শরণং দে হী মে

“মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলাভাষা!/তোমার কোলে, তোমার বোলে কতই শান্তি ভালোবাসা।”

সৃষ্টি প্রথমে মানুষ ভাষার ব্যবহার জানতো না। তারপর ধীরে ধীরে তারা শব্দের ব্যবহার জানলো। তারপর এলো ভাষা। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে ৫ লাখ বছর পূর্বে ভাষার জন্ম হয়েছিলো। আমার ভাষা বাংলা ভাষা। আমি এই ভাষায় কথা বলতে পারা এক গর্বিত বাঙালি। ভাষাকে নিয়ে মানুষ লালিত, পালিত এবং বিকশিত। ভাষার জন্যই বলা যায় মানুষ আজ সভ্য এত উন্নত এবং সৃষ্টির সেরা জীব। ভাষাই মানুষকে দিয়েছে মনের ভাব প্রকাশ করার শক্তি যা আমাদের করেছে সামাজিক এবং সেই সাথে করেছে একে অন্যয়ের সহায়ক।

মা,মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষার সাথে আছে নাড়ির টান। এই সর্ম্পক অবিচ্ছেদ্য। ইউনেস্কো ২১ এ ফেব্রুয়ারীকে “আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষনা করার ফলে একুশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে গেছে। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস সকল মানুষের, সকল ভাষার,সারা বিশ্বের জন্য গৌরবের। সকল ভাষাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর দিন। মাতৃভাষা আমাদের বড় প্রিয়। তাই এর উপর যখন আঘাত আসে, তখন আমরা সর্বশক্তি দিয়ে তাকে প্রতিহত করি। কারণ মাতৃভাষা নিঃশ্বাসের মতো, তাঁর মর্যাদায় অক্ষুন্ন রেখে আমরা আমাদের সুস্থ জীবন অতিবাহিত করি।

এবার একটু ফিরে দেখা আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের ইতিহাসের দিকে। আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, নজরুল, জীবনানন্দ, শরৎচন্দ্র সহ অসংখ্য ভাষাপ্রেমী মনীষীর কর্মপ্রয়াসে বাংলা ভাষা উন্নীত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরব, আত্মত্যাগ ও চেতনার নাম। একুশে ফেব্রুয়ারির বেদনা, স্মৃতি, আনন্দ আমাদের জাতীয় চেতনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এ চেতনা আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয় দুটি রাষ্ট্রে। ভারত কেটে ভাগ করা হয় পাকিস্তান। সেখানে আবার দুটো ভাগ ছিলো। পুর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রথমেই আমাদের বাংলা ভাষাকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করেন। কিন্তু পুর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্রসমাজ এই দাবি মেনে নেয়নি। তাদের দুর্বার আন্দোলনের ফলে পাকিস্তানিরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ওই দিন ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু দুর্জয় ছাত্রসমাজ ওই দিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করলে বর্বর পাকিস্তানি শাসকেরা মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

সালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেক নাম না জানা ভাষা শহীদের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।ভাষা আন্দোলনের এক রক্ত স্বাক্ষরিত দিন বলেই আমাদের জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির বড় তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব ইতিহাসে এক নতুন মর্যাদায় আসীন হয়েছে।

ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ১৯৬১-র ১৯ মে ভারতের আসাম রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত শিলচরে এগারো জন বাঙালি ভাষা বাংলার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন তারা হলেন, কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্রমোহন পাল,বীরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডিচরন সূত্রধর, সত্যেন্দ্র কুমার দেব, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন দাস, তরণী দেবনাথ, সুনীল সরকার এবং সুকোমল পুরকায়স্থ। পৃথিবীতে শুধু বাঙালিরাই তাদের প্রিয় মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষা, চীনের ম্যান্ডার, স্প্যানিশ এবং ইংরেজির পর বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে।

কোনো ভাষা তার প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেললে সেই ভাষা লড়াইয়ে হেরে যায়। যেমন হেরে গেছে পালি ভাষা। কিন্তু প্রচণ্ড শক্তিশালী ভাষাগুলো কালজয়ী, তাই লড়াই করে আজও টিকে আছে সংস্কৃত। বাংলা ভাষা নানান ভাষার মিশ্রণে তৈরী। বাংলা ভাষাতেই আমার বিশ্বাস রয়েছে জগতে সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে আবার।

4 thoughts on “শরণং দে হী মে

  1. ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলাভাষা
    তোমার কোলে, তোমার বোলে কতই শান্তি ভালোবাসা।’
    বাংলা ভাষাতেই আমার বিশ্বাস; জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে আবার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  2. ১৯৬১ সালের ১৯ মে র ইতিহাস খুব সম্ভবত গুহের কোন বইতে পড়েছিলাম। মনে করতে পারছি না। একটু বিস্তারিত আলোচনা করবেন কি?

    1. নিশ্চয়ই আলোচনা করবো অন্যসময়ে .. শুভেচ্ছা

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।