একটি দুঃখী পরিবারের গল্প
অন্ধ সোবহান আলী। বয়স ৪০ বছর। তিন বোবা সন্তান নিয়ে এখন খুব কষ্টে আছেন। সোবহান আলী গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা গ্রামের ওমেদ আলীর পুত্র। নিজের জমিজমা বলতে কিছুই নেই তার। খাস জমির ওপর কোনো মতে ঘর উঠিয়ে বসবাস করেন। সংসার জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়ে সুমী খাতুন। বয়স ১৫ বছর। জন্ম থেকেই বোবা। বড় ছেলে বিদ্যুৎ মিয়া। তার বয়স ১০ বছর। জন্ম থেকে সেও বোবা। প্রায় ১০ বছর আগে সোবহান আলীর দু’টি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকে তিনি সংসারের অভাব- অনটনের বোঝা টানতে টানতে পাগলপ্রায়। এলাকার লোকজন তাকে পাগলা সোবাহান বলেই চিনে। ছোট ছেলে চকু মিয়া। বয়স ৭ বছর। সেও জন্ম থেকে বোবা। সোবাহান আলীর স্ত্রী আবেদা বেগম কান্নাকন্ঠে জানান, অন্ধ স্বামী, বোবা এক মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার চালানোই দায়। বোবা ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার ইচ্ছা পোষন করলেও অর্থাভাবে তাদের ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এমনিতেই পরের বাড়িতে কাজ না করে কিংবা স্বামীর দিন মজুরীর অর্থ ছাড়া সংসার চলেনা। সরকারী প্রতিবন্ধী ভাতা বা অন্যান্য সহায়তা করা হলেও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। প্রতিবন্ধী পরিবার হিসেবে কোনো বেসরকারী সংস্থা ( এনজিও ) সহায়তা বা পূনর্বাসনে এগিয়ে আসেনি।
আবেদা বেগম আরো বলেন, রিলিফ নয়, অসহায় এই প্রতিবন্ধী পরিবারের ‘পূনর্বাসনে সহায়তা চাই’। আইন- সহায়তা কেন্দ্র ( আসক ) সাঘাটা উপজেলার সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম ওই পরিবারেরর পুনর্বাসনের সহায়তার জন্য দেশী- বিদেশী দাতা সংস্থা ও দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সংবাদদাতাঃ মনিরুজ্জামান বুলেন, সাঘাটা (গাইবান্ধা)।
ছোট্ট একটা সংবাদ। তাও তিন বছর আগের। দৈনিক পত্রিকার মফস্বল পাতায় প্রকাশিত। কারুরি নজরে আসবার কথা নয়। এলেও কেউ চমকে উঠবেন, কিংবা নড়েচড়ে বসবেন, তেমনটাও নয়। এরকম সংবাদ প্রতিদিনই ভুরিভুরি আসে প্রতিটি পত্রিকায়।
কিন্তু একজন প্রবাসী মানুষ সহস্র মাইল দূরে থেকেও মনে রেখেছেন। অথচ উল্লেখিত ঘটনার মানুষ কিংবা এলাকা তাঁর কোন দিনই দ্যাখা হয়নি।
তখন ব্লগ কিংবা বাংলা ভাষা-ভাষীদের কোন কমিউনিটি ব্লগ থাকলেও ভদ্রলোক কারু সাথে শেয়ার করতে পারেন নি। কিন্তু তিনি মনে রেখেছেন। নিভৃতচারী এই মানুষটি তিন বছর পর কিছু ভার্চূয়াল বন্ধুদের সংগে বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন। অনুরোধ করলেন। কিছু একটা করবার সুযোগ পেলেন।
আসুন সে মানুষটির সুপ্ত একটি বাসনা পূরনে আমাদের সহযোগিতা কি ছিলো দেখি।
বগুড়া থেকে আমি মুরুব্বী ( আজাদ কাশ্মীর জামান ) এবং কাজলাদিদি পথিমধ্যে গোধূলীর সূর্য মহিমাগঞ্জ পেরুচ্ছি।
গ্রামের আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা পেরিয়ে যমুনা নদীর খাল পারাপারের অপেক্ষায়…
খেয়া পারের মাঝপথে আমরা…
গনগনে সূর্য, তারপরও কোন ক্লান্তিবোধ আমাদের নেই…
পৌঁছুলাম যমুনার অপর প্রান্তে…
আবার যাত্রা শুরু…
পথিমধ্যে আমাদের স্বাগতম জানালেন…
দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা জনাব মনিরুজ্জামান বুলেন এবং সাঘাটা উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি ও দৈনিক ভোরের কাগজ এর স্থানীয় সাংবাদিক জনাব আনোয়ার হোসেন।
