ভ্যালেন্টাইন ডে

pink heart shape made of wood with forget-me-not flowers on a rustic wooden background copy space for your text
আজ বিশ্বখ্যাত “ভালবাসা বা Valentine” দিবস। ভালবাসার আবার দিবস কি? হ্যাঁ আছে, ভালবাসা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ভালবাসা সার্বজনীন এবং কোন একটা বিষেষ দিনে এই কথাটাই মনে করিয়ে দেয়া হয় আজ সেই দিন, এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। তবে এই দিবসের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক করুণ কাহিনী যা অনেকেই জেনে বা না জেনে দিনটা পালন করে আসছে। এখন বলছি এই দিনের আসল কাহিনী। বিলেতে থাকা কালীন নরউইচ শহরে একটা বিশাল “পাব” (পানশালা) এ কাজ করেছিলাম। তখন ওখানে একটা পুরনো বই থেকে এই তথ্য পেয়েছিলাম ওই বই পড়ে যা পেয়েছি তাই লিখছি।

১২৬৯ খ্রিস্টাব্দের সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাসু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস-২ এর সেনাবাহিনীতে সেনা সংকট দেখা দেয়। তার এক বিশাল সৈন্য বাহিনীর দরকার হয়। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি নয়। সম্রাট লক্ষ করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষেপে যায় এবং পুরো রাজ্য অসন্তোষ সৃষ্টি হলো।

এ সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক জনৈক যাজক সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশু প্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। তিনি গোপনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলেন; তিনি পরিচিতি পেলেন ‘ভালবাসার বন্ধু বা ‘Friend of Lovers’ নামে।
প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াছকে ভালো বেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোম বাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে তাকে রাজার নির্দেশ অমান্য করার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেয় এবং তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জেলে থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইনের সাথে পরিচয় হয় জেল রক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের সাথে। আস্ট্রেরিয়াস জানতো ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পর্কে। তিনি তাকে অনুরোধ করেন তার অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে। ভ্যালেন্টাইন তার আধ্যাত্মিক চিকিৎসার বলে মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এতে মেয়েটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে এবং একসময় তারা উভয়ের প্রেমে পড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা তার সাথে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা আর এই আধ্যাত্মিকতার সংবাদ শুনে সম্রাট তাকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান এবং তাকে রাজকার্যে সহযোগিতার জন্য বলেন। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না তোলায় সহযোগীতায় অস্বীকৃতি জানান।

এতে রাজা ক্ষুব্ধ হয়ে ১২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেন। মৃত্যু দন্ডের ঠিক আগের মূহুর্তে ভ্যালেন্টাইন কারা রক্ষীদের কাছে একটি কলম ও কাগজ চান। তিনি মেয়েটির কাছে একটি গোপন চিঠি লিখেন এবং শেষাংশে বিদায় সম্ভাষনে লেখেন ‘From your Valentine’ অতঃপর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১২৭০ খৃঃ ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সেই থেকে সারা বিশ্বে ‘বিশ্বভালবাসা দিবস’ পালন করা হয়।
b0cc2e091470d6c3b3cf96e41eb4fa9a
আসুন আমরা সবাই সবাইকে সারাদিন ভরে সারা বছর ভরে ভালবাসি, ভালবাসা ছাড়া যে এই মায়াময় পৃথিবী বিষাদময়। ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে ছোট্ট হলেও ভালবাসার জনকে কিছু উপহার দেই এবং ভালবাসার জন যা দেয় তাতেই যেন আনন্দ খুজে নেই।
ধন্যবাদ সবাইকে, সবার জন্য ভালবাসা!Rose 6

6 thoughts on “ভ্যালেন্টাইন ডে

  1. ‘আসুন আমরা সবাই সবাইকে সারাদিন ভরে সারা বছর ভরে ভালবাসি, ভালবাসা ছাড়া যে এই মায়াময় পৃথিবী বিষাদময়। ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে ছোট্ট হলেও ভালবাসার জনকে কিছু উপহার দেই এবং ভালবাসার জন যা দেয় তাতেই যেন আনন্দ খুজে নেই।’ https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. এই ঘটনাটা বিশদভাবে জানার ইচ্ছে ছিলো । এতো সুন্দর সহজ ভাবে লিখলেন । ভালো লাগলো খালিদ ভাই । শুভকামনা জানবেন ।

    1. যাক অন্তত একজনকে হলেও এই দিনের উতপত্তি জানাতে পেরেছি! ধন্যবাদ আপা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।