অনন্ত অভিসার

অনন্ত অভিসার

আমার তো আর কিছুই নেই, যে আমি তোমার হাতে দেবো। তোমার কাছ থেকেও নেবো না কিছুই। দেওয়া নেওয়ার ব্যবসা আমার শেখা হয়ে ওঠেনি আজও। পাওয়ার কিছু নেই, দেনাও রাখিনি কোথাও। কেন তবে আবর্তে ঘোরা?

মাটি ঘেঁষে,আকাশের মাঝখান চিরে যে চিল উড়েছিল আলো মেখে, সেও আজ শীতঘুমে গেছে। ডানাজোড়া রেখে গেছে আমার বুকের ওমের ঠিক মাঝে। পাখির মায়ের মত কোলে নিয়ে বসে থাকি সে পালক রোজ। পৃথিবীর মাঝখানেও জ্বলছে আগুন। তবু আজ মনের ভেতর বৃষ্টি হয়ে যেতে পারে।

গুণে রাখা তারাদের মাঝে মাঝে দেখি, কারো কারো যদি ঘুম পায়। ঘুমে ভাসা তারাদের কপালে আলতো হাতের ছোঁয়া রাখি। খুব ভোরে হালকা ঠান্ডা বাতাস দিলে চাদর টেনে দিই গায়ে। গুনগুন করে গাই। সুরে সুরে ঘন হয় রাত, ফিকে হয় রাত। তারপর রং তুলি হাতে বসি।

হালকা মেঘের মতো ভোরে আমাকে হারিয়ে ফেলা অনেক সহজ। রেলিঙের ধার ঘেঁষা পূবের কোণাটা, যেখানে দাঁড়ালে মেঘ ছোঁয়া নেয়। সেইখানে চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি নিজের কাছাকাছি, নিঃশ্বাস ভরে যায় ভালোলাগা গন্ধ। হাওয়ার সাথে মিলে তখন শিশিরের আতর স্নান করি।

কিছু কিছু দিন বড় বেশি একলা হয়ে যাই। চোখের আড়ালে আবডালে ঘুরে বেড়ায় অবুঝ মন। এই ঘর দোরে, উঠোনের আনাচে কানাচে আঁচলের কোনা ধরে পিছু নেয়। কি ভীষণ রাগ হয় তখন, জলরঙা চোখ চেয়ে বুকের মধ্যে মোচড়, তক্ষুনি মন হারিয়ে যায়। সেই ছোটবেলার লুকোচুরি ছল।

এমন কত কত বিকেলে খেলেছি। স্কুল থেকে ফিরেই দৌড়ে যেতাম খেলবো বলে। ওমনি বড়মার ডাক “দু গরস খেয়ে তারপর খেলতে যাবে”। বন্ধুদের সাথে কত খেলায় সন্ধ্যে পার করেছি। আজও খেলি রোজ রোজ। রান্নাবাটি খেলা। এই ভাবে, তবু অন্য ভাবেও ব্যস্ত থাকি অবসরে। অবসর, অবসর, অবসর। ফুসফুসে জমে থাকে অনেকটা কথা, না বলা কথা। নাহ, মনের অলিন্দে নয়, মগজের অলিতেগলিতে না, ফুসফুসের কুঠুরিতে কুঠুরিতে রেখেছি যত্নে তাদের ন্যায্য দাবীতে।

কত লোকের কত কিছু দাবী থাকে। কত জনে আঙুল তুলে অন্যকে দেখায়। কত কি জল্পনা চলে ফিসফিস, গুনগুন শব্দেরা একে একে মাথা তোলে। যদি ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়, তাই শুধু মাথা নেড়ে হেসে সরে যাই। ভুলে গেছি অহংকার আমারও যে আছে, তাই বুঝি আজ এতো চুপচাপ। তবে কি স্বৈরাচারী। কি বলি এদের বল দেখি?

পরিচয়ের বড় বেশি সীমাবদ্ধতা; ক্ষুদ্রতা। শেকলের বাঁধা গণ্ডি পায়ে পায়ে, দম বন্ধ করা পরিসর। মন যে অনন্ত, অসীম। অনেকটা নীল আকাশে মতো। ইচ্ছে হয় রাতের আড়ালে ঘুমের অগোচরে একজোড়া ডানা এঁকে নিই। সেই ডানা পাখা মেলে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাক যেখানে কেউ জানবে না আমায়, কেউ চিনবে না আমায়।

আকাশেই ঘর-বাড়ি হোক না হয়। হাওয়াতে হাওয়াতে হোক পথ আঁকা। আমি শুধুমাত্র আমাকেই দিয়েছি ন্যায্য দাবী মনের কথা জানার। জানি কেউ বুঝতে পারবে না আমাকে। ছুঁতে পারবে না আমার মন। বড় বেশী লাজুক মন যে। তাই একাই থাকি বৃষ্টি, মেঘ আর সাথে অন্ধকার রাত। নিত্যকালের আমার এ অভিসার।

4 thoughts on “অনন্ত অভিসার

  1. কীভাবে কবিতা লিখি জানি না এখন
    কবিতার সজ্ঞা তবু খুঁজি না নয়ন!
    মানুষ ভীষণ একা
    যতদিন পাবে না সে
    নিজের দেখা!

    শুভেচ্ছাhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

  2. নিত্যকাল আমাদের অনেকের এই অনন্ত অভিসার। পদে পদে শুভেচ্ছা প্রিয় কবিবন্ধু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।