আমার ঠাকুরদা’র সংসারে শুধু তিন ছেলে ছিলো। এই তিন ছেলের মধ্যে যনি সবার বড়, তিনিই ছিলেন আমার বাবা। আর যেই দুইজন ছিলেন, উনারা আমার বাবা’র ছোট ছিলেন। সেই হিসেবে ওই দুইজন আমার কাকা। একজন মেজো কাকা, আরেকজন ছোট কাকা। এখন হয়তো কেউ বেঁচে নেই। আমার বাবা’র সংসারে আমরা দুই ভাই চার বোন।
আমরা বড় হয়ে যখন ছয় ভাই-বোন কিছু-না-কিছু নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, মারা-মারি করতাম, বাবা তখন ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করতেন। আমাদের সাথে জোরাজুরি করেও যখন ঝগড়া থামাতে পারতেন না, তখন বাবা বাড়ির উঠোনে বসে কপালে হাত রেখে চোখের জলে বুক ভাসাতেন।
কাঁদতে কাঁদতে বলতেন, “ওরে তোরা আর ঝগড়া-ঝাটি করিস না! আমার ভালো লাগে না! আমাকে আর অশান্তিতে রাখিস না! হে দয়াল, আমাকে মৃত্যু দাও! আমি আর সইতে পারছি না!”
সেসময়ে বাবার কান্নাকাটি নিয়ে এতো মাথা ঘামাইনি। যা নিয়ে এখন প্রায় সময়ই ভাবি! এখন বুঝি, সেসময় বাবা কেন কেঁদেছিল! সেসময় বাবা আমাদের ঝগড়া-ঝাটি সইতে পারছিলেন না বিধায় কেঁদে কেঁদে কপাল ঠুকছিল। যদিও এখন বাবা, বড়দাদা, বড়দি এখন বেঁচে নেই, তবুও সেসব ঘটনা নিয়ে এখন নিরালায় বসে খুবই ভাবতে হচ্ছে।
হ্যাঁ, খুব ভাবি এবং খুবই চিন্তা করি। সেইসাথে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি। আচ্ছা, সেসময়ে আমাদের ঝগড়া-ঝাটি দেখে আমার বাবা যে এতো কষ্ট পেয়ে কেঁদেছিলেন, বাবার কান্না দেখে মহান সৃষ্টিকর্তা কতটুকু কষ্ট পেয়েছিলেন?
আমার এই প্রশ্নের কারণ হলো, আমাদের ভাই-বোনের মতো এই পৃথিবীর সেবাইতো মহান সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি! সবাইতো এক জায়গা হতে এবং একইভাবে এই পৃথিবীতে এসেছি।
তা-ই যদি হয়, তাহলে আবারও জানতে ইচ্ছে করে, এই পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা ক’জন? উত্তর আসে, এই পৃথিবীর সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা একজনই!
তাহলে আমরাতো সবাই একজনেরই সৃষ্টি! সেই হিসেবে আমরা সবাই একে অপরের ভাই-বোন অথবা নিকটাত্মীয়! ধর্ম হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন। তাতে আবার দোষের কী? যে যেই ধর্মের অনুসারীই হোক, ডাকছে তো এক জনকেই। আমার একজন ভাই ও-তো নিজের ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। মহান সৃষ্টিকর্তাকে জন্মগত ধর্মে থেকে যেই নামে ডেকেছিল, সেই নামে না ডেকে যেই ধর্ম গ্রহণ করেছে– সেই ধর্মমতে মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভিন্ন নামে ডাকবে; সেটা স্বাভাবিক!
যেমন আমার বাবাকে কেউ বাবা, কেউ কাকা, কেউ জেঠা, কেউ মামা, কেউ দাদা, কেউ পিসা, কেউ মেসো, কেউ ঠাকুরদাদা বলে ডেকেছিল।
তদ্রূপ এই পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মানুষরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে যার যার ধর্মমতে ভিন্ন-ভিন্ন নামে ডাকছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা একজনই। আমরা সবাই একজন মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি! সেই হিসেবে আমরা সবাই সবার ভাই-বোনের মতো অথবা সবাই সবার নিকটাত্মীয়।
তাহলে আমাদের ঝগড়া-ঝাটি, মারা-মারি, কাটা-কাটি দেখে মহান সৃষ্টিকর্তা কি আমার বাবার মতো কষ্ট আর অশান্তি ভোগ করছে না? যেখানে আমরা তাঁর কৃপা পাবার জন্য উপাসনা করি। তাঁকে সন্তুষ্টি করার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারি, সেখানে তাঁকে অশান্তিতে রাখছি কেন? আমাদের নিজের অশান্তি কি মহান সৃষ্টিকর্তার অশান্তি নয়?
আমার মনে হয়, এই কারণেই আজ পৃথিবীর সব দেশেই অশান্তি বিরাজ করছে। আর এই অশান্তির মূল কারণই হচ্ছে, আমাদের বাড়াবাড়ি, মারামারি, আর মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি রাখতে না পারা এবং নিজেদের শান্তি খুঁজতে গিয়ে স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখা।
বি:দ্র: বন্ধুগণ, আমার লেই লেখাটা কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখিনি। লেখাটা আমার নিজের ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে লিখেছি। কারোর মনে আঘাত লাগলে অবশ্যই ইনবক্সে জানাবেন। আর ভালো লাগলো মন্তব্যে প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ রইল।
আজ পৃথিবীর সব দেশেই অশান্তি বিরাজ করছে। আর এই অশান্তির মূল কারণই হচ্ছে, আমাদের বাড়াবাড়ি, মারামারি, আর মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি রাখতে না পারা এবং নিজেদের শান্তি খুঁজতে গিয়ে স্বয়ং মহান সৃষ্টিকর্তাকে অশান্তিতে রাখা। __ সহমত।