কৃতজ্ঞতা এবং ভালোবাসা বন্ধু জিয়া রায়হান

117fioz.jpg ইচ্ছে ছিলো পাখি হবার। স্বাধীনতা পাবার। কিন্তু আমার পূর্ব নারী পুরুষরা বানর ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। তবে আমি জন্মেছিলাম বানরের খাছিলত মানে চরিত্রগত বৈশিষ্ট নিয়ে। ছিলাম গেছো বানরের মতো। স্কুলের শেষ বেঞ্চিতে বসে স্যারের দেয়া পড়ার ভয়ে বইয়ের ফাঁকে লুকিয়ে থাকতাম। প্রায় প্রতিদিন আমাদের একটি ক্লাস নিতেন শশ্রুমণ্ডিত স্যার। ধবধবে সাদা গায়ের রঙ হবার কারণে বন্ধুরা সবাই ডাকতাম জ্বীন স্যার বলে। ক্লাসে এসে পড়তে বলে ঝাড়া চল্লিশ মিনিট টেবিলে মাথা রেখে হাই তুলে ঘুমোতেন। প্রথমে ফিসফিস পরে হৈ হৈ করে চিৎকার করলেও টের পেতেন না। মিহি সুরে নাক ডাকতেন। বুঝতাম আমাদের হল্লা চিল্লা না থাকলে তাঁর সুখের ঘুম আরামের হয় না।

42cde যাই হোক। জীবনের এই গেলো এক খণ্ড চিত্র। এমন চিত্র গুলোই প্রায় প্রতিদিন অবশ্যি যদি বাজার করার ফরমায়েশ না থাকে, রেল লাইন ধরে অফিসে যাওয়া আসার পথে মনের মধ্যে আঁক বাঁক করতে থাকে। হাঁটু জলে চতুর মাছের মতো। কোনটা ধরতে পারি আবার কোনটা হাতে ব্যথা দিয়ে পালায়। যেন বয়সের কারণে স্মৃতির তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে সব। হাজার গজের হুইল সুতোয় গাঁথলেও পালিয়ে যায়। সাথে একজন নারী ষ্ট্যানো থাকলে ডগমগ হয়ে বলে যেতে পারতাম। তিনি লিখতেন। কে জানে আপ্লুত হয়ে কবিতার চরণ টরনও হয়তো বাদ যেতো না !! বয়সের অর্ধ সেঞ্চুরী’র কাছাকাছি থাকলে, কার মনটা না চায় কাছে কেউ থাক !! চিত্রা হরিনের দৃষ্টিতে চকিত চাহনি, কলম কাগজের পেষায় মুক্তো দানার অক্ষর বৃত্ত, শুনতে চাইবার বাহানায় সুরেলা কণ্ঠস্বর কেই বা কাছে থেকে শুনতে না চায়। হে ঈশ্বর, মুরুব্বীনি কিছুদিনের জন্য যাক পরকালে আমি থাকি ইহলোকের স্বর্গে। মুরুব্বীনি পাছে শুনে বা জেনে ফেলে মনের ভাষা এই ভেবে চেপেচুপে নিরীহ সেজে থাকি সামনে। শুনেছি এই বয়সের বউদের নাকি শ্রবণের চাইতে নাকের ঘ্রাণ শক্তি থাকে তীব্র। প্রিয় পাঠক আমি অধম ধরা পড়তে চাই না। আমি তো আর সত্য বলি নাই। কল্পনা’র কথা বলেছি। কল্পনা তো কেউ না বললে চোখে দেখে না।

জীবনে আমি মানুষের কাছে সমর্পণ করেছি যতোটা তারচেয়ে বেশী হয়েছি ঋণী। আদর ভালোবাসা পরম মায়া মমতার কাছে আমি আজীবন ধরা খাওয়া বিদগ্ধ। ঋণের শোধ দিতে চাইলে ভেবে বসেন, এই রে !! আবার বুঝি এলো ঋণ চাইতে। এই চাওয়াটা যে ঋণ নয় বুঝাই কি করে। যাক সে সব কথা। ঢের বুঝে গেছি এখন আমার জীবন স্মৃতি কথা লিখবার সময়। বেলা যে বয়ে যায়।

zia আমার স্মৃতিময় জীবন ঘনঘটায় প্রবাস থেকে স্বদেশের মাটি পর্যন্ত একটি মানুষের ঋণের বোঝা আমি মাটিতে রাখতে পারবো না। প্রবাসে কাজের ফাঁকে সামান্য পিজা ছাড়া হয়তো খাওয়া হয়নি সারাদিন; সন্ধা রাত্রিতে একটি মানুষের ডাক ঠিকই পেতাম … চলে এসো। একদম নির্ভেজাল নির্মোহ কণ্ঠস্বর। তোমার সহ আমাদের জন্য কাঁচের বোতলে বেলে ময়দার রুটি বানিয়েছি। অথবা খিচুড়ি বানিয়েছি ভেড়ার কলিজা দিয়ে, তাড়াতাড়ি চলে এসো। বলেই ফোন লাইনটা কেটে দিতো। আসবো না বলতে পারতাম না। চোখে জল চলে আসতো। মধ্য রাতে শীতের রাত্রিতে ঢাকা থেকে ফিরলে আমার মা ঘুমন্ত চোখ জোড়া না ডলেই বলতেন যেমন, খাবার গরম করছি টেবিলে আয় … তেমনই অদৃশ্য এক স্নেহ ভালোবাসাময় শব্দের কাছে আমি বন্দি হয়ে যেতাম। বন্ধু টি আমার আজো আছে। সেই দেড় যুগ আগের সেই মায়া ভরা মানুষটির মতোই। আপনার আমার আমাদের সকলের প্রিয়ভাজন জিয়া রায়হান। যার হাতে হাত রেখেই আমার জীবনে লিখার হাতে খড়ি।

