আমার দুঃস্বপ্ন

একদিন রাতে পেটে খুব ক্ষুধা নিয়ে,
চুপচাপ শুয়ে রইলাম পেট মাটিতে দিয়ে।
আমি সেদিন মুহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়লাম,
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম!
দেখলাম পেটের ক্ষুধা সইতে না পেরে,
আমি যেন ঠিক ঠিক যাচ্ছিলাম মরে!
ওমনি এক দরবেশ এসে বললো আমায়,
‘তুই কি খুব কষ্টে আছিস ক্ষুধার জ্বালায়?’

বললাম, ‘হ্যাঁ, ক্ষুধায় আমার জীবন যায়,
একবার বলুন খাবার আমি পাবো কোথায়?’
দরবেশ বললো, ‘চলে যাও পাহাড় পর্বতে,
কেউ আসবে না তোমায় সাহায্য করতে।’
দরবেশের কথায় চলে গেলাম পাহাড়ে,
গিয়ে দেখি সেখানেও মরছে অনাহারে!
বুঝলাম পাহাড়ের মানুষেরও শান্তি নেই,
এখানেও মানুষের প্রতি মানুষের মায়া নেই!

উঠলাম গিয়ে এক উঁচু পাহাড়ের উপরে,
হঠাৎ কে যেন আমায় ফেলে দেয় সাগরে।
সাগরে পড়ে খেলাম কত-না হাবুডুবু,
হয়ে গেলাম শারীরিকভাবে খুবই কাবু!
আমাকে উদ্ধার করে একজন জেলে,
জেলে আর আমাকে দিলো না ফেলে!
আমায় তুলে আনলো তার নিজের ঘরে,
তা দেখে প্রতিবেশীরা হিংসায় মরে!

থাকলাম না আর অসহায় জেলের ওখানে,
আবার চলে গেলাম এক গহীন নির্জন বনে।
দেখি পশুপাখিরা মরছে ক্ষুধার জ্বালায়,
হায় হায় হায় এখন আমি কি করি উপায়!
ঘুরি একা একা অসহায় হয়ে আপন মনে,
হঠাৎ দেখা হলো ক্ষুধার্ত সিংহের সনে!
আমি অসহায় বললাম ঐ সিংহের কানে।
সিংহ কি বুজে আর কি শুনে, কে জানে!

ক্ষুধার্ত হিংহটা চলে গেলো গহীন বনে।
পশুর রাজা সিংহ আমায় আর খেলো না,
হিংস্র পশু আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো না।
আবার হঠাৎ দেখা হয় সেই দরবেশের সাথে,
জিজ্ঞেস করলো, ‘তুই কিছুই পারিসনি খেতে?’
বললামা না বাবা না কিছুই খেতে পারিনি,
দরবেশ বললো চলে যাও লোকালয়ে এক্ষুনি!
দরবেশ বাবার কথায় আবার শুরু করি হাঁটা,

বনের পথ, খালি পা, বিঁধে কতো কাঁটা।
তবুও থামলাম না বনের হিংস্র পশুর ভয়ে,
একসময় বন ছেড়ে চলে এলাম লোকালয়ে।
এসে দেখি হায়, মানুষ মানুষের রক্ত খায়,
আমি আরও হয়ে গেলাম অসহায় নিরুপায়!
একি সবখানে দেখি ভয়ানক কী সব কাণ্ড,
দুর্নীতিতে পুরো রাজ্য হয়ে যাচ্ছে লণ্ডভণ্ড!
যাদের হাতে থাকে রাষ্ট্রীয় যতো ক্ষমতা,

তাদের ভেতরে থাকে না বিন্দুমাত্র মমতা!
যারা হবে এদেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ,
তারাই অনুসরণ করে চলছে মরণের পথ!
যেখানে পাবার কথা নারীজাতি মায়ের সম্মান,
সেখানে হচ্ছে অগ্রগতি মা-বোনেরা অসম্মান।
দেখি কিছু মায়ের জাতি নারীরাও বেপরোয়া,
নিজের স্বামীকে ঘুমে রেখে করে পরকীয়া!
শুনেছি আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নাকি যুবকরা,
দেখছি তাদেরও আজ ধর্ষণ মামলায় হাতকড়া।

