বসন্ত এলো আজি…….. নব বসন্তের গান গীতি কবিতা – ৯ নবম পর্ব

বসন্ত এলো আজি…….. নব বসন্তের গান
গীতি কবিতা – ৯ নবম পর্ব।
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের রঙে মেতে ওঠে তরুণ হৃদয়, নতুন করে প্রাণ পান প্রবীণেরা। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রাঙা হয়ে ওঠে। বসন্ত তাই অনেকের কাছে ‘প্রেমের ঋতু’। চঞ্চল মনের আবেগের বিহ্বলতায় ছড়িয়ে প্রতি বছর বসন্ত আসে ভালবাসার ডাক ছড়িয়ে দেওয়া কোকিলের কুহুতানে।
গাছে গাছে ইতিমধ্যেই শিমূল, পলাশে রঙ ধরতে শুরু করেছে। রঙ ধরতে শুরু করেছে মানুষের মনেও। বসন্ত মানেই তো রঙের আবাহন। শীত শেষে বসন্তের আগমন মনে অন্য এক দোলা দিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার পয়লা ফাল্গুন। বসন্তের শুরু। আকাশ বাতাসও বলছে বসন্তে এসে গেছে। তাও আবার এমন একটা দিনে যেদিন প্রেমের দিন। ভালবাসার দিন। প্রেমের দিনে বসন্তের আগমন। এ তো রাজযোটক। ভ্যালেন্টাইনস ডে কে সামনে রেখে শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই তারুণ্যের জোয়ার। প্রেমের জোয়ার।

বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতি সেজে উঠছে নানা রঙে। ঋতুরাজের আগমনে প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও ছড়িয়ে পড়ে বসন্তের রঙ। বসন্তকে বরণ করে নিতে তাই প্রকৃতির রঙে রঙ মিলিয়ে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে। আর গান ছাড়া তো উৎসব একেবারেই ম্লান। তাই বসন্তকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা গান।

বসন্ত হলো প্রেমের ঋতু। প্রেমের বার্তা নিয়েই যেন আগমন ঘটে ঋতুরাজের। বাঙালির মনন আলোড়িত করা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, অতুলপ্রসাদ, জসীমউদ্্দীন, শাহ আবদুল করিমের অমূল্য সৃষ্টিসম্ভারের অনুষঙ্গ সমৃদ্ধ করে এই আয়োজনকে। তবে প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কবিরা বসন্তের প্রভাব তুলে ধরেছেন তাদের রচিত অমর পঙ্ক্তিমালায়। এ ঋতুটাকে বাংলার কবি সম্প্রদায় জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন বোধহয় একটু বেশি গুরুত্ব দিয়েই। মধ্যযুগের কবি বড়–-চ-ীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন যা বাংলা ভাষার দ্বিতীয় নিদর্শন; এই কাব্যগ্রন্থটিতেই আমরা বসন্তের প্রভাব লক্ষ করি দারুণভাবে।

মধ্যযুগের অন্যতম কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। বাংলা সাহিত্যে সবল চরিত্র রূপায়ণে তিনি স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার নির্মিত অন্যতম চরিত্র নায়িকা ফুল্লরাও বসন্তের আবেদন উপেক্ষা করতে পারেনি : সহজে শীতল ঋতু ফাল্গুন যে মাসে।/ পোড়ায় রমণীগণ বসন্ত বাতাসে। [ফুল্লুরার বারো মাসের দুঃখ : কালকেতুর উপাখ্যান]

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও বসন্তের আবেগে নিজেকে জড়িয়েছেন। তিনিও বসন্তের পাখপাখালির কলরবে মুখরিত হয়েছেন। বসন্তের রঙে নিজের অন্তরকে রাঙিয়েছেন বাংলা ভাষার এ অমর শিল্পস্রষ্টা :
নহ তুমি পিক, পাখি, বিখ্যাত ভারতে,/ মাধবের বার্তাবহ; যার কুহরণে/ ফোটে কোটি ফুল্লুপুঞ্জ মঞ্জু কুঞ্জবনে!-/ তবুও সঙ্গীত-রঙ্গ করিছ যে মতে/ গায়ক, পুলক তাহে জনমে এ মনে! [বসন্তের একটি পাখির প্রতি : চতুর্দশপদী কবিতাবলি]

নব বসন্ত সবাইকে নিজের মায়ামন্ত্রে আচ্ছন্ন করে রাখে। নব বসন্ত বাঙালির প্রাণে নতুনত্বে প্রাণ সঞ্চার করুক এটাই হোক বসন্ত বরণের অভিপ্রায়। আসুন, আমরা সবাই নব বসন্তের রঙে রাঙিয়ে তুলি নিজেদের। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

নব বসন্তের গান-৯
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বসন্ত এসেছে প্রকৃতি হেসেছে
নব নব কিশলয়,
রাঙাপথ বাঁকে হেরি তরুশাখে
পত্র পল্লবিত হয়।

তরুশাখে পাখি গাহে না একাকী
খুঁজে ফিরে সহচরী,
কুসুম কাননে হরষিত মনে
গুঞ্জন করে ভ্রমরী।

বসন্ত এলো রে এ ধরার পরে
সাজিছে পলাশ বন।
কিংশুক কলি ফুটিল সকলি
রেঙে উঠে তনু মন।

অজয়ের বাঁকে আম্র তরুশাখে
গাহিছে কোকিলা সুরে,
শুনি কান পাতি বংশীর ধ্বনি
বাজে রাখালিয়া সুরে।

দিবা অবসানে পশ্চিমের পানে
লাজে মুখ ঢাকে রবি,
সুরের আকাশে জোছনায় ভাসে
নব বসন্তের ছবি।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

4 thoughts on “বসন্ত এলো আজি…….. নব বসন্তের গান গীতি কবিতা – ৯ নবম পর্ব

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম কবিবর।
      বাসন্তী শুভেচ্ছা রইলো।
      জয়গুরু!

  1. দিবা অবসানে পশ্চিমের পানে
    লাজে মুখ ঢাকে রবি,
    সুরের আকাশে জোছনায় ভাসে
    নব বসন্তের ছবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।