গন্তব্য

অদ্ভুত চেহারার এক লোক এগিয়ে এসে বললো,
“সামনে গেলেই রেলস্টেশন; ওইখানে কিছু না কিছু পাইয়া যাবেন!”
ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিট হাঁটলাম;
দেখি স্টেশনে এক বৃদ্ধ ট্রেনচালক পায়ে পা তুলে বেকার বসে আছে।
তাকে বললাম,
“এই ট্রেন, যাবে?”
“কোথায়?”
“অন্তরপুর জংশন।”
সে কিছুক্ষণ মাথা চুলকালো এবং একটু কেশে নিয়ে বললো,
“সোয়া তিন আনা ভাড়া”।
বিরক্ত হয়ে বললাম,‘তিনে না পোষালে চার আনা নাও;
সোয়া তিন কই পাবো বলো?”
আমার কথা শুনে একটা লালদালান থেকে চিৎকার করতে করতে
স্টেশন মাস্টার বের হয়ে বললো, “হবিনে হবিনে; সোয়া তিন আনাই লাগিবে!”
তখন বহির্গমণের কাছে এক রিক্সাওয়ালা চেঁচিয়ে ওঠলো,
“চার আনাতেই যদি যাবেন বাহে হামার রিক্সায় কেন নহে?”
ভেবে দেখলাম, “ঠিকই তো! চার আনাই যদি হয় তবে রিক্সাতে কেন নয়”?
তার কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
“চলো ভাই রিক্সা, জলদি প্যাডেল মারো”
জবাবে সে বললো,
“ভোর থেকে ডাউন স্টেশনে একটা মালবাহীরিক্সা সিগনালের অপেক্ষায় আছে
ওটা না ছাড়া পর্যন্ত আপনাকে যে দাঁড়াতি হবে”।

রিক্সাচালকের কথায় আমার অস্থিরতা বেড়েছে দেখে
পাশ থেকে অশীতিপর এক বৃদ্ধা বললো, “জন্ম থেইক্যা আমিও দৌঁড়াইতাছি
অন্তরপুর জংশনে যাবো; কিন্তু কিছুতেই কোন কিছু মিলেনা।
এখন নদীরঘাটে যাবো- জলপথে যদি কোন শর্টকাট পাই”!
অতঃপর আমিও ঘাটের পথে রওনা দিলাম;
তার পিছে আমি
তার পিছে শত শত লোক
অযুত লক্ষ লোক
নিযুত কোটি লোক;
গন্তব্য অন্তরপুর জংশন!

ঘাটে পৌঁছেই দরদাম করে একটা নৌকায় উঠলাম;
একজোড়া শালিক নৌকাটার দাড় টানছিল!
শেষ পর্যন্ত অন্তরপুর জংশনে যাচ্ছি- এই ভেবে যখন নিঃশ্বাস ছাড়লাম
হঠাৎ মাথার ওপর কিছু একটা পড়লো অনুভূত হলো!
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, আলোর গতিতে একটা বোয়িং বিমান-
ভিতরে সব বিজনেসম্যান; দল বেঁধে দূরের হাটে মুরগী বেচতে যাচ্ছে।
টকটকে লাল দাঁত বের করে পাইলট আমাকে বললো,
“জনাব মাফ কইরা দিয়েন; পানের পিকটা মিসপ্লেসড হইয়া গেছে”!
পাইলটকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম
কানের কাছে এক ঝাঁঝালো আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, “এই চা ইইই গরম”।
চোখ খুলে অবাক হয়ে দেখি, “ট্রেন থেকে শত শত লোক নেমে যাচ্ছে
অযুত লক্ষ লোক নেমে যাচ্ছে
নিযুত কোটি লোক নেমে যাচ্ছে;
এবং যারা নেমে যাচ্ছে
এই স্টেশনেই যে নামবে এক নিঃশ্বাস আগেও তারা তা জানতো না”!