যেখানে হবার কথা অপরাধী ধর্ষকের ফাঁসি,
সেখানে উকিল মশাই বাজায় মোহন বাঁশি।
এসব দেখে ভাবি এ আবার কেমন অবিচার?
মিথ্যাবাদী করেই যাচ্ছে সত্যবাদীকে অত্যাচার।
আরও দেখলাম করোনাকালে কতো নেতা,
জনগণের ভোটে জিতে ভাবে শুধু নিজের কথা।
গরিব বাঁচতে রিলিফ দেয় বর্তমান সরকার,
সেই রিলিফ দুর্নীতিবাজ নেতাদেরই দরকার।

অসহায় গরিবরা পায় না রিলিফের সেসব চাল,
গরিবদের কপালে জোটে আঘাত গালা-গাল!
রিলিফের চাল পাওয়া যায় অসাধু নেতার ঘরে,
পাওয়া যায় গর্তে, নেতার পানি ভরা পুকুরে।
খাটের নিচে পাওয়া যায় রিলিফের যতো তেল,
ধরা খেয়ে কতো দুর্নীতিবাজ নেতা খাটলেন জেল।
দেখে মনে হলো ওদের লজ্জা শরম বলতে নেই,
আবার কেউ কেউ বলে ওদের জন্মেরই ঠিক নেই।

ওরা মনে হয় মানুষ নয়, মানুষ বেশী অমানুষ!
ওদের এই জীবনে আর হচ্ছে না কোনও হুঁশ?
ওরা ঠিক হিংস্র জানোয়ার, রাক্ষস রক্তচোষা!
গরিবের রক্ত চুষে খাওয়াই ওদের নেশা পেশা।
একসময় আমার সামনে আসলো সেই দরবেশ,
দরবেশ বললো, ‘এইতো স্বাধীন সোনার দেশ!’
আমি দরবেশ বাবার কথা শুনে ভাবি মনে মনে!
তাহলে কি আবার আমি চলে যাবো বনে?

দেখেছি বনের পশুদেরও আছে মায়া মমতা,
কিন্তু মানুষের মাঝে নেই কোনও মানবতা!

নিতাই বাবু সম্পর্কে

নিতাই বাবু ২০১৫ সালে তিনি শখের বশে একটা ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করে লেখালেখি শুরু করেন।তিনি লিখতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের কথা। লিখতেন নগরবাসীর কথা। একসময় ২০১৭ সালে সেই ব্লগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্লগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাহেবের হাত থেকে ২০১৬ সালের সেরা লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন। সাথে নগর কথক উপাধিও পেয়ে যান। এরপর সেই ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিনি শব্দনীড় ব্লগে রেজিষ্ট্রেশন করেন। শব্দনীড় ব্লগে উনার প্রথম লেখা "আমি রাত জাগা পাখি" শিরোনামে একটা কবিতা। তিনি চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত শব্দনীড় ব্লগে লিখে যাচ্ছেন।

6 thoughts on “আমার দুঃস্বপ্ন

    1. দুঃস্বপ্ন যখন বাস্তবে দেখি, তখন শুধুই ভাবতে থাকি। 

      শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।       

  1. মানুষে মানুষের মানবতা যেন শেষ না হয় কভু। দম্ভ সম্পদ নশ্বর এই পৃথিবীতে।

    1. স্রষ্টা সবার সহায় হোক, এই কামনা করি। 

      শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।       

  2. জীবন সংশ্লিষ্ট বক্তব্য প্রধান কবিতা পড়লাম কবি দা। 

    1. আপনার মন্তব্য মানে আমার লেখার উৎসাহ, শ্রদ্ধেয়া কবি দিদি। শুভেচ্ছা-সহ শুভকামনা থাকলো।         

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।