কাল পরীর সমাধি-৫/৮

Ethiopia_water_9c6951765bee4d8b954366369e4b3c14

৯।
মালাইকা ভাবছে আতো কেন আসছে না। কবে আসবে? বলে গেল তাড়াতাড়িই আসবে কিন্তু একটা পূর্ণিমা চলে গেল এখনো কোন দেখা নেই! অবাক কাণ্ড! এদিকে এই অবস্থা চলছে সে কি কোন সংবাদ পায়নি! এখনও হয়ত এত দূরে এই সংবাদ পৌঁছায়নি। সংবাদ পেলে নিশ্চয় আসবে। আবেল না এসে পারবে না। ওকে আসতেই হবে। দরকার হলে দলবল নিয়েই আসবে। সারা গ্রামের অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতেই চলেছে। কি ভয়ংকর অবস্থা দাঁড়াবে কে জানে! না জানি কতজন মরে যাবে! আমার জন্য একটা গ্রামের শান্তি নষ্ট হবে? এত মানুষ মারা যাবে? কিন্তু আমিতো এমনটা চাই না! কি করব এখন? গ্রামের এই পরিস্থিতি কি করে শান্ত করা যায়? আবেল এলে ওর সাথে পরামর্শ করতে পারতাম কিন্তু ওকে জানাব কি করে? একদিকে বিরহ জ্বালা আবার এদিকে পারিবারিক এমনকি সমস্ত গ্রামের শান্তির প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় কি করা উচিত কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। বাবা কাজকর্ম ফেলে সারাদিন এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ী করছে। মা উত্তেজিত, চিন্তিত, নীরব কোন কথা বলে না মেজাজ খিটখিটে। গ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। প্রতিটি ঘরে অস্ত্র শস্ত্র শাণ দেয়া হচ্ছে, ধোয়া মুছা হচ্ছে, তীরে বিষ মাখান হচ্ছে। যে কোন সময় শুরু হবে ভয়ংকর একটা কিছু। কি করা যায়?

১০।
এদিকে যখন এমন অবস্থা চলছে যখন বুন্না চাষের সময় এসেছে তখন একদিন ওবি আবেলকে ডেকে বলল যা বুজিবাকে নেমন্তন্ন করে একেবারে সাথে নিয়ে আয়, পারবি?
কবে যাব?
কালই যা
আচ্ছা

