হেমন্ত সকাল
বনে বনে হেমন্ত লেগে আছে, আলগোছে। নদী তখন পার হয়ে যায় মেঘলা রাঙামাটির দেশ। শুরু হয় নিষ্ঠুর রোদের খেলা। কিছুক্ষণ আগে মনের বৃষ্টি ঝরেছিলো। সন্ধ্যেতে সোঁদা হাওয়া গুনে নিয়ে আমার সে রূপকথা-চাঁদ ভিজতে ভিজতে ধুয়ে গেছে। হয়তোবা নিভে গেছে, এখন রাত-দিন জগজিৎ সিং। বুকের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ।
মাঝে মাঝে এমন রাতও আসে, যখন একলা রাতে একলা চাঁদের পাশে লক্ষ কোটি চাঁদ জ্বলে ওঠে। সেসব রাত আসে, এখনও আসে। রূপকথার সিঁড়ি বেয়ে তুরতুর করে নেমে এসেছিল রাতপরী। সেই ছোট্ট বেলার মতোই গল্প শোনায় আমায়। ছোট বেলার প্রিয় গল্প ছিলো গোলাপী মুক্তোর গল্প। জেঠু শুনিয়ে ঘুম পারাতো।
সময় নদী তিরতির করে পায়ের পাতার নীচে আকুল হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমার ঘরে ফেরার ইচ্ছেরা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আজও কোন ঘর নেই আমার। একমাত্র ঘর ছিলো তোমার চোখের ছায়ায়, ঊর্ণি নদীতে বানভাসি সে ঘর। ঊর্নির শরীর জুড়ে রোদের খেলা।
একটু একটু করে নিজের বুকের ক্ষত লুকিয়ে রাখি। আর খানিকটা ওম মেখে নেই দুহাতে। খুব ইচ্ছে করে পাখির ডানার পালক হতে। নিঃশ্বাসে ধুয়ে গেছে মেঘ, একচিলতে নিকোনো উঠোন আর আমি। বুকের নীচে চোরাবালি নরম স্রোত।মনের ভেতর ধুলোর পরে ধুলোই জমে। আজকাল দুচোখের মেঘে অকুল বর্ষা।
কুশের আসন জলে ভিজিয়ে বসি, একটু একটু নিজেকে গড়ে নিই নতুন ভাবে। বুকের ভিতর অনেক খানি আতর জমা আছে। পরজন্মে আবার যদি ফিরি। পাতার জন্ম নেবো, শুধু আমায় ছুঁয়ে থাকবো আমি। কেউ কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখেনা। এখন একটু একটু শব্দ কমে আসে। কেউ ছোঁয়নি এ মন। কেউ চায়নি ছুঁতে তাকে।
ছায়ার নীচে ঘুম থেকে যায় অপেক্ষায়। এবার বরং চুপকথা হই আমি। হস্তিনাপুর অনেক দূর। রোজ তবু মন ডানা মেলে ওড়ে। যদি একবার ঢেকে নাও আমায়, এই মূহুর্তে সব ছাড়ব আমি, এই ঘর-চৌকাঠ-শরীর। বস্ত্র চাইনি দ্রূপদ কণ্যা হয়ে, জানি, তোমারও চুলের ফাঁকে ময়ূর পালক উধাও। তুমিই বরং, নগ্ন করে মেলে ধরো আমায়। এই বাজারে, এই সংসারে, নগ্ন করো আমায়। তিলে তিলে বিক্ষত হোক আদুর ত্বক, নিলামে বিকিয়ে যাক যত প্রেম, যত স্বপ্ন। এমনি করে শোধ হোক সহস্র জন্ম পাপ।
এখন ভাবি শত্রুতাই সঠিক, ভালোবেসে মুখোশ চেনা যায়না। মুখ, মুখোশের খেলায় আমি পরাজিত তোমার কাছে। মুখোশ আমার ছিলোই না কখনো। যারা শিকার ধরে বেড়ায় তাদের লুকোতে হয় মুখোশের আড়ালে। তুমি যে পাকা শিকারি, একথা মানতেই হবে। মাথার ভেতর অসংখ্য অলিগলি। সন্ধ্যে বেলায় ধুনোর ধোঁয়ায় দেখি, চোখে জলে ঝাপসা আলো। অসহ্য এ আলো, অসহ্য এ শরীর।
এজন্মটা এরম ভাবেই কাটুক, হাজার জন্ম দূরত্বে জন্মাই, সেইদিন সামনাসামনি লড়াইয়ে আসবে তো তুমি? এখনো আছি, বেঁচে, এইটুকুন কাড়বার সাধ্যি নেই কারও। তারও নেই, তোমারও নেই, আমারও নেই। জীবিত। এটুকুই। হয়তবা সহস্র জন্ম পরে, ফিরলেও শত্রু হিসেবে তোমাকেই চাইবো। ভালোবাসায় কার্পণ্য করিনি যেনো শত্রুতাও করবো উদার ভাবেই।
এখন আমি শুধু অপেক্ষায় থাকি, মণিপদ্মে যদি ঘুম আসে।
'ভালোবাসায় কার্পণ্য করিনি যেনো শত্রুতাও করবো উদার ভাবেই।
এখন আমি শুধু অপেক্ষায় থাকি, মণিপদ্মে যদি ঘুম আসে।'




ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু।
আক্ষেপের পরিমাণটাই তুলনামূলক বেশি থাকে জীবনে।
সুন্দর বলেছেন নিশাদ দা।
সময় নদী তিরতির করে পায়ের পাতার নীচে আকুল হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমার ঘরে ফেরার ইচ্ছেরা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আজও কোন ঘর নেই আমার। একমাত্র ঘর ছিলো তোমার চোখের ছায়ায়, ঊর্ণি নদীতে বানভাসি সে ঘর। ঊর্নির শরীর জুড়ে রোদের খেলা।
আপনার লেখা পড়ে মন্তব্য করার ভাষা খুঁজে পাই না। আসলেই আপনি অনেক ভালো লিখেন। শুভ কামনা রইল।
আপনিও কম ভালো লিখেন না গল্প দা। আমার থেকে সুন্দর লেখেন। এখুনি আপনার গল্প পড়ে এলাম।
গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও দাদা।