বেশ কিছুদিন ধরে একটা স্বপ্ন মাথায় ঘুর ঘুর করছে কিন্তু ঠিক গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারছি না। আচ্ছা, চার পায়ে হেটে বনে যারা বাস করে কিংবা ঘুরে বেড়ায় তাদের আমরা পশু বলি, তাই না? আর আমরা? আমরা হলাম ‘মানুষ’ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী! আমরা রকেট বানিয়ে চাঁদে যেতে পারি, উড়োজাহাজে করে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস যেতে পারি, টেস্ট টিউব বেবির জন্ম দিতে পারি, মানুষের দেহ কেটে রোগ সারাতে পারি, ঘরে বসে কিংবা রাস্তায় হাটতে হাটতে ঢাকা থেকে টোকিওতে কথা বলতে পারি, মগজ ধোলাই করে মনুষ্য নিধন কাজে লাগাতে পারি আবার ইচ্ছা করলে ২/৪ হাজার কোটি গরম টাকা আত্মসাৎ করতে পারি, ২০০ তলা দালান বানিয়ে স্বর্ণ বা হিরা মানিক মতি মুক্তা দিয়ে সাজিয়ে বসত করতে পারি। কী না পারি? আমরা সবই পারি।
আর একজন মানুষকে কেটে টুকরা টুকরা করে কিমা বানিয়ে মেরে ফেলে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখতে পারি, দুই টাকার জন্য জীবন্ত মানুষের গায়ের চামড়া তুলে লবণ মাখিয়ে ক্ষ্যাপা নৃত্য দেখতে পারি। প্রেমের আহবানে সাড়া না দিলে রাতের অন্ধকারের কোন প্রয়োজন নেই দিনের আলোতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলতে পারি আসলে আমাদের কোন জুরি নেই। এমন সময়ে কেও হাতের মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকে আবার কেও তামাশা দেখার জন্যে ভিড় করে। আমরা যা ইচ্ছা তাই করতেও পারি করাতেও পারি।
এত কিছু করার পরে ক্যামেরা হাতে আমাদের সাংবাদিক সাহেবরা ঘটা করে ছবি তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন খবরের কাগজে সংবাদ ছাপা হয় পাশবিক নির্যাতন! অতপর আহারে! উহ! আহ! এমনও করতে পারি।
কিন্তু ওই যে যাদের কথা বলছিলাম যারা বনে বসতি গেড়েছে। তারা কি নিতান্ত ক্ষুধার তাড়না ছাড়া এমন করে কাউকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে পারে? তাহলে আমরা “পাশবিক” শব্দটা কেন ব্যবহার করি? কেন বলি না মানবিক নির্যাতন! বনের ওই চার পেয়ে প্রাণীরা এ কথা যেদিন জানতে পারবে সেদিন কি ওরা আমাদের ক্ষমা করবে ভেবেছেন? সেদিন ওরা কি বলবে, মানবিক পশুত্ব না কী?
স্বপ্নের শেষটা আর দেখা হয় না।
আসলে পাশবিক নির্যাতন বলতে কিছু নাই। মানবিক নির্যাতন বলাই ভাল। মানুষ যত কিছিমের নির্যাতনী তরিকা জানে পশুর গায়ে ততগুলো পশম আছে কিনা গুণে দেখা যেতে পারে। তাছাড়া মানবিক নির্যাতনের কোন সীমা পরিসীমা থাকে না। মানুষ চাইলে এক বাটনের চাপেই মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মেরে ফেলতে পারে। এই ধরনের নজীর কিন্তু কোন পশুর নাই, তাদের সেই মেধাও নাই, বুদ্ধিও নাই, ক্ষমতাও নাই।
পাশবিক নির্যাতন কথাটার মধ্যদিয়ে মানুষের ক্ষমতাকে অস্বীকার করা হয়। তাই পাশবিক না বলে বলি মানবিক।
আবহমান ধরে চলে আসা রিতি এত সহজেই ভাঙ্গা যাবে আর মানুষের রূপে যারা যারা আছেন তারা কি আর মেনে নিবে ভাই?
স্বপ্নের শেষ আমাদের কখনও দেখা হবে না আর।
দেখা সূত্রে এভাবেই চলেছে; সম্ভবত এভাবেই চলবে। কিছু করার নেই।
পরিতাপের বিষয়!
সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।
আসলেই আজ মানবিকতা, পাশবিকতাকে হার মানায়।
প্রায়শই দেখা যায়, মানুষ পশু নয় বরং তারচেয়েও জগন্য আচরণ করে।
হ্যা ভাই পশুর চেয়েও আমরা এত নিচে কি করে নেমে গেলাম ভাবতে পারি না!
পশুদের ভাষা বুঝলে জানতেন ওরা আমদেরকে পশু বলে আর নিজেদের মানব বলে
…।
এমনিতেই অস্থির। ভাগ্য ভাল যে পশুদের ভাষা বুঝি না! তাহলেতো পাগল হয়ে যেতাম!

ভালো লিখেছেন
যারা এই সব নিয়ে ভাবেন কোন দিন দেখিনি তারা কাঠামো ভেংগে বাইরে গিয়ে স্রোতের বিপরিতে দারিয়েছেন।
ধন্যবাদ। স্রোতের বিপরীতে দাড়াতে যেমন মেরুদন্ডের প্রয়োজন আমাদের সবার তেমন মেরুদন্ড নেই তবে এমন করে ভাবতেও যার প্রয়োজন তা হলো একটি অনুভুতি সম্পন্ন মানসিকতা। ধীরে ধীরে সবার মানসিকার পরিবর্তন যদি এমনি হয় তাহলে আর স্রোতের বিরুদ্ধে যাবার দরকার হয় না।

আমরা এটাই আশা করি, মানুষের বিবেক জাগ্রত হোক।