টুসু গান (গীতি কবিতা) প্রথম পর্ব
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিস্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরী করা হয়। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় ভাবে এই পিঠে গড়গড়্যা পিঠে বা বাঁকা পিঠে বা উধি পিঠে ও পুর পিঠা নামে পরিচিত। বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেয়েরা জাগরণের ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা ও আলো দিয়ে সাজায়। সারারাত টুসুর জাগরণ হয়। টুসুগান গাওয়া হয়।
টুসুগান-১
টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?
শ্বশুর ভাল শ্বাশুড়ি ভাল গো
আর ভাল দেওর দুটি,
দেওরের দাদা ভাল গো
দুষ্টু আমার ননদী।
টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?
সকাল সকাল সবাইকে গো
চা করে খাওয়াই আমি,
নটা বাজল্যা জল খাবার দিই
আপিস যায় আমার স্বামী।
টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?
সারাদিন রান্না ঘরে গো
রান্ধা বাড়া সকাল হত্যে,
বর আমার আপিস থেকে গো
ঘর আসে 4টার মধ্যে।
টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?
সাঁঝ হলে বাতি জ্বালাই গো
আমাদের তুলসীথানে,
রাতের বেলা টুসু পূজা গো
সবাই মাতে টুসুগানে।
টুসু কখন এলি?
শ্বশুর ঘরে বল না লো ক্যামন ছিলি?
এখানে কিছু সংগৃহীত ও প্রচলিত সুরে
টুসুগানের সংকলন উদ্ধৃত করা হলো।
(১)
# চাল উলহাব রসে রসে
মুঢ়ি ভাজব রগড়ে
সতীন মাগি মইরয়েঁ গেলে
কাঠ চালাব সগড়ে
সতীন মইরল্য ভাল হল্য
ছাতির ভাত মর হেঁট হল্য
সতীন ছিল চৈখের বালি
তাই আগে অকে লিল
(২)
“টুসুর মাচায় লাউ ধরেছ্যে
ধরেছ্যে জড়া জড়া
হাত বাড়াঞে ধইরতে গেলে
পায় জড়া পানের খিলি
জড়া জড়া পানের খিলি
যাঁতি কাটা সুফারি…
(৩)
টুসুর চালে লাউ ধইরেছে
লাউ তুল্যেছে বাগালে
যবে বাগাল ধরা যাবি
বড়বাবুর হুজুরে
যখন বাগাল ধরা যায় মা
তখন হামরা বাঁধঘাটে
ঘাটের হল্যৈদ ঘাটে দিঞে
হামরা যাই মা দরবারে
দরবারে যে গেছলে টুসু
মকদ্দমায়ঁ কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল
(৪)
“উপরে পাটা তলে পাটা
তার উপরে দারোগা
ও দারোগা সইরাঞ বস গ
টুসু যাবেক পুরুল্যা
পুরুল্যা যে গেছলে টুসু মকদ্দমায় কি হল্য
মকদ্দমায় ডিগরি হল্য
নীলমনি চালান গেল”(এই দু ভাবেই গাওয়া প্রচলিত)
(৫)
রাত পোহালে আসে মকর।
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
খাওয়াব করি তোকে আদর
কুনু কথা শুনব না গো শুনব না।
খাওয়াব করি কদর।
আসে মকর বছর বছর
“তদের ঘরে টুসু ছিল
দিন করি আনাগনা
কাইল ত টুসু চল্যে যাবে
হবে গ দুয়ার মানা”
রাত পোহালে আসে মকর।
কর তুরা টুসুর কদর
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
আসে মকর বছর বছর।
রাত পোহালে আসে মকর।
কর তুরা টুসুর কদর
ঘরে ঘরে পিঠার বহর
আসে মকর বছর বছর।