সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা

সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা

গত হলো ঋতুরাজ বসন্ত পহেলা ফাল্গুন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালবাসা দিবস। পহেলা ফাল্গুন আর ফেব্রুয়ারির ভালোবাসা দিবস যেন একই সুতায় গাঁথা। পহেলা ফাল্গুনের আগমনে যেমন গাছেরা নতুন সাজে সজ্জিত হয়, ফুলেরা সুভাস ছড়ায়; তেমনিভাবে মানুষের হৃদয়ে জেগে ওঠে ফেব্রুয়ারির ভালোবাসা দিবসের গান।

ভালোবাসা দিবস নিয়ে পৃথিবীতে অনেক মতভেদ থাকলেও, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স এর নাম ভালোবাসা দিবসের ইতিহাসে থেকেই গেল। যার স্মরণে, যার নামে আজকের দুনিয়ায় জয়লাভ করেছে, এই ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন’স ডে। যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি মানুষের হৃদয়ে থাকা ভালোবাসার মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় থাকে। দিবসটি শুধু আমাদের দেশেই সাড়ম্বরে উদযাপিত হচ্ছে না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়। যদিও আমাদের দেশের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ এই দিনটিকে বেহায়াপনা দিবস হিসেবে গণ্য করে থাকে, তারপরও এই দেশের অগণিত মানুষ এই দিনটিকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করে; একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বিনিময় করে থাকেন।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইন্টাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে ধর্ম প্রচার-অভিযোগে বন্দী করেন। কারণ তখন নাকি রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল, তাই। বন্দী অবস্থায় তিনি একজন কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এরপর সেন্ট ভ্যালেইন্টাইন’স এর কথা সারা রোম নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স এর জনপ্রিয়তার প্রতি রোমান সম্রাট ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল, “১৪ই ফেব্রুয়ারি”। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইন্টাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। যা বর্তমান দুনিয়ায় ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস নামে স্বীকৃত।

এমন অনেক প্রচলিত ঘটনা, তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস নিয়ে। একেকজন একেকভাবে এর যুক্তি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তবে এ কথা ঠিক মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। আর এ ভালোবাসা থেকেই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি। তা কে মানল আর কে মানলো না, তা এই বিশেষ দিবসটির কিছুই যায় আসবে না। পৃথিবী নামক গ্রহটি যতদিন জেগে থাকবে, ভালোবাসা দিবসটিও ততদিন আরও সারা জাগাবে।

তবে আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শুরু হয় বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের হাত ধরে। সম্মানিত শফিক রেহমান সাহেব, লন্ডনে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুভ সূচনা করেন। সেই থেকে এই বিশেষ দিবসটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে এবং সে থেকেই আমাদের দেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস শুরু।

যদিও অনেকে বলে থাকে, ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিন বা তারিখ নেই! সপ্তাহের সাত দিন এবং বছরের ৩৬৫ দিনই ভালোবাসার দিন। তবু ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা প্রকাশের একটি প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বা ভবিষ্যতেও হবে। কেননা, ভালোবাসা শুধু প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসার শেযও নেই। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। ভাইয়ে প্রতি বোনের ভালোবাসা। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা। ছোটদের প্রতি বড়দের ভালোবাসা। গরিবের প্রতি বড়লোকের ভালোবাসা। প্রজার প্রতি রাজার ভালোবাসা। নারীর প্রতি পুরুষের ভালোবাসা। দেশের প্রতি জনগণের ভালোবাসা। সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা। পৃথিবীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা। শিষ্যের প্রতি গুরুর ভালোবাসা। ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের ভালোবাসা। নিশ্বাসের প্রতি দেহের ভালোবাসা সহ আরও শতসহস্র ভালোবাসাই বিরাজমান।

ভালোবাসা শুধু মানুষ মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, ভালোবাসা প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই প্রতীয়মান। প্রতিটি জিনিশের প্রতিও মানুষের ভালোবাসা লক্ষণীয়। তাহলে এই বিশেষ দিবসটিকে আমরা অভিন্নভাবে দেখছি কেন? ভালোবাসা দিবসে আমি কি আমার গর্ভধারিণী মাকে ভালোবেসে একটি ফুল বা অন্যকিছু দিতে পারি না? আমি কি ভালোবাসা দিবসে আমার আদরের সন্তানের মাঝে আমার হৃদয়ে থাকা ভালোবাসা বিনিময় করতে পারি না? যাকে নিয়ে ৩০টি বছর একসাথে সংসার করছি, তার সাথে কি ভালোবাসা বিনিময় করতে পারি না? যেই শিক্ষাগুরুর আশীর্বাদের আজ আমি শিক্ষিত বিদ্যান। সেই গুরুর সাথে কি ভালোবাসা বিনিময় করতে পারি না?

পারি, এখানে দোষের কিছু নেই। আছে শুধু আমাদের মনের অভাব। মন থেকেই নাকি ভালোবাসার উৎপত্তি। এই নশ্বর ভবসংসারে ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী? ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবসে আমার হৃদয়ের ভালোবাসা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে চাই। সবার প্রতি রইল আমার ক্ষুদ্র হৃদয়ের এক নদী ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসা ছোটবড় সকলের মাঝে। জয় হোক ভালোবাসার।

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

8 thoughts on “সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা

  1. ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসা ছোটবড় সকলের মাঝে। জয় হোক ভালোবাসার। ___ আপনার জন্যও আমাদের ভালোবাসা মি. নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আপনি সহ স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগের সবার জন্য এক সাগর ভালোবাসা বিলিয়ে দিলাম। কামনা করি সবাই ভালো থাকুক, সুখে থাকুক!

  2. লেখাটা পড়লাম সুন্দর প্রকাশ। আপনার জন্য ও ১৪ ফেব্রুয়ারির উচ্ছ্বল বিকেলের শুভেচ্ছা রইলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. আজ ভালোবাসা দিবস। এই বিশেষ দিবসে গরিবের পক্ষ থেকে আপনার জন্যও এক সাগর ভালোবাসা রাখা হলো, শ্রদ্ধেয় দিদি। আশা করি ভালো থাকবেন। ভালোবাসার জয় হোক।

  3. ভালোবাসা শুধু প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসার শেযও নেই। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। ভাইয়ে প্রতি বোনের ভালোবাসা। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা। ছোটদের প্রতি বড়দের ভালোবাসা। 

    ভালোবাসা থাক সর্বত্র। শুভেচ্ছা কবি নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. আজ ভালোবাসা দিবস। তাই এই বিশেষ দিবসে গরিবের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য এক সাগর ভালোবাসা বরাদ্দ করা হলো। তা কোনওএক সময় সাক্ষাতে বুকে বুক মিলিয়ে আপনার মাঝে মিশিয়ে দেওয়া হবে,দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন। ভালোবাসার জয় হোক।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।