মানুষ বাঁচতে চায় কেন? (পর্ব-২)

মানুষ কেন বাঁচতে চায়? এটা বিরাট একটা প্রশ্ন। বেঁচে থাকার সংজ্ঞা সাধারণত এক একেক জনের কাছে এক একেক রকম। বেঁচে থাকাটা ব্যক্তি, ব্যক্তির মনন, ব্যক্তির অবস্থান ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে থাকে। যারা জীবন নিয়ে হতাশ। ভাবছেন জীবন হয়তো থেমে গেছে। বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ তারাও কিন্তু চায় শেষ নিঃশ্বাসটি যেনো স্বস্তির হয়। তাই দেখা যায় মরণ পথের একদম সন্ধিক্ষণে এসেও কেউ কেউ প্রিয় জনের মুখ দেখতে চায়। হয়তো ভাবে প্রিয়জনের আশ্বাসের বাণীতে যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকা যায়! অনেকেই আবার না বলা কথাগুলো বলতে চায়। অনেকেই বলতে পারে, অনেকেই হয়তো পারে না।

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো খাদ্য। তারপরেই আছে বাসস্থান। আনুষঙ্গিক আরও যে উপাদানগুলো লাগে তা হচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্র। মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য আরও কিছু চাহিদার প্রয়োজন। যেগুলো না হলে তাদের বেঁচে থাকাটা সম্পূর্ণ হয় না। বেঁচে থাকার জন্য এসবের অতীব প্রয়োজন না হলেও মানুষের বেঁচে থাকাকে এরা প্ররোচিত করে। অনেকটা প্রভাবকের ভূমিকার মতো। এর মধ্যে আছে আত্মসম্মান বা সম্মানবোধ, শ্রদ্ধা, স্নেহ, মায়া, মমতা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না।

আমরা জানি কিশোর থেকে পৌঢ় এবং মূর্খ থেকে শিক্ষিত সবারই একটি সম্মানবোধ আছে। তারা হোক অতিশয় গরীব কিংবা অত্যন্ত ধনী। এই সম্মানবোধটুকু একবার চলে গেলে সে নিজেকে বেঁচে থাকাটা মূল্যহীন মনে করে। ঘরে বলেন আর কর্মক্ষেত্রেই বলেন না কেন পারস্পরিক সম্মানবোধটি থাকা খুবই জরুরী। শুধুমাত্র সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার জন্যই কি মানুষ বাঁচতে চায়? ঘুম, খাওয়া আর আনন্দ-বিনোদনের মধ্যেই অনেকেই জীবনের মানে খুঁজে। আমরা প্রায়শঃ ভুলে যাই যে, বেঁচে থাকা মানে শুধু নিঃশ্বাস নেওয়া নয়। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন সবাই সবার সহযোগিতায় দাঁড়াতে চাওয়া, কাছাকাছি আসতে চাওয়া বেঁচে থাকার মানে এমনও হতে পারে। আমৃত্যু সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে চলা এবং কোনরূপ শঠতা-মিথ্যাকে প্রশ্রয় না দেওয়াটাও অনেকের কাছে বেঁচে থাকার মানে হতে পারে। যদিও এমন লোকের এখন বড়ই অভাব। তবে থাকাটাও বিচিত্র নয়।

কিশোর-যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে এসে বেশির ভাগ মানুষ একা হয়ে পড়ে। ভালোবাসার মানুষের সর্বাধিক প্রয়োজন পড়ে মূলত বৃদ্ধাবস্থায়। জীবনের অন্তিমক্ষণে দাঁড়িয়ে মানুষের চাওয়ার পরিমাণটি খুবই কমই থাকে। এমতাবস্থায়, যে মানুষটি সার্বক্ষণিক পাশে থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তাকেই মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে আপনজন। তখন মনে হতে পারে এই মানুষটি ছাড়া তার বেঁচে থাকাটা অসম্ভব।

এর বিপরীতও আছে। মানুষ শুধু বয়সে বাঁচে না বাঁচে তাঁর কর্মে। মানুষ সাধারণত তাদেরকেই মনে রাখে যারা তাদের কর্মের মধ্যে দিয়ে অমর হয়ে আছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.), সক্রেটিস, প্লেটো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাদার তেরেসা, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, নিউটন, কাজি নজরুল ইসলাম প্রমূখ। এরা কিন্তু কেউ মরেনি সবাই বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে।

কেউ যখন বাঁচতে চায় তখন তার মধ্যে কিছু উদ্দীপনা কাজ করে যা তাকে বেঁচে থাকতে উৎসাহ যোগায়। মানুষ মাত্রই আশা নিয়ে বাঁচে। আশার তরীতে নিজের স্বপ্নগুলোকে সঙ্গী করে ভাসিয়ে নিতে কার না ভালো লাগে। এ ধরনের আশা এবং বিভিন্ন রকমের প্রান্তি প্রত্যেকটা মানুষের বেঁচে থাকার নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার আর একটি নিয়ামক। কিছু স্বপ্ন মানুষকে বাঁচতে শেখায়। বাঁচার তীব্র ইচ্ছায় নিজেকে ভাসিয়ে নেয় এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। মানুষ অনেক কিছুই করতে চায়, কতো কিছুই না করার স্বপ্ন থাকে তাঁদের। মৃত্যুকে খুব সহজে আলিঙ্গন করতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কমই আছে। এই মরার ভয় মানুষের বেঁচে ইচ্ছেটাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও প্রিয়জন, আপনজন আর পরিবার মানুষকে যে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে এই মায়াও তাকে বাঁচতে উৎসাহ দেয়।

পৃথিবীতে হাজারো বাঁচার উপকরণ আছে। প্রেম-প্রকৃতি, সংসার-মায়া, আনন্দ-সুখ এসবের প্রতি কেউ যখন তার মনোযোগ বাড়িয়ে দেয়, তার ভেতর ডুব দেয় নিভৃতে-একান্তে তখন তার বেঁচে ইচ্ছেটা এমনিই বাড়তে থাকে।
.
(চলবে…………….)
মানুষ বাঁচতে চায় কেন? ১ম পর্ব এখানে।

1 thought on “মানুষ বাঁচতে চায় কেন? (পর্ব-২)

  1. মৃত্যুকে খুব সহজে আলিঙ্গন করতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কমই আছে। এই মরার ভয় মানুষের বেঁচে ইচ্ছেটাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও প্রিয়জন, আপনজন আর পরিবার মানুষকে যে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে এই মায়াও তাকে বাঁচতে উৎসাহ দেয়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।