ভুলে থাকা মন -২২
অনেক দিন পরে আজ তোর কাছে এসেছি রে মন। কেমন আছিস? অভিমান করেছিস? তাও তো তোর অভিমান করলে আমি আছি মান ভাঙানোর জন্য। আমার যে তাও নেই, অভিমান করতেই ভুলে গেছি। অথচ দেখ কি ভীষণ অভিমানী ছিলাম আমি। দাদু কিছু বললেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকতাম, যতক্ষণ না দাদু কথা বলবে ততক্ষণ অভিমান করে থাকতাম। আর যেই দাদু এসে ডাকতো ‘আমার বড়দিদি কি রাগ করে আছে?’ ওমনি অভিমান গলে জল। রেগে যে ছিলাম তাই ভুলে যেতাম। কি অদ্ভূত না! জানিস তো ভালোবাসা নামক পোশাক জীবন থেকে খুলে রেখেছি। এক জীবনে সব পাওয়া যায় বল? তবুও দেখ কি অক্লেশে বলি আমার তো সবই আছে। কোথাও কিছু কমতি পড়েনি। এই ছাপোষা জীবনের হিসেব আর মেলাতে যাই না। আমাকে যে ভালোবাসা যায় না আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তবে করুণা করিস না কখনও মন। ভালোবাসতে না পারিস অন্তত করুণা করিস না। এ আমার সইবে না রে।
এক ফালি মেটে রঙ রেখেছি, গ্রামের রাস্তা আঁকবো। ইচ্ছেঘুড়ি গুছিয়ে রেখেছি ঝিকিমিকি রোদ্দুরের মাঝে। চোখ আয়নায় মনখারাপিয়া রঙ। আমি চাইনা তবুও মনখারাপেরা যখন তখন আসে। জানিস মন, এইতো সেদিন এক বয়োঃজ্যেষ্ঠ, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষের কাছে আমার প্রশংসা শুনলাম। তুই শুনবি? আচ্ছা শোন তবে -একদিন আমি একদম মন খারাপ করে আছি, আজও মন খারাপ হলে চুপচাপ হয়ে যাই। তাঁর সাথে হঠাৎই দেখা, আমাকে দেখেই তিনি বললেন মন খারাপ কেন? তারপর একথা সে কথার পরে তিনি বললেন “আমার বয়স অনেক বেশি, পৃথিবী তোমার থেকে বেশি দেখেছি। অভিজ্ঞতা তাই বেশি। একটা কথা বলি শোনো – মানুষ দু ধরনের হয়। class আর mass এর অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ মানুষ এই mass এর মধ্যেই থাকে। থাকতে ভালোবাসে। আর হাতেগোনা কিছু মানুষ class এর অন্তর্ভুক্ত। আর তুমি তাদের একজন। যেমন ধরো এক জায়গায় ভীষণ ভীড়, সবাই ঠেলাঠেলি করছে ইঁদুর দৌড়ে। আর দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে একা, যে তার বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে, তার বিভিন্ন গুণাবলী দিয়ে জায়গাটা আলো করে রেখেছে, ওই মেয়েটাই হলে তুমি। যারা তোমায় চিনবে তারা জানবে এই ভীড়ে থেকেও তুমি কতো আলাদা”।জানিস মন এইসব শুনলে ভয় হয়। নিজের প্রশংসা খুব বেশি শুনিনি তো কখনো।
অনেকগুলো ছবি, অনেক গুলো বছর, তোর সাথে, এক সাথে মিলেমিশে আছি। এই শীতের কাঁচা মিঠে রোদের মতো ভালো থাক। ভালো থাক নীল আকাশের মতো , ভালো থাক শিশির হতে চাওয়া এক ফোঁটা হিমের মতো। চোখে এক ফোঁটা জল যদি জমে, নদী থেকে গড়ে নিস। অনেকগুলো ছবি, অনেক গুলো বছর, তোর সাথে, এক সাথে মিলেমিশে আছি। এই শীতের কাঁচা মিঠে রোদের মতো ভালো থাক। ভালো থাক নীল আকাশের মতো, ভালো থাক শিশির হতে চাওয়া এক ফোঁটা হিমের মতো। চোখে এক ফোঁটা জল যদি জমে, নদী থেকে গড়ে নিস। ছিঁড়ে গেছে সমস্ত আঁকার খাতা, ছিঁড়ে গেছে পুতুলের জামা, ছিঁড়ে গেছে ভেলভেট টুপি, ঝলমলে আহ্লাদি ছবি।কিছু জিনিস জমা হয় রোজ, কিছু মুছে দিতে হয়। আর থেকে যাস তুই শুধু সবখানে। গাছেদের কোটরের কোণ ঘেঁষে। কথা যত তোর সাথে আমারই, আর কেউ জানবেনা সত্যি। টেলিপ্যাথি হোক চুপিচুপি, ফিসফাস আবডালে হরদম। এইখানে আছি আমি, আর, তুই শুধু জল-ছায়াতে। খুব ভালো থেকে যাব আমি। তুই ভালো থাক।ভালো থাক ঘর-বাড়ি, ভালো থাক লোক-জন, ভালো থাক কাজ কাজ খেলারা, ভালো থাক ভালোভাবে থাকারা। ভালো থাক একটুক থেকে যাওয়া।
_________
রিয়া চক্রবর্তী।
জীবন স্মৃতির কথা গুলোন আপনার হাতে অসাধারণ হয়ে ফুটে উঠে। দূর এক সময়ে ফেলে আসা জীবনের অসম্ভব অধ্যায় … কে ভুলতে পারে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা বন্ধু।
ভালো থাকবেন বন্ধু, প্রতিটি জীবন এক একটা যুদ্ধ। আমার কৃতজ্ঞতা জানবেন বন্ধু।
✅অনবদ্য লেখনশৈলী
ধন্যবাদ কবি বাবু দা।
মনের কথাগুলো খুব সুন্দর সরলভাবে প্রকাশ করার জন্য শ্রদ্ধার সাথে ভালোবাসাও রইল। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময় শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি।
আপনার প্রতিও শ্রদ্ধা নিতাই বাবু দা। অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
রিয়াদি,
আমি ঠিক মতো আপনার এই লেখাটা সম্পর্কে বলতে পারলাম কিনা জানি না, তাই আপনাকে কোট করি , "…আর দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে একা, যে তার বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে, তার বিভিন্ন গুণাবলী দিয়ে জায়গাটা আলো করে রেখেছে, ওই মেয়েটাই হলে তুমি" আপনার এই লেখাটাও পাঠকদের মন তেমন করে আলো করলো – মানে মন ভরালো ।খুব মায়াবী সুন্দর লেখা আপনার । বিউটিফুল !
অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রিয় কবি ইসলাম দা।
জীবন সংসারের চমৎকার অনুভূতির প্রকাশ করেছেন কবি দিদি
অনেক শুভ কামনা রইল————-
আপনার জন্যও শুভকামনা প্রিয় কবিবাবু।