16 thoughts on “গন্তব্য

  1. যেন অসাধারণ অদ্ভুত এক কল্প জগত থেকে ঘুরে এলাম। কিভাবে পারেন এমন ভাবে একটি নয়; কয়েকটি থিম একসঙ্গে জোড়া লাগাতে !! অভিনন্দন মি. মিড ডে ডেজারট। 

    অশীতিপর সেই বৃদ্ধা'র মতো বলতে ইচ্ছে করছে, “জন্ম থেইক্যা আমিও দৌঁড়াইতাছি … অন্তরপুর জংশনে যাবো; কিন্তু কিছুতেই কোন কিছু মিলেনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    1. মন্তব্যে ভীষণ মুগ্ধ! 

      কমপ্লিমেন্ট পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। মন ভরে নিলাম।

      অশেষ ধন্যবাদ মিঃ মুরুব্বী।

  2. আরে বাহ দারুন তো  ।আনার যুগ থেকে বোয়িং বিমান আবার তারা যাচ্ছে মুরগী বেচতে । আবার গন্তব্য অনিশ্চিত । ভালো লাগছে খুব । 

    ভালো থাকবেন। 

    1. ঘুমের ভিতরটুকুকে জীবন (স্বপ্ন) বুঝিয়েছি। তাই ওটুকু উদ্ভট, অদ্ভুত– বোয়িং এ করে মুরগী বেচে। আমার কাছে জীবন একটা ঘোরের মতো, “এই চা ইই গরম” আওয়াজে সেই ঘোর কেটে গেলেই প্রস্থান হতে হয়!

      আপনার মন্তব্যে ভীষণ খুশি হয়েছি! অশেষ ধন্যবাদ!

  3. অনেকদিন পর আমারঅভিজ্ঞতায় শ্রেষ্ঠ একটি লিখার দেখা পেলাম আজ। অমুল্য উপহার প্রিয় ডেজারট ভাই। অভিনন্দন অভিনন্দন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. কমপ্লিমেন্ট পেলে আমি আত্মজিজ্ঞাসা করিনা, আমি ওটার মাপের কিনা। ওতে মন ভরে যায় এবং আমি মন ভরে নেই। আপনারটাও নিলাম শ্বাস বন্ধ রেখে!

      অশেষ ধন্যবাদ প্রিয় কবি!

  4. যারপরনাই মুগ্ধ হলাম কবিতাটি পড়ে। লেখায় আপনার শব্দের মার্জিত ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করে। 

    অভিনন্দন মিড দা। অনেক ভাল থাকুন। আমপনার ঝামেলা কমে গেলে নিশ্চয়ই আরও বেশী করে লিখবেন। ধন্যবাদ।

    1. আপনার মন্তব্যে যারপর নাই খুশি হয়েছি দিদি!

      “মার্জিত শব্দের ব্যবহার” বিষয়ে আপনার একনলেজমেন্ট আমাকে কিছুটা হলেও “আত্ম-পরিচ্ছন্ন অনুভব” দিয়েছে যা খুব প্লিজেন্ট! 

      অশেষ ধন্যবাদ দিদি!

  5. টিপিক্যাল ঘরানার এমন লেখা যে কোন পাঠককে মুগ্ধ করবে। অবশ্য যে পাঠক বেশী মনযোগী। উড়া উড়া পড়ে চলে গেলে লেখার নির্যাস তিনি আহরণ করতে পারবেন না।

    1. মন্তব্যের গভীরতায় মুগ্ধ হয়েছি! একই সাথে আমি যখন পাঠক তখন আমার দায়িত্ববোধ বিষয়ে আত্মোপলদ্ধির পক্ষে পরোক্ষ সমর্থন পেয়েছি।   

      অসাধারণ মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে! 

  6. আপনার প্রতিমন্তব্য গুলোন পড়লাম। লেখক আর পাঠকে সমন্নয় না থাকলে ব্লগিং সুন্দর হয়না। আপনার কবিতা পড়লাম। সবার সাথে আমিও একমত। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. "লেখক আর পাঠকে সমন্নয় না থাকলে ব্লগিং সুন্দর হয়না"– খুব দামি কথা বলেছেন; আমার জন্য, আমাদের সবার জন্য!

      আপনার মন্তব্যের পরের টুকুর (এই কবিতা বিষয়ে) জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি!    

    1. কমপ্লিমেন্টে  ভীষণ খুশি কবি জাহিদ অনিক।

      ওয়েলকাম ব্যাক!

       

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।