও একটি কবিতা

ফাগুনে রাঙা বিবাহ-বার্ষিকী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ফাগুন রাঙানো অরুণ প্রভাতে
বিবাহ বার্ষিকী আজ,
তরুশাখে শোভে নব কিশলয়
অপরূপ তার সাজ।

ফুলের বাগানে ফুটেছে কলিরা
পাখিরা গাহিছে গীত,
বসন্ত এলো রে এ ধরার পরে
নাহি আজি আর শীত।

কমল কাননে মধু আহরণে
ধেয়ে চলে অলিদল,
অজয় তটিনী আপনার বেগে
বয়ে চলে কল কল।

ফাগুনের রঙে রাঙিয়ে ভুবন
অরুণ ডুবিল সাঁঝে,
বেজে উঠেছিলো বিয়ের সানাই
সেদিন আঙিনা মাঝে।

চাঁদ তারা হাসে রাতের আকাশে
রাত কাটে ভোর হয়,
বর্ষে বর্ষে আসে বিবাহ বার্ষিকী
স্মৃতি হয়ে মধুময়।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

3 thoughts on “ফাগুন রাঙানো অরুণ প্রভাতে

  1. ফাগুন রাঙ্গা দিনের আগে পরে দেখছি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডে রয়ে গেছে; যে গুলোর প্রচলন সেভাবে বোধকরি শুরু হয়নি। তবে হতে কতক্ষণ। অভিনন্দন মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  2. এসেছে ফাগুন হৃদয়ে আগুন
    রেঙেছে খুশির রঙে,
    আজি শুভদিনে মধুর মিলনে
    মিলেছি প্রিয়ার সঙ্গে।

     দিবসের গণ্ডি ফেরিয়ে ভালবাসা হয়ে উঠুক সার্বজনীন।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।