এলাকায় অভ্যর্থনা জানালেন চেয়ারম্যান জনাব আতাউর রহমান সরকার।
আরো যাদের পেলামঃ
মানবাধীকার সংস্থার থানা সমন্বয়কারীঃ শহিদুল ইসলাম এবং নুরুন নবী সরকার।
“নারী প্রগতি সংস্থা”র সমন্বয়কারীঃ স্কুল শিক্ষিকা।
প্রাথমিক আলোচনা এবং পরিচয়পর্বঃ
প্রকৃত তথ্যের সন্ধানে আমরা…
সংবাদটি প্রচারের পর স্থানীয় প্রসাশন কর্তৃক প্রদত্ত লীজ হিসেবে ০৫ শতাংশ জমির উপর একটি মাত্র ছনের ঘর।
অন্যের গরু দেখ-ভালের জন্য ঘরের মধ্যে গোয়ালঘর।
এক ঘরেই সব।
পরিবারে এখন সদস্য তিন পুত্র এক কন্যা।
এক চোখ অন্ধ সোবহান আলী। স্ত্রী আবেদা বেগম।
বড় ছেলেঃ সাগর। দিনমজুর। মেয়েঃ সুমি। বোবা।
সেজো ছেলেঃ বিদ্যুৎ। বোবা। ছোট ছেলেঃ চপু। বোবা।
পরিবারটির ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন কাজলাদিদি। আমি মুরুব্বী এবং গোধূলীর সূর্য। গ্রামবাসীর কাছেই আমরা কী করলে এই পরিবারটি স্বাবলম্বী হতে পারে পরামর্শ আশা করি। একসময় তারা স্বতস্ফূর্ত ভাবে একখন্ড জমি ধার করে চাষাবাদ এবং গাভী পালনের সিদ্ধান্তকে সমস্বরে স্বাগতঃ জানান।
এই পরিবারটি লীজ সম্পত্তিতে তৈরী ঘরের কোন দলিল কাগজাদি পান নাই; তা নিয়ে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি গ্রামবাসীর সম্মুখে আলোচনায় তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন, স্বভাবসুলভ আচরণে প্রতিবন্ধী ভাতা যেনো নিয়মিত থাকে এবং আগামীতে এই পরিবারের প্রতি আরেকটু মনযোগী হবেন মর্মে কথা দেন।
ভূমিকায় যে মানুষের কথা বলেছি, তার পাঠানো অর্থ কিভাবে সেই পরিবারটির কাজে আসতে পারে তা নিয়ে আলোচনা।
আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো, প্রাপ্ত অর্থ পরিবারটির হাতে সরাসরি না দিয়ে, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মানবাধীকার সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিদ্বয়ের হাতে তুলে দেয়া হবে এবং তাঁরা পরিবারটির জন্য একটি গাভী খরিদ করবেন।
অর্থ বিতরণঃ
গাভী খরিদ পরবর্তী সময়ে সার্বিক দেখভাল এবং সংবাদ প্রেরণের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিলেন “নারী প্রগতি সংস্থা” ‘র সমন্বয়কারী স্কুল শিক্ষিকা সুলতানা শামিম আরা বেগম।
অসহায় পরিবারটি অশ্রু সজল চোখে দানকর্তার দীর্ঘজীবন এবং সুখ কামনা করেন। এবং দানকর্তা যাদের দেখেননি, পরিবারটিও যাকে দেখেনি, প্রবাসী সেই মানুষটিকে একবার দেখবার ইচ্ছে কান্নাভরা চোখ নিয়ে প্রকাশ করেন।কিছুক্ষণের জন্য এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
কাটিয়ে উঠতেই চারিদিকে হাততালি। আনন্দ মুখর একটি পরিবেশ। একটি সুখি দম্পতির প্রাপ্তীর আনন্দ। মনে হয়েছে-
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক,
কে বলে তা বহুদূর
মানুষের মাঝেই স্বর্গ নরক
মানুষেই সুরাসুর। (নারায়ণ)
যে প্রবাসী মানুষটি ক্ষুদ্র একটি পরিবারকে নিয়ে ভেবেছেন গত তিনটি বছর; বারবার ফোনে- মেইলে রেখেছেন সজাগ দৃষ্টি, তিনি আমাদেরই আপন, আমাদেরই কাছের মানুষ ব্লগার
শামছুল আলম মেহেদী। যুক্তরাজ্য।
সংবাদটি ০৫ই সেপ্টেম্বর দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়।
তারিখ পাল্টে যাবার কারণে আর ছবি সহ সংবাদটি দ্যাখা যাবেনা। কিন্তু মূল সংবাদটি দ্যাখা যাবে এখানে ক্লিক করলে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে পরিবারটি ভালো আছে।