কোরানের অচেনা শব্দপুঞ্জের ওপোর হাত বুলোতে বুলোতে কৃষ্ণা ইমোশনালি পৌঁছে গেল সেই ট্রানজিশনাল সময়ের বাগদাদ শহরে। একটার পর একটা গুপ্ত হত্যায় প্রাণ হারাচ্ছেন ইসলামের খলিফারা। উমাইয়া শাসকদের পঙ্কিল রাজনীতি এবং বসরা ও কুফার জনগনের অস্থির মেজাজ উত্যক্ত করে তুললো আল্ মনসুরকে। নিরাপত্তার কারণে তিনি অন্যত্র রাজধানী স্থাপনে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। তাইগ্রীস নদীরতীরে ১৪৫ হিজরি অর্থাৎ ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হল নতুন মহানগরী –‘বাগদাদ ‘ — নদীপথে বসরা হতে যার দূরত্ব ছিল কমপক্ষে ছ’ দিনের পথ। বাগদাদের উপাধি হল – শান্তির নগরী– বা ‘ দারুস্ সালাম ‘। রাজ- জ্যোতিষী নওবখত্ – এর একটি ভবিষ্যৎবানী থেকে গৃহীত। তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, এই শহরের সীমানার মধ্যে কোনওদিন কোন খলিফাকে হত্যা করতে কেউ পারবেনা। এবং সত্যি সত্যি তাই ই ঘটেছিল। ভবিষ্যতের ইতিহাস বাধ্য হয়েছিল ওই ভবিষ্যৎবাণী মান্য করে চলতে। সাঁইত্রিশজন খলিফার মধ্যে একজনও এই বাগদাদ নগরীতে মারা যাননি। তবে বহু পবিত্র আত্মার সমাধি রয়েছে এখানে। সে কারনে বাগদাদের আরও একটি উপাধিপ্রাপ্তি ঘটলো, — “পবিত্র আত্মাদের দূর্গ”। এখানে চির শান্তিতে শুয়ে আছেন ইমাম মুসা আল কজিম, আবু হানিফা, ওলি ও সুফি সম্রাট আবদুল কাদির জিলানি। এবং আরো বহু মহৎ আত্মার অধিকারীগন।
স্বর্নাক্ষরে লেখা কোরানটির স্বর্নলিপির ওপোর হাত বুলোতে বুলোতে কৃষ্ণার মনোজগতে এক আলোড়ন খেলে গেল, ——প্রত্যেক জাতির এক একটা স্বর্নযুগ থাকে। এথেন্সের পেরিক্লিয়াস যুগ, রোমের অগাস্টান যুগের মতো বাগদাদে আল্ মনসুরের হাত ধরে শুরু হয়ে গেল মুসলিম জাহানের গৌরবময় যুগ। এখানে প্রতিষ্ঠিত থাকা অসংখ্য একাডেমী, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দুটি তাদের ঐশ্বর্য, ছাত্রসংখ্যায় ও গুনবত্তায় স- ব প্রতিষ্ঠানকে অতিক্রম করলো। নিজামিয়া কলেজ ও মুস্তানসারিয়া কলেজ। খলিফা মনসুরের আদেশে বিদেশি ভাষার সাহিত্য, বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত-এর অতি মূল্যবান গ্রন্থসমূহ আরবি ভাষায় অনূদিত হল। স্বয়ং খলিফা নিজেই ছিলেন অত্যন্ত উঁচুদরের পন্ডিত ও গাণিতিক। নিজেই আরবি ভাষায় অনুবাদ করলেন বহু প্রাচীন গ্রিক, পারসিক, বাইজানটাইন ও সিরীয় গ্রন্থাবলি। অনুবাদ করলেন অ্যারিস্টটলের কয়েকটি গ্রন্থ, ক্লডিয়াস টলেমির ‘দি আল্ ম্যাজেস্ট্’ ও ইউক্লিডের গ্রন্থসমূহ। আরো অনুবাদ করলেন জ্যোতির্বিদ্যার ওপর ভারতীয় গ্রন্থ ‘সিদ্ধান্ত’। অনুদিত হল ‘ভারতীয় উপকথা ‘
(হিতোপদেশ)।
আল্ মনসুর ও তাঁর সার্থক উত্তরাধিকারীরা যে শুধু বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ করে আনা বিদ্বান ও জ্ঞানীদের অনুরাগী পৃষ্টপোষকই ছিলেন তা নয়, তাঁরা নিজেরাও অত্যন্ত যত্ন ও পরিশ্রম সহকারে জ্ঞানের প্রতিটি শাখার সশ্রদ্ধ অনুশীলন করতেন। শক্তি – সম্পদ- জ্ঞান —– একত্রিত হলে যা হয়, প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল ইসলামের স্বর্নযুগ।
…. সাংঘাতিক জোরে জোরে দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। দিন দুপুর না হলে চোর- ডাকাত ভেবে নেওয়া যেত স্বচ্ছন্দে। কৃষ্ণা কোরানটা যত্ন করে মুড়ে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিজের স্যুটকেশে রেখে দিল। তারপর ধীরে সুস্থে উঠে তবেই দরজার খিল খুললো।
(আর কিছুটা)
উপন্যাসটি যদিও আংশিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং এর সাথে প্রথম দিন থেকেই রয়েছি, যুক্তিসঙ্গত কারণে আমার কাছে বেশ লাগছে। চলুক প্রিয় বন্ধু। ধন্যবাদ।
অনেকধন্যবাদ ।
পড়লাম দিদি ভাই। নমস্কার।
ভাল থাকুন,রিয়া।