এক খোদা প্রেমী পাগল খোদার খোঁজে বের হলেন। পাগলের বিশ্বাস মহান সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবী নামক গ্রহটির যেকোনো এক জায়গা বসে পৃথিবীর সবকিছু পরিচালনা করছেন। তাঁকে যদি খোঁজার মত খুঁজতে পারি, তাহলে হয়তো তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে। খুঁজে পাওয়া গেলেই আমার এতো বছরের আরাধনার দেনা-পাওনা বুঝে নিতে পারবো। পাগল বলে, ‘তাঁর সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া আছে। আছে চাওয়া-পাওয়া। আমি আমার সংসার ছেড়ে খেয়ে-না-খেয়ে তাঁর আরাধনা করছি, অথচ তাঁর কোনও দেখা পাচ্ছি না। সাড়াশব্দও পাচ্ছি না। আমি তাঁর পাগল। তাঁকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি থামবো না। তাই এই লোকালয়ে বসে আর তাঁর আরাধনা করবো না। চলে যাবো এক গহীন জঙ্গলে। যেখানে মানুষের সাড়াশব্দ নেই, সেখানে।’
এই বলেই খোদা প্রেমী পাগল বের হলেন খোদার আরাধনা করে খোদাকে খুঁজে পাবার উদ্দেশ্যে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেক পথ হেঁটেছে। পাগলের শরীর এখন প্রায় অবসন্ন। হাঁটতে আর পারছে না। পাগলের পা চলছে না। পানির পিপাসাও পেয়েছে অনেক। সামনে এক ডোবা থেকে কচুরিপানা ছাপ করে পানি পান করে রাস্তার পাশেই বসে রইলো। রাস্তার পাশেই সেখানকার এক লোক লাউ গাছ রোপণ করে ঝাঁকা দিয়ে রেখেছিল। সেই লাউ গাছের ঝাঁকায় কয়েকটা লাউ ধরেছে। ঝাঁকার নিচে বড়বড় কয়েকটা লাউ দেখে খোদা প্রেমী পাগল ভাবতে লাগলো।
পাগল মনে মনে ভাবছে, আমি কার ধ্যান করছি? যাঁর ধ্যান করছি, তাঁর তো কোনও আন্দাজই নেই! আমি যাঁর খুঁজে বের হয়েছি, তাঁর এমন কাণ্ড? এমন চিকণ গাছের ডগার মাঝে কত বড় ফল দিয়ে রেখেছে সে? এটা কি মানা যায়? পাগল নিজে নিজেকেই প্রশ্ন করলো। কিন্তু এর উত্তর মেলাতে পারেনি। অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আবার হাঁটতে শুরু করলো।
খোদা প্রেমী পাগল ভাবছে আর হাঁটছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে আর কিছু সময় বাকি আছে। রাত হয়ে গেলে কোথায় যাবে, এ নিয়েও পাগল ভাবছে। এক বট গাছের নিচে বসলো। তখন ছিল বট ফলের সিজন। অনেক বড় বট গাছ। পুরো গাছেই লাল লাল বট ফল। পাতায় পাতায় বট ফলে ছেয়ে গেছে। অনেক পাখিরা সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার আগে এই গাছে বসে আড্ডা দেয়। পাখিরা বট গাছের ডালে বসে গল্প করে। একে অপরের সাথে সুখদুঃখের কথা শেয়ার করে। কেউ মনের আনন্দে গান গায়। কেউ নাচে। কেউ বট গাছে জন্মানো বট ফল ঠুকরিয়ে খায়। নিচে বসে খোদা প্রেমী পাগল তা দেখে হাসে। খোদা প্রেমী পাগল পাখিদের এমন অনন্দ উল্লাস দেখে সকালের দেখা লাউয়ের কথা ভুলে যায়।
পাগল এখন গাছের উপরের দিকে পাখিদের অানন্দ উল্লাসই বসে বসে দেখছে। এমন সময় একটা পাখি বট ফলে ঠোকর দিতেই, বট ফলটা ছিটকে পড়ে নিচে বসা পাগলের নাকের ডগায়। গাছের উপর থেকে বটফলটা পাগলের নাকের ডগায় পড়ার সাথে সাথে পাগল নিজের নাক ধরে আহাম্মকের মতো অবাক হয়ে গেল। এখন পাগলের সকালের কথা মনে পড়ে গেল। সকালে সেসময় আমি বলেছিলাম খোদার আন্দাজ বলতে কিছু নেই, এখানে দেখছি খোদার আন্দাজ ঠিকই আছে। ঐ চিকণ গাছের ডগায় বড় ফল দিয়ে খোদা প্রমাণ করেছে যে, যার যতটুকু প্রাপ্য, তাঁর ততটুকু পাওয়া উচিৎ। আজ যদি এই বড় গাছটায় ঐ চিকণ গাছের বড় ফলটা থাকতো, তাহলে এখন আমার অবস্থাটা কেমন হতো? নির্ঘাত মৃত্যু থেকে রেহাই ছিল না। মহান সৃষ্টিকর্তার ঠিকই আন্দাজ আছে। তিনি যা করে জীবের মঙ্গলের জন্যই করে থাকেন। এই বলেই খোদা প্রেমী পাগল মহান সৃষ্টিকর্তার খোঁজে আবার হাঁটতে শুরু করলেন।
অসাধারণ প্রতীকী একটি লিখা। যে পাঠকের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় প্রবল তার বুঝ ক্ষমতায় আসবেই।
আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেকেই অনেককিছু চেয়ে থাকি। কেউ কিন্তু কম কিছুই চায় না। সবাই অনেক অনেক চায়। কিন্তু যিনি দেবার মালিক, তিনি ঠিকই হিসেব করেই দিয়ে থাকেন। তাঁর দেবার আন্দাজও আছে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদের সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
মহান সৃষ্টিকর্তার ঠিকই আন্দাজ আছে। তিনি যা করেন জীবের মঙ্গলের জন্যই করে থাকেন।
এটা সবাইকেই মানতে হবে, দাদা।
একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই সর্বশক্তিমান।
তা চিরসত্য কথা, শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
খোদার আন্দাজ আছে সবাইকে মানতে হবে। ভালো লিখেছেন নিতাই দা।
আজ শুভ মহালয়া। শারদীয় শুভেচ্ছা রইল, শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
খোদার আন্দাজ বরাবর এতে কোন ভুল নাই। শুভকামনা
শুভকামনা আপনার জন্যও থাকলো।
সুন্দর প্রতীকী আলোচনা।
বেশ ভাল লাগল। অনেক ধন্যবাদ জানাই প্রিয় নিতাই দা।
আপনাকেও অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় আনু আনোয়ার দাদা।
সুন্দর পরিবেশনা।