রৌদ্রলিপিতে যে লিখে রাখ প্রেম ও প্রত্যাখ্যানের
গল্প, শীতের উদোম শরীরে তা যথেষ্ট মিথ্যের।
শিশিরের যতিচিহ্নগুলো টুপটাপ ঝরে গেলে,
উড়ে যায় অনিচ্ছার পাখি, দূরে ডানা মেলে।
সমস্তদিন ঘুরেফিরে ফিরেঘুরে পাতার
মত, ঝরে যাওয়ার দুঃখ নিয়ে ফিরে ফের।
মাহাফুজুর রহমান এর সকল পোস্ট
বৈরাগ্য
বৃষ্টির দিনে আমি মারা যাবো
আমার কবর ভরা পানি থাকবে
থৈ থৈ কবরে স্বজনেরা আমাকে
কবর নয় ভাসিয়ে দিয়ে যাবে
আমার কবর একটা নৌকা …
কবরের নৌকা বেয়ে আমি
চলে যাবো নিরুদ্দেশে
আমাকে পাবেনা আর তুমি
ও তোমরা কোন তুমুল বর্ষায়।
দুইটা ক্ষুধার্ত পানকৌড়ি
দুইটা ক্ষুধার্ত পানকৌড়ি
দুইটা পানকৌড়ি জলে
একবার ডুবতেছিল আবার ভাসতেছিল
তারা খেলতেছিল তারা মাছ খুঁজতেছিল
একটা পানকৌড়ি উড়ে গেল ঠৌঁটে একটা মাছ
পিছন পিছন আর পানকৌড়িটাও ছুটতেছিল
ঠোঁটে মাছ পানকৌড়িটা মাছটা ঠৌটে নিয়াই উড়তেছিল
অন্য পানকৌড়িটা মাছটা বা মাছের ভাগের জন্য উড়তেছিল
এভাবে তারা দীঘির সবুজ জলের উপর পাক খায়া ঘুরতেছিল
হঠাৎ মাছটা ছুটে যায় এবং পড়ে যায় জলে
একরাশ হতাশা নিয়া মাছ ধরা পানকৌড়িটা উড়ে বসে গাছের ডালে
মাছ ধরে নাই পানকৌড়িটা পড়ে যাওয়া মাছের পিছু নামে জলে
আমি ভাবতেছি কে বেশি ক্ষুধার্ত ছিল?
মাছ ধরা কানকৌড়িটা না মাছ না ধরা পানকৌড়িটা?
কিন্তু সত্য হলো ওরা কেউই মাছটা খেতে পারে নাই।
শিবরামপুরের বিকেল …
শিবরামপুরের বিকেল …
বিকেল নেমে গেছে প্রান্তরজুড়ে, তবু সোনালী
আভা মেখে রেখে গায়ে সবুজ বনানী, রুপালী
মেয়ে দেহ মেলে দিয়ে পড়ে আছে অলস!
দুলিতেছে বাতাসে কার হলুদ ওড়না, আড়ালে
রাখে সে কার মৃদুবুক, কে ধরে তারে হাত বাড়ালে
অনতিদূরে বসে এক একলা সারস!
সাদা ফুল ফুটে আছে শিমের লতায়, এই বিকেলে
পাড়ানি মেয়েটির দুঃখ বুঝার কেউ নেই দু’ কূলে
হেলেদুলে হেঁটে যায় কাঁকে ভরা কলস!
উড়ে পাখি শেষ পাক, নিয়ে সাথী ফিরে যাবে কুলে
কেশকুমারী তেল মেখে দেয় জা আর জা’র চুলে
হৃদয় দিয়ে বোঝে হৃদয়ের পরশ!
কার অভিশাপ কি দোষে কার কপালে ফলে
হাঁস খুঁজে পায়না নুরী, বসে ভাবে হাত দিয়ে গালে
কিভাবে চাইলে নড়ে খোদার আরশ!
স্বরবর্ণে সমর্পন
স্বরবর্ণে সমর্পন
অ
অকারনে তেড়ে আস কেন হাতে নিয়ে দা খুন্তি
বিশ্বাস করো আমি চিনি না কে হৈমন্তী।
আ
আমি বলি সোনা থামো, আর করোনা ঘ্যাণ ঘ্যান
জীবনবাবুর কসম, মুখে নেব না বনলতা সেন।
ই
ইচ্ছে হলেই আঁড়ি দাও মোরে, ফেলো চোখের বারী
রবীবাবু জানেন, কেউ ছিলনা আমার “কাদম্বরী”।
ঈ
ঈষান কোনে মেঘ জমিয়ে গুড়ুম গুড়ুম ডাকো
নীরা’কে সুনীল চেনে, আমি দেখেনিকো।
উ
উফ, আর পারিনা সইতে জ্বালা
আরো বাকী? কে এই কপিলা?
