১৪।
ভোরে ওবি আর রামলা ঘুম ভেঙ্গে বাইরে এসে আবেলকে ডাকাডাকি করেও কোন সারা না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখে দরজা খোলা এবং আবেল ঘরে নেই। ভাবল হয়ত আশেপাশেই কোথাও আছে। কিন্তু বেলা বাড়ছে অথচ আবেলের কোন দেখা নেই তখন ভাবল কি ব্যাপার আবেলের কি হলো কোথায় গেল? কখনও এমন হয় না। এর মধ্যে গ্রামের একজন ঘাটের দিক থেকে ওদের বাড়ির কাছে দিয়ে যাবার সময় ওবিকে ডেকে বলল
ভেলাটা নিয়ে ওপাড়ে গেল কে?
কেন, কি হয়েছে?
ভেলাটা দেখলাম ওপাড়ে রয়েছে!
ওপাড়ে কে যাবে! কই আমাকে কেও কিছু বলেনি তো কে গেছে? তবে আবেলকে খুঁজে পাচ্ছি না!
তাহলে কি আবেল গেছে নাকি?
কি জানি আবেলের ওপাড়ে কি কাজ থাকতে পারে, ও একা কেন ওখানে যাবে?
আবেলের মা অস্থির হয়ে বলল
দেখ খুঁজে দেখ আমার মনে হয় আবেলই ওপাড়ে গেছে
আগন্তুক একটু উপযাচক হয়েই বলল
আমার মনে হয় সবাই মিলে একবার খুঁজে দেখলে হয় না? কেওতো নিশ্চয় গেছে কিন্তু কে গেছে আমরা জানতে পারছি না কাজেই একবার দেখি, আমি যাই সবাইকে ডেকে আনি। কি বল ওবি?
যাবে?
নিজের ছেলের কথা ভেবে বলল
চল তাহলে দেখি কি ব্যাপার!
মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত গ্রাম জড় হয়ে গেল। সবার সাথে নানা রকম অস্ত্র, মশাল এবং যা যা নিয়ে বনে যেতে হয় সব কিছু নিয়ে ওবির বাড়ির পাশে হাজির।
চল সবাই নদীর ঘাটে চল
এর মধ্যেই একজন সাতরে যেয়ে ওপাড় থেকে ভেলাটা নিয়ে এসেছে।
ভেলায় করে নদী পার হয়ে হৈ হৈ করে হাঁক ডাক ছেড়ে মন্ত্র আওড়াতে আওড়াতে এগিয়ে চলল। বনের ডালপালা লতাপাতার এলোমেলো ভাব দেখে ওরা বুঝে নিল কেও একজন খানিক আগে এই পথে গেছে। সন্দেহ দূর হলো। কেও বনে এসেছে কিন্তু কেন এবং কোথায়? দিনের আলোতে ভাঙ্গা ডালপালা আর ছেড়া লতাপাতার চিহ্ন ধরে দল এগিয়ে চলছে। বনের পথ শেষ হলো, এবার পায়ের ছাপ খুজে পেল। পায়ের ছাপ দেখে দেখে টিলার উঁচু নিচু পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময় সেই গাছটার কাছে এসে পায়ের ছাপ থেমে গেল। পায়ের ছাপ এখানে ইতস্তত ছড়ানো রয়েছে সম্ভবত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। গাছটার নিচেই বেশী ছাপ। গাছের উপরে দেখল, না গাছে ওঠার কোন চিহ্ন নেই। পথের বাইরে আশে পাশে ছোট দুর্বা ঘাস, এখানে বুঝতেই পারছে না এর পরে পায়ের ছাপ কোন দিকে গেল। ওবির সিদ্ধান্তে ওরা সামনেই এগিয়ে যাবার পথ ধরল। বেশ অনেকটা পথ পেরিয়ে ওই জলাভূমি পার হয়ে একটু এগিয়ে সামনে দেখল পথের উলটা দিক থেকে একটা কিছু টেনে নেয়ার দাগ এসে ডান দিকে গেছে, মাঝে মাঝে তাজা রক্ত। এই চিহ্ন ধরেই পথ ছেড়ে ডান দিকে এগিয়ে গেল দলটা।
পথ ছেড়ে একটু এগিয়ে সামনের টিলার উপরে উঠে দেখল পরের টিলার উপরে বেশ কয়েকটা ছোট বড় গাছের নিচে পাঁচ ছয়টা সিংহ বসে আছে। ওদের হৈ চৈ শুনে প্রায় সবাই উঠে দাঁড়াল। সিংহের স্বভাব সুলভ গম্ভীরতা নিয়ে এদিকে তাকিয়ে দেখছে। কয়েক জনে তীরের মাথায় বাধা ঘাসের গোলায় আগুন ধরিয়ে ধনুক দিয়ে ওদের দিকে ছুড়ে মারল। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই তীর ছোড়া হলো, দুই একটা সিংহের গায়েও লেগেছে। এতে কাজ হয়েছে। একে একে প্রায় সবাই ওই দিকে চলে গেল। ওবির দল এগিয়ে কাছে গিয়ে দেখে একটা ছেলের উপরে একটা মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে। ছেলেটার পিঠ থেকে নিচের অংশ প্রায় খেয়ে ফেলেছে। ছেলেটার রক্ত মাখা মুখ দেখে চিনতে পারল আবেল। কিন্তু মেয়েটা কে? দুইজনে মিলে রক্তাক্ত মেয়েটাকে ধরে দেখল এখনও শরীর গরম, বুঝল মেয়েটা এখনও জীবিত। কোলে তুলে দেখল বুকের এক পাশে হাড় দেখা যাচ্ছে, জিজ্ঞেস করল তুমি কে? ক্ষীণ কণ্ঠে বলতে পারল আমি মালাইকা আমার আবেলকে দেখেছ?
এই ঘটনার কয়েকদিন পরে কোসি থেকে একদল লোক আরযো এসেছিল তারা জানাল পথে একটা সিংহ মরে পরে রয়েছে তার মুখের ভিতরে সম্ভবত একটা ছুরি।
এতদিন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আবার দেখা হবে বন্ধু ভিন্ন কোন আয়োজনে। এতক্ষণ সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন!
মালাইকার জন্য আমাদের সকলের শুভকামনা রইলো।
এক জীবন মানুষকে যতোটা দেয় তারচেয়ে অনেকটা বেশিই বুঝি ছিনিয়ে নেয়।
সার্থক বড় গল্প বা উপন্যাস উপহারের জন্য ধন্যবাদ বন্ধু। ভালো থাকবেন।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু।
জীবন মানুষকে যেমন দেয় তেমনি ছিনিয়েও নেয় কিছু।
মালাইকা আর আবেলকে ছিনয়ে নিলেও আবার দুইজনকে এক সাথেই সমাধীস্থ করেছে। এটাই বুঝি জীবনচক্র!
দুঃখজনক পরিণতি।
মর্মান্তিক সমাধি। এমন সমাধি কল্পনাও করা যায় না, সেই মিলন হলো কিন্তু জীবনে নয় হলো সমাধিতে।
কি করব বলুন। অদের নিয়তিই যে এমন ছিল!
এই গল্পের একটা রিভিউ করা যায় কি ভাবছি।
সময়!
আহা অবসর সময়।
এটা কি কোন বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে?
হ্যা নিচের এই “ষঢ়ঋতু” বইতে প্রকাশিত!

