দরজার অন্যপাশ থেকে জাভেদ এমন মুগ্ধতা নিয়ে তাকালো যে টুনির চোখ ভিজে এলো। এন্ড্রোপজ, মেনোপজের বয়স দুজনেরই। এমন বয়সে কী এতো ভালোবাসা হয়? প্রশ্নটা অবশ্য সে বেশ কবার করেছে। প্রতিবারই জাভেদের এক জবাব, “চোখে অন্তরের আলো ফেলে আমি তোমাকে দেখি; এই দুনিয়ার কোন কিছুই আমি তোমারচে সুন্দর দেখিনা!”
ঘরে প্রবেশ করে জাভেদ ডাইনিং এ বসলো। বিকেল চারটায় স্কুল শেষ করে পরপর তিনটা বাড়িতে সে টিউশনি করেছে। নন-এমপিও ভুক্ত স্কুলের শিক্ষক; টিউশনি করেই যেটুকু হয়। বউ এর শুকনা মুখ দেখে সে বিষন্ন হলো। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। এতো অনটন; কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনদিন সে বাকিতে কিছু নেয়না। জাভেদ বুক ফুলিয়ে বলে, “আমার টুনি আছে; আমি কেন মানুষের কাছে অবনত হবো”?
বাজারের ব্যাগ হাতে জাভেদ বের হয়ে গেল। পকেটে মাত্র কুড়ি টাকার একটা নোট। আজ অক্টোবরের ২৮ তারিখ; অথচ সেপ্টেম্বরের বেতনও কেউ দেয়নি। জাভেদ ভাবলো, আজ সে নিজ থেকে চাইবে। তাই প্রথমে স্টুডেন্টদের বাড়ি গেলো। তাদের কেউ একজন যদি টিউশন ফি দেয় তা দিয়ে বাজার করবে। পারলে অল্প কিছু পোলাও এর চাল, সব্জি এবং একটা ব্রয়লারের মুরগি। টুনির ঠান্ডা লেগেছে; কাল রাতে সে ভালো করে নিঃশ্বাস নিতে পারেনাই। ঘরে তার ব্লাড প্রেসারের ওষুধও নাই। ওদিকে এক সপ্তাহ আগেই টুনি বলেছিল, ২৯ অক্টোবরে কিছু ভালো মন্দ রান্না করবে। দিনটা বিশেষ কিনা!
পর পর চারজন স্টুডেন্টের বাড়িতে জাভেদ কোন সাড়া পেলোনা। সে আরো বিষন্ন হলো। আর চেষ্টা না করে বাজারে একটা চক্কর দিয়ে সে বাড়ি ফিরে গেলো।
জাভেদের হাতে খালি ব্যাগ। কিন্তু তার বুক পকেটে টুনির জন্য সদাই; সান্দারপল্লী থেকে পনের টাকায় কেনা এক পাতা লাল টিপ।
আজ চুলা জ্বলবেনা। কিন্তু সেদিকে টুনির তেমন ভ্রুক্ষেপ নাই। কারণ তার সম্মুখে দন্ডায়মান এক মহারাজের বুকে এক কোটি লাল সূর্য জ্বল জ্বল করছে। পনের টাকার মহারাজারা দেবতার চে শক্তিশালী হয়!
চায়ের সাথে ওরা শুকনো মুড়ি খেলো। রাত একটু গভীর হতেই টুনি ঠোঁটের কোণে হাসি মেখে বললো, “রাত একটু বাড়লেই ২৯ তারিখ হবে। চলো বাইরে যাই।“ কপালের কাঁচাপাকা চুল সরাতে গিয়ে জাভেদ দেখলো, টুনির অনেক জ্বর। একটু বিস্ময় নিয়ে সে জানতে চাইলো, “কোথায় যাবে”?
“নদীর নির্জন চরে। তোমার সুবর্ণ দিনে আমি মধ্যরাতের সূর্যে পুড়বো”;
টুনি জবাব দিলো।
আহা টুনি !! কী ভারী মিষ্টি।
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ!
এন্ড্রোপজ মেনোপজে সম্ভবত দুটি শব্দ। আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে স্বল্প শব্দের মধ্যে মধ্যবিত্ত একটি জীবনের ছায়াছবি। অসাধারণ ডেজারট ভাই।
ঠিক বলেছেন। দুটি ভিন্ন শব্দ; যথাক্রমে পুরুষ ও মহিলাদের হরমোনাল কন্ডিশন।
আপনার মন্তব্যে খুব আনন্দিত হয়েছি কবি। অশেষ ধন্যবাদ!
জাভেদ লাল টি এবং টুনি … তিনটি ফ্যাক্টর। প্লট সাধারণ তবু যেন অসাধারণ।
অভিনন্দন মি. মিড ডে। শুভ সন্ধ্যা।
অল্প কথায় গভীর পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করেছেন। ভীষণ আনন্দিত হয়েছি।
অশেষ ধন্যবাদ মিঃ মুরুব্বী!
“চোখে অন্তরের আলো ফেলে আমি তোমাকে দেখি; এই দুনিয়ার কোন কিছুই আমি তোমারচে সুন্দর দেখিনা!”
* অসাধারণ…


অশেষ ধন্যবাদ কবি!
নরওয়ে'র মিড নাইট সান, মধ্যরাতের সূর্যের স্বল্প স্থায়িত্বেই গল্পটির আকুলতা প্রবল।
লাল টিপ যদি মাঝরাতে প্রিয়ায় কপালে হয়ে যায় মধ্য রাতের সুর্য- সে খারাপ কি।
চমৎকার লেগেছে মিড ডে ডেজারট।
শুভেচ্ছান্তে
মন্তব্যে মুগ্ধ হয়েছি জাহিদ অনিক।
অশেষ ধন্যবাদ !