ঊ
ঊনিশটি লাল গোলাপ, শুধু তোমার জন্য
পারু’র মতো হেসে, মোরে করো ধন্য
ঋ
ঋষী নই জানো, তাই মাঝে মাঝে হয় ভুল
চোখে তাকিয়ে দেখ, তুমি ছাড়া নেই কোন ফুল
এ
এইতো এইতো আমার লক্ষী সোনা জানু
বুক ভরে যায় দেখি যখন ক্ষীরর রঙ্গা তোর তনু
ঐ
ঐ নদীটার কি নাম ছিল? আঁচলে সবুজ কাজ
আমার দৃষ্টি সৃষ্টি খোঁজে, খোঁজে নাকো ভাঁজ
ও
ওসব বুঝি, যেসব বায়না তোমার
বৃথাই যাচ্ছে সকল পূজো আমার
ঔ
ঔষধেও ঘুম আসেনা, তোমার গন্ধ খুঁজি
আমার চাইতে প্রিয় তোমার আয়নাখানি বুঝি?
তোমার জন্য শুভকামনা
তুমি খুব কষ্ট পাও, এমন কষ্ট….
তোমার কষ্ট দেখে কষ্ট ভুলে যাবে একা পাখিটি
দুপার ভাঙ্গা নদীর মত ভেঙ্গে যাক তোমার অন্তপুর
তুমি কাঁদো, তুমি কাঁদো
সুদীর্ঘ বর্ষার মত তোমার কান্না শেষে প্লাবন আসুক
চারপাশ থেকে বানের মত কষ্ট আসুক তোমার
আকাশের দিকে তাকালে তুমি মেঘ ধরে আসুক
বাতাসে এলে তুমি বাতাসে বাজুক বিরহী এস্রাজ
হঠাত ঝড়ে তুমি ঘর হারাও
আপন পর সব হারাও যেনো এক পাতা ভাসো জলে
তুমি পোড় তোমার মত অপার অনলে
হাত বাড়ালে তুমি ঝরে যাক ফুল
পা বাড়ালে বহুদূর দূরে যাক কূল
কষ্ট পেতে পেতে তুমি কষ্ট পেতে থাকো
একা হতে হতে তুমি একা হতে থাকো
বাসাহারা বাবুইয়ের মত হতাশ নয়নে….
চেয়ে থেকে থেকে তুমি হতাশায় ডুবো
কেউ নেই কোথাও তোমার এমন কষ্টে ভোগো
কেউ ছিল না কোন দিন এমন কষ্টে ভোগো
পাতাসব ঝরে যাক তাকালে তুমি
সবুজ চারপাশ জলহীন, জলহীন মরুভুমি
কষ্ট পেতে পেতে তুমি কান্না ভুলো
শুকোক তোমার নদী মুছে যাক কূলও
এভাবে এভাবে তোমার নাই হোব সব
এভাবে এভাবে তোমার কষ্ট তোমার
এভাবে শূণ্য শূণ্য সব শূণ্য তোমার
চোখ নেই ঘিরে তোমায় হাত নেই বাড়াবার
তখন, শূণ্যের ওপাশে দেখো অথৈ আঁধার
ওখানে রয়েছি আমি কত কত কাল
কত কত চেয়েছি তোমার এইদিন আসুক
এসে তুমি আর তোমার কষ্ট পাশে বসুক
তারপর তুমি আর আমি আর কষ্ট তোমার
আমাদের হবে একদিন, একদিন কোথাও হারাবার
গল্প: আব্বার নতুন বৌ
সে বছরের তখন ছিল মধুমাস। আমাদের আম কাঁঠালের গাছগুলাতে সে বছর এত বেশি ফলন হইছিল যে আম্মা শুধু বলত, কোন বিপদ আসে আল্লায় জানে, এত ফলন ত ভালোনা। আম্মার সে আশংকা একরাতে সত্যি হয়ে গেল যখন আব্বা তার ছেলের বয়েসি একটা বৌ নিয়া এসে বাড়িতে উপস্থিত হলেন। আামাদের তখন একেবারে ভ্যাবাচেকা অবস্থা। আকাশ ত নয় গোটা সৌরজগত ভেঙ্গে পড়ল ঘরের উপর। আম্মা শুরু করলেন কান্নাকাটি, ছোটবোন নিলীমা ত দা নিয়া বার কয়েক গলা কাটতে গেছে মেয়েটার মানে আব্বার নতুন বৌ’র। চাচী জেঠীরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালায়া যাইতেছেন। পাড়াময় লোকজন তখন আমাদের উঠানে। নানা কথা, শোরগোল, হইহুল্লোড় যেন একটা লংকাকান্ড। আব্বার এই কলিকান্ড কারোর বিশ্বাস হইতেছেনা কারো হইতেছে। কেউ বলতেছে, উহু আকবরের দ্বারা এটা কেমনে সম্ভব? কোন কিন্তু আছে। কেউ বলতেছে মতিভ্রম ভাই মতিভ্রম! নারীরা দাদীর রুমে যেখানে আব্বার নতুন বৌ আছে সেখানে ডুকতেছে বাইর হইতেছে। আর ধীরে ধীরে আব্বার নতুন বৌ’র রুপের কথা চাউর হইতেছে। তারা বলতেছে এমন রুপের মাইয়া দশগ্রামে নাই।