আবেল আটনাগো যাবার সুযোগ খুঁজছিল। কতদিন হয়ে গেল মালাইকার সাথে দেখা হয় না কথা হয় না। কি ভাবছে সে? ওদিকে আবার বলে এসেছে আমি তাড়াতাড়িই আসব। বাবার কথা শুনে দেরি না করে কালই যাবার জন্য তৈরি হলো। সকালে তার প্রিয় গাধাটাকে ভাল করে খাবার পানি খাইয়ে মাকে বলে বের হলো। সারা পথে আবেলের মনের আনন্দ দেখে কে? আজ তার মিনার (প্রেমিকা) এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে! মনের সুখে গান ধরল। গাধাটা কেন আর একটু জোরে হাঁটছে না! মনে মনে অনেক স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় সেদিনের মত সময়েই আটনাগো গ্রামের সীমানায় পাহাড়ের উপরে এসে পৌছার আগেই কয়েকজন সশস্ত্র মানুষ মিলে দূর থেকে হাঁক দিয়ে আবেলকে থামাল। কাছে এলে নানা প্রশ্ন! কোথা থেকে এসেছে, কেন এসেছে, কোথায় যাবে এইরকম নানা প্রশ্ন। আবেল অবাক হলো, এর আগে যখন এসেছে তখন এমন কিছু হয়নি। তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে? নিশ্চয় এই গ্রামে কিছু ঘটতে যাচ্ছে। দাঙ্গা হাঙ্গামার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে! কিন্তু কি হয়েছে, কেন হচ্ছে? জানতে হবে। যারা পথ রোধ করেছিল তারা ওর জবাব শুনে কেমন করে যেন আশ্বস্ত হয়ে ওকে ছেড়ে দিল।
আবেল বুজিবার বাড়িতে পৌঁছে বাইরে থেকে হাঁক দিল
বুজিবা বাড়ি আছ?
মালাইকা উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিল, এই শব্দ এই কণ্ঠ শোনার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করে আছে । আহা কি মিষ্টি পৌরুষ ভরা গমগমে কণ্ঠ। কথা শুনেই মন ভরে উঠে। শোনার সাথে সাথে দৌড়ে বাইরে এসে দেখে গাধার রশি ধরে আবেল দাঁড়িয়ে। দুইজনেই হতবিহবল হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। কেউ কথা বলতে পারছে না। বেশ অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর মালাইকার সম্বিত ফিরে এলো।
তুমি কোথায় ছিলে আবেল? এত দেরি করে কেন আসলে? কেন আরও আগে আসলে না? জান এদিকে কি সব হচ্ছে?
কি হচ্ছে? আমি পথে কিছুটা অনুমান করেছি। ওরা আমার পথ আটকে নানা জিজ্ঞাসাবাদ করে তবে আমাকে এ গ্রামে ঢুকতে দিয়েছে। কি হয়েছে বল
মালাইকা আবেলকে নিয়ে ভিতরে এসে মাকে জানিয়ে ওকে বসতে দিয়ে বলে গেল বস আমি আসছি।
একটু পরে কিছু ফলমূল আর বুন্না এনে আবেলের সামনে টুলে নামিয়ে রেখে এদিক ওদিক দেখে শুরু থেকে আজ অবধি যা যা ঘটেছে এবং গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিস্তারিত জানাল। এবার একটু থেমে ফিসফিস করে এ ব্যাপারে সে নিজে কি ভাবছে তাও বলল।
শুনে আবেল স্তম্ভিত হয়ে গেল।
বল কি? এমন দুঃসময়ে আমাকে একটু খবর দিতে পারলে না?
অত দূরে কাকে দিয়ে খবর দেই বল!
তুমি বুজিবাকে আমার কথা বলনি?
আগে বলিনি পরে বলেছি
আগে বলনি কেন?
ভাবছিলাম তুমিইতো আসছ তাই
