অণুগল্পঃ ঈশ্বরকন্যা

তিনি চায়ের কাপটা হাতে নিয়েছেন মাত্র; মন্ত্রী মহোদয় কক্ষে প্রবেশ করলেন। আগুন্তক খুব সংক্ষেপে তার পরিচয় দিলেন।

-একটা এ্যাপিল নিয়ে এসেছি ইয়োর এক্সেলেন্সি, আমপাতি যাবো
-কেন জনাব?
-এক মহিয়সী থাকেন; তাঁকে সালাম জানাতে।

একাত্তুরের শরণার্থীদেরকে যখন কেউ আশ্রয় দিতে সাহস পাচ্ছিলোনা; স্বয়ং ঈশ্বর যেন তার কন্যাকে দনু নদির পাড়ে পাঠালেন।

মায়াবী দনু নদি;
মেঘালয়;
সাং আমপাতি।

আগুন্তক নিজ থেকে এসব বলে যাচ্ছিলেন।

ছয় বছরের শিশু পুত্রকে বুক থেকে একপাশে সরিয়ে রেখে সেখানে প্রায় অর্ধ লক্ষ বাংলাদেশী শরণার্থীর জন্য তিনি জায়গা করে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন সকল শরণার্থীর জন্য খাবারের আয়োজন করতেন। একসাথে সেই খাবার খেয়ে তিনি সারাক্ষণ তাদেরই একজন হয়ে থাকতেন।

আগুন্তকের কথা মন্ত্রী নিরবে শুনছিলেন। তিনি কক্ষ থেকে অন্য সবাইকে চলে যেতে বললেন।

কলেরা মহামারীতে যখন দনুপাড় সয়লাব তখন তিনি ফ্লোরেন্স নাইটেংগল হলেন। সেই মহামারীতে প্রায় তিন হাজার শরণার্থী মৃত্যু বরণ করে। ইয়োর এক্সেলেন্সি আপনি নিশ্চয়ই জানেন, সেই দিনগুলিতে কলেরার আরেক নাম ছিল যমদূত । নিজের জীবন বিপন্ন করে তিনি সেই যমের সাথে লড়েছিলেন।

আমি তাঁকে দেখতে যেতে চাই।

-তাঁর নাম তো রওশন আরা সাংমা
মন্ত্রী বললেন।

-প্রযত্নে ঈশ্বর
আগুন্তক যোগ করলেন।

-মা তো ঈশ্বরের কাছে ফিরে গেছেন !

কথাটা বলে মন্ত্রী জানালা দিয়ে মেঘালয়ের আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন;

পিন পতন নিরবতা!

আগুন্তক চোখ খুললেন; কক্ষটা শূণ্য!
কোথাও কেউ নেই; কেবল একজন ছয় বছরের শিশু এবং চারচোখ দনু নদি ছাড়া !

6 thoughts on “অণুগল্পঃ ঈশ্বরকন্যা

  1. লিখাটায় ভীষণ সাসপেন্স জড়িয়ে দিয়েছেন। সাধারণ পাঠকের বোধগম্যের বাইরে থাকবার সম্ভাবনা প্রচুর। তারপরও আপনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ মি. মিড ডে।

    1. দারুণ বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য মিঃ মুরুব্বি।

      অণুগল্প মেদহীন রাখতে পছন্দ করি। এজন্যই হয়তো গল্পটা দুর্বোধ্য হয়ে গেছে যা নিঃসন্দেহে আমার দুর্বলতা। 

      খুব দামি মন্তব্য করেছেন। ভীষণ খুশি হয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।

  2. রূপক গোত্রীয় লিখা কিনা জানি না। অনুগ্রহ করে জানবেন মিড দা। অপেক্ষা …

    1. গল্পটার নাম এবং মূল চরিত্রের রুপায়ন –এসবের কারণে আপনার প্রশ্নটা খুব প্রাসঙ্গিক।

      এটা একটা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে।

      অণুগল্পের বহুস্বরতা আমার কাছে খুব দামি। দনু পাড়ের ইতিহাস পাঠক জানুক বা না জানুক গল্পটায় তারা বহুস্বর খুঁজে পাক সেটা আমি চেয়েছি। কিন্তু এমন একটা বিষয়ে সেটা করা আমার জন্য বেশ জটিল ছিল।  

      আমার মনের গভীরে রওশন আরা সাংমার জন্য যে সম্মানবোধ, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে তাঁকে অনেক উচ্চতায় দেখার জন্য আমার যে আকাংখা সেটার জন্যই হয়তো ইভেঞ্চুয়ালি তাঁকে আমি ঈশ্বর হিসেবে উপস্থাপন করেছি। সেই বিবেচনায় আপনি যা বলেছেন তাইই।

  3. আগুন্তক চোখ খুললেন; কক্ষটা শূণ্য!
    কোথাও কেউ নেই; কেবল একজন ছয় বছরের শিশু এবং চারচোখ দনু নদি ছাড়া !

     

    * রূপকের আড়ালে বস্তুধর্মীতা আপনার লেখায় বেশ মানায়…

    ভালো থাকুন নিরন্তর।

    1. আপনার মন্তব্যে মুগ্ধ কবি।

      অশেষ ধন্যবাদ কমপ্লিমেন্টের জন্য।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।