রিভিউ লেখতে লেখতে এই চেহাড়া হইলে কিন্তু আমি কোন দায় নিতে পারিব না, আগেই বলিয়া দিলাম!

তা হলে থাক।
কি হইল, ডরাইলেন নাকি?
সমাধি চিত্র করুণ, বড্ড নিদারুণ। তোমার কলমে চিত্রাঙ্কন শৈলীও অসাধারণ। দাদু চালাও। দোয়া তো র’লো।
শকরান! শোকরান!

জীবনের রঙ্গমঞ্চে কত রকম ঘটনাই না ঘটে…….
সব কি আর খাতা কলমে ফুটে উঠে ….
লিখায় পারদশিতা দেখিয়েছেন
কারও জীবনের সাথে কারো জীবনপ্রবাহের সাথে বিশেষ কোন মিল নেই যদিও আমরা সবাই একই বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে বাস করি।
গল্প সুন্দর। অনেক বেশি সুন্দর।
গল্প সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি এখানে আমি ধ্রুপদী স্বাদ পাই।
গল্প শুরু করে যখন শেষ করি তখন মনটা করুন রসে ভরে উঠে। নায়ক নায়িকার দুঃখে আমরা শরিক হয়ে যাই। তেমনি দেখি তাদের বীরত্ব। সব চেয়ে আনন্দের বিষয় হল সেই সূদুর কোন মহাদেশের গল্প লেখক আমাদের শোনাচ্ছেন কিন্তু কোথাও মনে হবে না এই গল্পে কোন কিছুই আছে যা আরোপিত। সবই জীবন্ত। পুরোপুরি সার্থক এক গল্প।
ধন্যবাদ আনু ভাই!
আপনাদের ভাল লাগাতেই আমার আনন্দ।