বুজিবা আমার বাবার বন্ধু সে এ সংবাদ জানলেই আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে আসতাম। আমার মিনারকে ছিনিয়ে নেয় এমন সাধ্য কার? এই তল্লাটে এমন কেউ নেই। আমি এখুনি বাড়ি যাচ্ছি এবং আমার পুরো গ্রাম নিয়ে আসছি তুমি বুজিবাকে একটু অপেক্ষা করতে বলবে।
বলেই উত্তেজিত ভাবে উঠে দাঁড়াল। মালাইকা আবেলের হাত চেপে ধরে আবার বসিয়ে দিয়ে বলল
না না তুমি ভুলেও এই কাজ করতে যেও না। কি বললাম তোমাকে? বুঝনি? মাথা গরম করছ কেন?
না না মালাইকা তুমি যা বলছ তা হতে পারে না, ওদেরকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে। ওরা জানে না কার মিনারের দিকে চোখ তুলেছে!
মালাইকা অনেক কষ্টে আবেলকে থামাল।
একটু শান্ত হলে মালাইকা আবার জিজ্ঞেস করল
আমি যা বলেছি তুমি কি বুঝতে পেরেছ?
বুঝেছি কিন্তু আমার মন মানছে না যে!
কেন মন মানছে না? মনকে যে মানাতেই হবে! তুমি কি চাও আমাদের জন্য এত বড় ক্ষতি হোক?
আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না মালাইকা, তুমি কেন ওদের উচিত শিক্ষা দিতে নিষেধ করছ!
বললামতো, আমাদের জন্য এত বড় অশান্তি হবে, কত মানুষ মরে যাবে এই কি তুমি চাও? তার চেয়ে আমরা যদি এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাই তাহলে এর কিছুই হবে না। আবার ওদিকে আমরাও সুখেই থাকব। এটাই কি ভাল হয় না?
সে তো ভাল হয় কিন্তু ওদের একটা শিক্ষা দিতে হবে না?
শিক্ষা দিয়ে কি লাভ হবে?
বেশ তুমি যদি না চাও তাহলে হবে না, তুমি যা বলবে তাই হবে। এখন বল কিভাবে কি করতে হবে।
মালাইকা এদিক ওদিক দেখে আবেলের একটু কাছে এসে ফিসফিস করে যা বলল
সামনের পূর্ণিমার রাতে আমরা পালাব। তুমি ঠিক মাঝ রাতে দেদেসা পার হয়ে বনের পথ ধরে কোসি গ্রামে এসে থাকবে আর আমি সন্ধ্যার পর সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরলে এখান থেকে বের হয়ে কোসি পৌঁছব। ওখানে তোমাদের গ্রামের যে পথ বনের মধ্যে দিয়ে এসে কোসি পৌঁছেছে সেখানে আমরা মিলিত হয়ে পরে নিকেমতা যেয়ে আমার মামার বাড়ি উঠবো। শুনেছি নিকেমতা অনেক বড় শহর কাজেই এরা কেউ জানবে না আমরা কোথায় আছি।
পূর্ণিমা রাতে কি করে পালাবে? সে রাতে কেউ দেখে ফেলবে না?
আমাদের গ্রামের খবর আমি ভালই জানি, তাছাড়া এখন এখানে সে পরিস্থিতি নেই, আর থাকলেও কোথা দিয়ে পালাতে হবে কোন পথে গ্রামের বাইরে যেতে হবে সে আমার ভাল চেনা আছে তোমাকে এ নিয়ে মোটেই ভাবতে হবে না।
আচ্ছা ঠিক আছে, তারপর?
তারপর আবার কি?
ওখানে আমরা কি করব?
মামার কোন ছেলে মেয়ে নেই ইচ্ছে হলে ওখানেই থাকব কিংবা পরে যদি তোমার ভাল না লাগে তাহলে আমরা আরযোতেও ফিরে আসতে পারি তবে এখানে আর নয়।
খারাপ বলনি। তাহলে আমি বাড়ি ফিরে যাই। আর মাত্র দুই রাত পরেই পূর্ণিমা।
এবারে এখানে কেন এসেছে সে কথা বলে বলল তুমি বুজিবাকে বলবে আমি কেন এসেছিলাম এবং কখনও দরকার হলে বাবাকে খবর দিতে যেন ভুলে না যায় সে কথা মনে করিয়ে দিও।
সে যা বলার আমি বলব এ নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। [চলবে]