আমি তখন উদভ্রান্ত। রাত প্রায় শেষের দিকে আব্বা আমারে ডাক দিয়া বললেন তোর সাথে কথা আছে। আমি তখন আব্বার লাগানো কৃষ্ণচুড়া গাছটার নীচে গিয়া দাঁড়াই। আমি বুঝদার হবার পর থেকে দেখতেছি আব্বা আমার লগে বলা কথার সময় কেন জানি এই গাছটার নীচে চইলা আসেন। কথা বলতে বলতে গাছটার গায়ে এমনভাবে হাত বুলান যেন আদর করতেছেন। ত আব্বা বললেন, মেয়েটার মা আমার এবং থানার আরো স্টাফদের রান্না বান্না করত, মাস কয়েক আগে ওর মা মারা যাওয়ার পর মেয়েটা মা’র কাজ হাতে নিছে। বাপহারা মেয়েটার এছাড়া আর উপায় নাই। আমিও মেয়ের মতই দেখতাম ওরে। থানার স্টাফদের মধ্যে অনেক রকম ঝামেলা চলে। আমার জন্য অন্যরা অনৈতিক কাজ করতে পারতনা বলে ওরা ষড়যন্ত্র করে এটা করছে, একরকম জোর করে ওরা আমাদের বিয়া পড়াই দিছে। ও আমার সাথে আসতে চায় নাই, আমিই জোর কইরা নিয়ে আসছি, না হলে ও আত্মহত্যা করত। এখন তুই বিষয়টা একটু স্বাভাবিক করে নে।
আমি আব্বার কথা বিশ্বাস করি। আব্বার সুনাম আছে ঘুষ না খাওয়া পুলিশ হিসেবে, ভালো মানুষ হিসেবেও। সবচে বেশি সুনাম করত আম্মা। সে আম্মাই এখন এমন একটা আঘাত পাইছে যে তার সব বিশ্বাস মূহর্তে চুরমার হয়া গেছে। বোনটারও, যার সবকিছু আব্বাময়। আমি আব্বারে বলি, আমি দেখতেছি বিষয়টা। ত সে রাতে না ঘুমায়া আমাদের সকাল হয়া যায়। আমি দাদীর রুমে ডুকে আব্বার নতুন বৌ’রে দেখি এবং অবাক হয়া যাই, কেন এত সুন্দর আব্বার নতুন বৌ! মাথা নীচু কইরা বইসা আছে। যেন একটা গোলাপ রাতে ঘুটায়া ছিল এখন আস্তে আস্তে পাপড়ি মেলতেছে। আমার আব্বারে হিংসা হইল। এবং আমাদের ঘরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হতে আমার হিংসা বাড়তে লাগলো। আব্বা তার কাজের জাগায় ফিরা গেলে দেখি মা আব্বার নতুন বৌ’রে কাছাকাছি রাখতেছেন, ডাকতেছেন। সন্ধ্যায় দেখা গেল আম্মা ডাক দিয়া আব্বার নতুন বৌ’রে বলতেছেন, ও রত্না কই গেছ? কয়টা আম কাইটা আন ত বা মুভ মলম নিয়া আসত কোমরের ব্যাথাটা যন্ত্রনা দিতেছে। নিলীমাও দেখি ছোটমা ছোটমা বইলা ন্যাকামি শুরু করছে। দাদীর ত পুতের বৌ। আব্বার নতুন বৌ’র ঘর এবং পরের এই মনজয় নিয়া মানুষজন বলতে শুরু করল যে এ মাইয়া জাদুটোনা জানে। সেটা আমি মাইনা নি যখন আমারেও বশ করতে করতে থাকে আব্বার নতুন বৌ।
ত মধু মাস শেষ হইতে থাকলে, আমার মাস মানে আষাঢ় মাস আসতে থাকলে আমি আব্বার সুন্দরী নতুন বৌ’র প্রতি এমন ভাবে নত হইতে থাকি যে আমার বিবেক বোধ তখন সব কিছুর বাইরে। এবং আমরা ভাবনা তখন শুধুই সে আব্বার নতুন বৌ বৈ কিছু নয়। আষাঢ়ের প্রথমদিনে বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতি জানান দিলে যে আমার নিয়মেই সবকিছু চলে এবং তুমি পিকলুও তার বাইরে নও। তখন আমার হাতে “আমারে মাপ করি দিয়েন” লেখা ছোট অথচ সহস্র জনম পড়ে শেষ করে যাবেনা লেখা কাগজটা স্থির হয়া থাকে আব্বার নতুন বৌ’র ঝুলে থাকা শরীরটা যখন মৃদু দুলতে থাকে টঙ্গী ন্যাশশনাল ফ্যানের সাথে