সবুজে ঢাকা সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা গ্রাম, মরিচাধরা পূর্ণ ও অর্ধপূণ নতুনের জলছাপ ছেয়ে আছে টিনের চাল। টিনের ঘরের পাশেই বেশ বড় বৃক্ষ। পুরাতন বৃক্ষের এতোটাই বয়স যে বৃক্ষের গায়ে শেওলা পড়া দেখে সেই অনুভব করা যাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে শেওলা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছ, যেন তপ্ত মরুর বুকে একাকাশ জল।
প্রসস্থ রাস্তার পাশেই লোহার স্কয়ারবার ব্ক্স দিয়ে তৈরী প্রায় পাঁচ ফুট গেইট। রাস্তা থেকে এটাই বাড়িতে প্রবেশ করার মূল ফটক। তারপর উঠোন, আর উঠোনের একপাশে সবুজ বৃক্ষ, দুর্বা ঘাস। দেখে মনে হবে এ যেন সবুজে ঘেরা নিউজিল্যান্ড আর তার একপাশেই ঘাস ফুল, গাঁধা, গোলাপ আর সূর্যমুখী ফুলের বাগান।
মরিচাধরা ঘরটির অপর প্রান্তে মানে দক্ষিনা বাতাসের প্রবেশ পথ হিসেবে এটা জানালা আর জানালা ঘেষে বেলী গাছ। প্রায় সাত থেকে আট ফুট উচ্চতায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রের খুব প্রিয় ফুল বেলী। বেলীর গাছের ফাঁকে সূর্যের হাসি এসে প্রত্যহ রুদ্রের স্বপ্নময় নিদ্রার পরিসমাপ্তি ঘটায়। এরপর শুরু হয় জানালার গ্রীল ধরে বেলীর ভালোবাসার স্পর্শ গ্রহণ। বক্ষটা প্রসারিত হতে হতে মনে হয় ত্রিশ ইঞ্চি হয়েছে প্রায় চল্লিশ। এমন করে শ্বাস গ্রহণ করে নিশ্বাস ফেলা।
প্রতিদিনের মতো আজও স্বপ্নের সাথে খেলা করেছে রুদ্র। ঘুম ভাঙার পর থেকেই সে ভীষণ অস্থির, প্রেসারের রোগীদের মতোই তার ভাব খানা শারীরিক অবস্থা। শরতের সকাল তবুও যেন মাথার উপর সূর্যের ছাতায় গ্রীষ্মের ঘাম ঝরছে তার শরীরে। দেখে বুঝাই যাচ্ছে ভালো কোনো স্বপ্ন দেখেনি।
নাস্তার টেবিলে রুদ্রের দেরি দেখে রুদ্রের মা ঘরে এসে হাজির। দেখে রুদ্রের পুরো শরীর বেয়ে জল পড়ছে মনে হয় কেউ একজন বালতি বোঝাই জল ঢেলেছে তার গায়ে। মা যে ঘরে প্রবেশ করেছে সেটা সে বলতেই পারছে না। বিচলিত মা তার সন্তানের স্পর্শ নিলেন।
কিরে বাবা, তোর কি হয়েছে? তুই এমন করছিস কেন? আর গোসল করার মতো শরীরের ঘাম বের হচ্ছে কেন তোর? খুব বেশি শরীর খারাপ মনে হচ্ছে তোর। চল, ডাক্তারের কাছে যাই। রুদ্র মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, মা আমি আজ খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি।
কি এমন স্বপ্ন দেখেছিস বাবা, স্বপ্ন কি আর সত্যি হয়? বোকা ছেলে আমার। তা কি এমন স্বপ্ন দেখেছিস বাবা?
মা, স্বপ্নটা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমাকে এক গ্লাস পানি দিবে ? ক্ষমা করো তোমাকে এমন অনুরোধ করার জন্য। পানি ভর্তি গ্লাস হাতে নিতেই যেন শূন্য হয়ে গেলো পুরো গ্লাস। বাবা এবার বল, তারপর চল নাস্তা করবি।
মা, স্বপ্নে দেখি, আমি বেলী ফুল গাছ থেকে একটা ফুল ছিড়ে নিচ্ছি আর তখন বেলী গাছ আমাকে বলছে, “রুদ্র আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি আর তুমি কি না ? তুমিই বলো তোমাকে কি না দেই, সকালে সতেজ ভালোবাসার স্পর্শ, যে ঘ্রাণে তোমার হৃদয় ভরে যায়, আমার ছায়া যা তোমার প্রাত নিন্দ্রা সুখময় হয়। এ সবই তো প্রত্যেক মা তার সন্তানকে মাটির ঘ্রাণের মতো মাতৃত্বের ঘ্রাণে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে থাকে। আমিও তো ঠিক তেমনি তোমাকে দিই।
প্রতিটি বৃক্ষই তো মায়ের মতো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে যায় তার সন্তানকে। শত আঘাতেও সন্তানের খারাপ চায় না মা। তবুও বলো প্রত্যেক সন্তান কেমন করে তার মায়ের বুক চিরে মাতৃত্ব ছিড়ে ফেলে সামান্য স্বার্থে। সেই ফুলটি হয়তো তার প্রেয়সীকেই সে দিবে তবে কেন প্রেয়সীকে মায়ের মাতৃত্বে স্থান দিতে পারে না। প্রত্যেকটি ফুল প্রতিটি মায়ের মাতৃত্বের ঘ্রাণ।
স্বপ্নের কথা বলেই যেন রুদ্র তার মায়ের কোলে ঢলে পড়লো, দু’ঠোঁটের বাঁধ ভেঙে কয়েকটি শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে “মা আমি কোনো দিন তোমায় ছেড়ে যাবো না, এমন প্রেয়সীর কোনো প্রয়োজন নেই, যে প্রেয়সীর জন্য মাতৃত্বের বন্ধন ছিড়ে ফেলতে হয়।” মা, তুমি আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যেও না। যতিদিন বেঁচে থাকবো মা, কোনোদিন তোমার অযত্ন অবেহলা দিবো না। ফুলের মতোই মতোয় নিঃস্বার্থ ভালোবেসে যাবো।
প্রতিটি বৃক্ষই তো মায়ের মতো, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে যায় তার সন্তানকে। শত আঘাতেও সন্তানের খারাপ চায় না মা। ভালবাসা নিবেন প্রিয় বন্ধু মি. রুদ্র আমিন। অভিজ্ঞ ব্যক্তি গল্পটি চিত্রায়ণ করলে দারুণ হবে।
মন্তব্যে ধন্যবাদ, তবে চিত্রায়ন কে করবে… চিত্রায়ন করার জন্যই লিখেছিলাম কিন্তু..মিডিয়া যব্বর এক জায়গা
প্রথমতঃ শিরোনামটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ গল্পের কন্টেন্ট বা ভাব। এককথায় অসাধারণ ফুটে উঠেছে। অনেকদিন পর এমন লিখা পড়লাম মি. আমিন।
শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বললে সেটা তো মেনেই নিতে হবে। এটা অনেকদিন আগের লিখা ভাইজান, বর্তমানে তেমন লিখতে পারছি না। অবয়ব পাঁচ পর্ব শব্দনীড়ে প্রকাশ হওয়ার পর ৬ষ্ঠ পর্ব আজও পূর্ণ করতে পারিনি, তবে আবার ধরবো সেটা….
শুভ কাজে দেরি করতে নেই মি. রুদ্র আমিন। এগিয়ে যান। ধন্যবাদ।
ভালই তো লিখছিলেন কবি। থামলেন কেনো ? চালিয়ে নিন।