24 thoughts on “কাল পরীর সমাধি-৫/৮

  1. আমি আগেও বলেছি অপরিচিত অথচ কল্পিত এই সমাজ চিত্রের অনন্য এই কাহিনী যে কোন পাঠককে ভাবনার গভীরে নিয়ে যায় অথবা যাবে। আমার বিশ্বাস থেকে বললাম।

    চেরি ফল শুভেচ্ছা প্রিয় বন্ধু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. নেন, মালাইকার বাড়ির পিছনের গাছ থিকাই আইনা দিলাম!
      বাড়ির সামনের রাস্তায় বাবলা গাছের নিচ দিয়া গাধার পিঠে মাল নিয়া যাইতেছে।

      1. অনেক দূরের জিনিস। দেরি কৈরা লাভ নাই। চিয়ার্স। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gif

      2. আহ! সাথে সাথে জুস বানাইলেন? বাহ! দেখেন দারুণ মজার জিনিষ।
        নেন আর এক গ্লাস, এইডা আমাগো বাড়ির!

      3. আহা !! কী প্রয়োজন ছিলো আবার। জুসাররে কষ্ট দিলেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Razz.gif.gif

      4. না না তেমন কিছু না, এই সামান্য আপ্যায়ন আরকি!

      5. চৈত্র মাসের ২৫ তারিখ আইজ। সংক্রান্তির খাবার রাইখা গেলাম।
        ইজি রেসিপির মোক্ষম রেসিপি চাই জা্নাইয়া দিয়েন।
        অখন ঘুমাইতে গেলাম। ধইন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gif

      6. আইচ্ছা জনাব বৈশাখী খানা খাদ্য তুইলা রাখুম।
        মোক্ষম রেসিপি মানে কি আরশোলার ভর্তা? নাকি ইন্দুরের গ্রিল? মানে চাইনিজ রেসিপি আরকি! কোনডা দিতে কমু?

      7. এইরাম ভিন্ন স্বাদের … মাংসের দো-পিঁয়াজি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Trumpet.gif.gif

        … লগে দেশী স্বাদে চিকেন টিক্কা রোস্ট। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_yahoo.gif
        আর নিচের ইঁচা মাছেরটা আপাতত লাগবো না। :)

  2. দাদু, তোমার লিখায় সতত বিরাজ করে স্বচ্ছতা। লেখাগুলি অতুল হয়ে থাক এই দোয়া করি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

  3. গল্পটা পড়তে পড়তে শিউড়ে উঠতে হয়। লেখক আর একটু চেষ্টা করলে এদের মিলন ঘটাতে পারতেন।
    তবে একটা ভিন্ন দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে এই গল্পে। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

    1. আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে এমনটা অহরহ ঘটে থাকে, এখনও ঘটে তবে বর্তমানে অনেকটা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে তবুও……………………।

  4. এই কাহিনী একটা শ্বাশত প্রমের কাহিনী। বাংলা সাহিত্যে পাকা আসন করে নেবে এই গল্প। ধ্রুপদী সাহিত্যের স্বাদ পাই এখানে।

    অনেক কষ্ট করে লিখেছেন, তাই মধু খান,

    1. তবে মৌমছি থেকে সাবধান, নইলে কয়েকদিন একটু ঝামেলা হইতে পারে।

    2. এই কাহিনী একটা শ্বাশত প্রমের কাহিনী। বাংলা সাহিত্যে পাকা আসন করে নেবে এই গল্প। ধ্রুপদী সাহিত্যের স্বাদ পাই এখানে।
      অত্যন্ত আপ্লুত হইলাম আনু ভাই কিন্তু কবে হবে? আমি মরে গেলে!
      হ্যা একথা সঠিক যে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে এই কাহিনী লিখতে। চেষ্টা করেছি নিজেকে ওই পরিবেশে মিশিয়ে দিতে।
      মধুর জন্য ধন্যবাদ। মধু খেতে গেলে মৌমাছির হুলের যন্ত্রণা সইতে হবে বৈকি!

  5. পরীকে আপনি মেরেই ফেলবেন … কয়েক দিন আগে একটা ইংরেজী ছবি দেখেছিলাম । খুব জনপ্রিয় একজন লেখকের জনপ্রিয় চরিত্রকে মেরে ফেলা নিয়া কাহিনী । অনেক পুরনো ছবি । টিভিতে দেখেছি …

    1. ধন্যবাদ মিতা ভাই। আপনিতো শেষ অবধি পড়েননি, কি করে জানলেন পরী মরে যাবে? এই সামান্য আমার সাথে জনপ্রিয় ইংরেজি ছবির তুলনা করলেন! পাঠকের স্বিকৃতীই আমার সৌভাগ্য।
      গল্পটা লেখা যেদিন শেষ হলো তারপর প্রায় এক সপ্তাহ আমি আবেল আর মালাইকার আবহে খুবই কষ্টে দিন কাটিয়েছি।
      https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif.gif

      1. ঘটনা প্রবাহ যেন মনের পদায় ভেসে উঠছে….
        লিখা সাবলিল সুন্দর…
        মিলনে শেষ হবে ভেবেছিলাম…
        (আগে একবার পড়েছিলাম মনে হচ্ছে)

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।