সে বছরের তখন ছিল মধুমাস। আমাদের আম কাঁঠালের গাছগুলাতে সে বছর এত বেশি ফলন হইছিল যে আম্মা শুধু বলত, কোন বিপদ আসে আল্লায় জানে, এত ফলন ত ভালোনা। আম্মার সে আশংকা একরাতে সত্যি হয়ে গেল যখন আব্বা তার ছেলের বয়েসি একটা বৌ নিয়া এসে বাড়িতে উপস্থিত হলেন। আামাদের তখন একেবারে ভ্যাবাচেকা অবস্থা। আকাশ ত নয় গোটা সৌরজগত ভেঙ্গে পড়ল ঘরের উপর। আম্মা শুরু করলেন কান্নাকাটি, ছোটবোন নিলীমা ত দা নিয়া বার কয়েক গলা কাটতে গেছে মেয়েটার মানে আব্বার নতুন বৌ’র। চাচী জেঠীরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালায়া যাইতেছেন। পাড়াময় লোকজন তখন আমাদের উঠানে। নানা কথা, শোরগোল, হইহুল্লোড় যেন একটা লংকাকান্ড। আব্বার এই কলিকান্ড কারোর বিশ্বাস হইতেছেনা কারো হইতেছে। কেউ বলতেছে, উহু আকবরের দ্বারা এটা কেমনে সম্ভব? কোন কিন্তু আছে। কেউ বলতেছে মতিভ্রম ভাই মতিভ্রম! নারীরা দাদীর রুমে যেখানে আব্বার নতুন বৌ আছে সেখানে ডুকতেছে বাইর হইতেছে। আর ধীরে ধীরে আব্বার নতুন বৌ’র রুপের কথা চাউর হইতেছে। তারা বলতেছে এমন রুপের মাইয়া দশগ্রামে নাই।
আমি তখন উদভ্রান্ত। রাত প্রায় শেষের দিকে আব্বা আমারে ডাক দিয়া বললেন তোর সাথে কথা আছে। আমি তখন আব্বার লাগানো কৃষ্ণচুড়া গাছটার নীচে গিয়া দাঁড়াই। আমি বুঝদার হবার পর থেকে দেখতেছি আব্বা আমার লগে বলা কথার সময় কেন জানি এই গাছটার নীচে চইলা আসেন। কথা বলতে বলতে গাছটার গায়ে এমনভাবে হাত বুলান যেন আদর করতেছেন। ত আব্বা বললেন, মেয়েটার মা আমার এবং থানার আরো স্টাফদের রান্না বান্না করত, মাস কয়েক আগে ওর মা মারা যাওয়ার পর মেয়েটা মা’র কাজ হাতে নিছে। বাপহারা মেয়েটার এছাড়া আর উপায় নাই। আমিও মেয়ের মতই দেখতাম ওরে। থানার স্টাফদের মধ্যে অনেক রকম ঝামেলা চলে। আমার জন্য অন্যরা অনৈতিক কাজ করতে পারতনা বলে ওরা ষড়যন্ত্র করে এটা করছে, একরকম জোর করে ওরা আমাদের বিয়া পড়াই দিছে। ও আমার সাথে আসতে চায় নাই, আমিই জোর কইরা নিয়ে আসছি, না হলে ও আত্মহত্যা করত। এখন তুই বিষয়টা একটু স্বাভাবিক করে নে।
আমি আব্বার কথা বিশ্বাস করি। আব্বার সুনাম আছে ঘুষ না খাওয়া পুলিশ হিসেবে, ভালো মানুষ হিসেবেও। সবচে বেশি সুনাম করত আম্মা। সে আম্মাই এখন এমন একটা আঘাত পাইছে যে তার সব বিশ্বাস মূহর্তে চুরমার হয়া গেছে। বোনটারও, যার সবকিছু আব্বাময়। আমি আব্বারে বলি, আমি দেখতেছি বিষয়টা। ত সে রাতে না ঘুমায়া আমাদের সকাল হয়া যায়। আমি দাদীর রুমে