জিয়া রায়হান’কে বলা যেতে পারে রাজধানী রোম এর বাঙ্গালী সংস্কৃতির পুরোধা। প্রবাসে বসেই দেশের জাতীয় দৈনিকে লিখতেন প্রবাসের কলাম। খেয়ালী মানুষ আমি কম দেখেছি। যখন যা মাথায় এসেছে করেছেনও তা। ইতালীর রোমে প্রথম শহীদ মিনার স্থপতিদের ইতিহাস যদি কখনো লিখা হয়, উদ্যোক্তাদের প্রথম সারিতে যার নাম থাকবে চির অম্লান তিনি জিয়া রায়হান। গ্রেগরিয়ান নববর্ষ, একুশ স্মরণ, বৈশাখ উদযাপন, বৈশাখী মেলার সফল আয়োজন, বিজয় উৎসব পালন থেকে শুরু করে গীতি নাটক কিংবা একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশ সমূহের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে বাংলাদেশকে দ্বি ভাষায় কবিতা পরিবেশনের মঞ্চায়ন সহ রোম থেকে প্রকাশিত একমাত্র হাতে লিখা মাসিক পত্রিকা অবনী‘র সম্পাদক হিসেবে যিনি পেয়েছেন জন মানুষের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং ভালোবাসা। অনুবাদ করেছেন ইতালীয় ভাষা’র অনেক কবিতা।

আমার সৌভাগ্য এই কাজ পাগল মানুষটি প্রতি মাসের ২৫ তারিখে দুটো কলম আর কিছু কাগজ হাতে তুলে দিয়ে বলতেন, নাও। এই থাকলো ম্যাটার। সারা রোমে একটি টাইপ রাইটার কিংবা কম্পিউটারও যেহেতু নেই, ঘচাঘচ হাতে লিখে ফেলো। ভালো কথা … একটু স্টাইল করে লিখো। শিল্পকলার আঁকিয়েদের মতো অক্ষরে কিছুটা ভাব এনো। আমি পূর্বাকাশে সূর্য না উঠা পর্যন্ত বন্ধুর কাজ করে যেতাম মহানন্দে। কখনো যে রাগ চাপতো না এ সত্য অস্বীকার করি কিভাবে। তাঁর কাছে আমার ঋণের বোঝা অনেক। যে বোঝা আমার এক জনমে পবিত্র কোন ভূমিতে রাখবার শক্তি আমার নেই। তবু মনটাকে যৎসামান্য হালকা করতে ক্ষুদ্র একটি প্রয়াস: স্মৃতি থেকে নিয়ে সবার সাথে শেয়ার করলাম। ধন্যবাদ।

alik

অলীক রমণ

পাথরের ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে নিপাট সকাল
রাতের আড়ালে সখী গিয়েছিল ও- পাড়ার ঘরে
এখন তো দেহ তার কালিমাখা আবীরের থাল
সাত পাকে বেঁধে, বল, তাকে আর নেবে কোন বরে।

নক্ষত্র- বাসরে আজ অব্দি যদিও বা অচল আধুলি
নিঃশর্ত সম্ভোগে তবু সিদ্ধা সে উদ্বাহু উপযোগে
সময়ের প্রান্ত ছুঁয়ে ঝুলে থাকে নিরুপায় খুলি
উন্মার্গ বিন্যাস চলে সামাজিক অনন্ত উদ্যোগে।

বেদনার সন্ত একা পাক খায় মেঘহীন শূন্যে
কুয়াশার বুক চিরে হেঁটে চলে নিঃসঙ্গ রমণী
সমূহ দৈহিক পাপ আশ্চর্য বদলে গেছে পূণ্যে
নুহের নৌকার জন্যে নদী- পথ মিলেছে ধমনী।

পৌরাণিক দেবী তাকে পাঠিয়েছিল গূঢ় শমন
নিজের নির্জনে সখী করেছিল অলীক রমণী।।

67891_

মুরুব্বী সম্পর্কে

আমি আজাদ কাশ্মীর জামান। আছি মুরুব্বী নামের অন্তরালে। কবিতা পড়ি, কবিতা লিখার চেষ্টা করি। ভেতরে আছে বাউল মন। খুঁজে ফিরি তাকে। জানা হয়নি এখনো। ঘুরতে ঘুরতে আজ পৃথিবীর স্বর্গে। এখানেই পরিচয় হয়েছিলো, কবিতা পাগল এক মানুষের সংগে। নাম জিয়া রায়হান। যার কিছু শব্দকথা, এ্যাতোদিন ভরেছে আমার পাতা। উথাল পাথাল হাওয়া, হৃদয়ে জাগালো দোলা পেলাম কিছু সমমনা মানুষের দ্যাখা। দিনভর আর রাতভর শুধু কবিতায় গেলো বেলা। সব ছেড়েছি- সব পেয়েছি- ভুলতে পারিনি শুধু কবিতার অশ্রুসজল চোখ। ভালো লাগা থেকেই দু’ একটা শব্দ সাজাবার চেষ্টা করি। মাতাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মাটির কলসে, তবলার ধ্বণী তুলে গাইতে পারি বেসুরো গান- সুর নামের অন্তরালে। ভালোলাগে পোষা কবুতরের পালক ললাটে ছোঁয়াতে। ফুল থেকে রং নিয়ে, খেলি হোলিখেলা, হৃদয়ের উঠোনে। আজ তারি ধমকে এলাম স্বরূপে- স্বকথায় ভরাবো পাতা।   hits counter