ডুকে আব্বার নতুন বৌ’রে দেখি এবং অবাক হয়া যাই, কেন এত সুন্দর আব্বার নতুন বৌ! মাথা নীচু কইরা বইসা আছে। যেন একটা গোলাপ রাতে ঘুটায়া ছিল এখন আস্তে আস্তে পাপড়ি মেলতেছে। আমার আব্বারে হিংসা হইল। এবং আমাদের ঘরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হতে আমার হিংসা বাড়তে লাগলো। আব্বা তার কাজের জাগায় ফিরা গেলে দেখি মা আব্বার নতুন বৌ’রে কাছাকাছি রাখতেছেন, ডাকতেছেন। সন্ধ্যায় দেখা গেল আম্মা ডাক দিয়া আব্বার নতুন বৌ’রে বলতেছেন, ও রত্না কই গেছ? কয়টা আম কাইটা আন ত বা মুভ মলম নিয়া আসত কোমরের ব্যাথাটা যন্ত্রনা দিতেছে। নিলীমাও দেখি ছোটমা ছোটমা বইলা ন্যাকামি শুরু করছে। দাদীর ত পুতের বৌ। আব্বার নতুন বৌ’র ঘর এবং পরের এই মনজয় নিয়া মানুষজন বলতে শুরু করল যে এ মাইয়া জাদুটোনা জানে। সেটা আমি মাইনা নি যখন আমারেও বশ করতে করতে থাকে আব্বার নতুন বৌ।
ত মধু মাস শেষ হইতে থাকলে, আমার মাস মানে আষাঢ় মাস আসতে থাকলে আমি আব্বার সুন্দরী নতুন বৌ’র প্রতি এমন ভাবে নত হইতে থাকি যে আমার বিবেক বোধ তখন সব কিছুর বাইরে। এবং আমরা ভাবনা তখন শুধুই সে আব্বার নতুন বৌ বৈ কিছু নয়। আষাঢ়ের প্রথমদিনে বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতি জানান দিলে যে আমার নিয়মেই সবকিছু চলে এবং তুমি পিকলুও তার বাইরে নও। তখন আমার হাতে “আমারে মাপ করি দিয়েন” লেখা ছোট অথচ সহস্র জনম পড়ে শেষ করে যাবেনা লেখা কাগজটা স্থির হয়া থাকে আব্বার নতুন বৌ’র ঝুলে থাকা শরীরটা যখন মৃদু দুলতে থাকে টঙ্গী ন্যাশশনাল ফ্যানের সাথে
আমার এক বন্ধু সব সময় বলতেন দ্বিতীয় বিয়ে অর্থ বিষ লক্ষ্ণীর বড়ি। ভালো উপস্থাপনা্ বেশ ভালো লাগলো।
শুককরিয়া সফি ভাই।
দীলখুশ মিঞার পক্ষ থেকে লাল গোলাপের শুভেচ্ছা নিন।
হাই হ্যালো।
মেয়েটা কোন মতেই বাচতে পারলো না, আহা!
চমৎকার গল্প সহ আপমাকে পেয়ে বেশ আনন্দিত।
আপনার ভালো হোক।
আমারও দিলখোশ আপনাকে পেয়ে। ধন্যবাদ।
মাহাফুজুর রহমান। আমার অনেক প্রিয় একজন মানুষ।
তার লিখা প্রতিটি লিখা আমাকে মুগ্ধ করে।
শব্দনীড় এ স্বাগতম ভাই।
ধন্যবাদ জামান ভাই। আপনাদের হাতটা মাথার উপর আছে বইলাই অনুপ্রানিত হই।
শুভ সকাল প্রিয় মাহাফুজুর রহমান।
বিধি যার বাম তাহারে রুধিবে কে?
রূপের জ্বালা বড় জ্বালা, রূপের আগুনেই পুড়তে হলো শেষ পর্যন্ত!
বিধাতার এমন কিছু বিষয়ে বড়ই বিষ্মিত হই! কেন এমন হয়?
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ খালিদ ভাই।