– কি রে, অমন মন মরা হয়ে আছিস কেন? কি হয়েছে?
– কিছু না।
– চল, একটু ঘুরে আসবি।
কথা হচ্ছে ঘুড়ি আর লাটাইয়ের মধ্যে। ঘুড়ির মনে সবসময় একটা পরাধীনতার যন্ত্রনা। স্বাধীনভাবে উড়তে না পারার কষ্ট। যেই সে পাখা মেলে মুক্তির আনন্দে আকাশের নীলে নিজেকে বিলিয়ে দেয়, ভেসে যেতে চায় অজানার সীমানায়, অমনি লাটাইয়ের টান। বাধ্য হয়েই ফিরে আসতে হয় লাটাইয়ের কাছে।
দুঃখ-ক্ষোভ আর অভিমানে ঘুড়ির মনটা বড্ড বিমর্ষ হয়ে যায়। কিন্ত তার তো কিছু করারও নেই। সুতো যে বাঁধা ওই লাটায়ের সাথে।
সেদিন সবে উড়াল দিয়েছে ঘুড়ি। ভাবছে আজ অনেকদূর যাবে। উড়ে উড়ে দেখবে অনেককিছুই। সুতো ছাড়তেও শুরু করেছে লাটাই। হঠাৎ কি যে হয় লাটাইয়ের। গুটাতে থাকে সুতো। ঘুড়িকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে আসতেই হচ্ছিল। প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল ঘুড়ি। মনের ভিতরে একটা জিদ চেপে গিয়েছিল ঘুড়ির। আর না। সুযোগ পেলেই ভোকাট্টা হয়ে যাবে সে । লাটাইয়ের সমস্ত বাঁধন ছিঁড়ে ও চলে যাবে অনেক অনেক দুরে। মুক্তির সুখে ভেসে বেড়াবে ইচ্ছেমত।
কিন্তু শেষপর্যন্ত নেমে আসতেই হল তাকে লাটাইয়ের কাছে। আর তখন ক্ষোভ সামলাতে না পেরে ঘুড়ি লাটাইকে বলেই ফেলেছিল- তোমার এই বাঁধন আমার আর ভাল লাগে না। যখন ইচ্ছে আমাকে নিয়ে যা খুশি করবে। ভাল্লাগে না আর।
– রাগ করিস নে ঘুড়ি। আমার এ টান তো ভালবাসার।
– ছাই ভালবাসার। আমাকে সবসময় তুমি তোমার অধীনেই রাখতে চাও। সে আমি ভালভাবেই বুঝেছি।
– না রে পাগল না। আমাদের এ সুতো সম্পর্কের। সম্পর্ক ছিন্ন করে ভাল থাকা যায় না।
– ছাড়ো তোমার সম্পর্ক। এমন পরাধীনভাবে আমি আর বাঁচতে চাই না। একদিন ঠিক তোমার সুতো ছিঁড়ে চলে যাব। স্বাধীনতার সুখে গা ভাসাব আকাশে। উড়ে বেড়াব বাতাসে। যেখানে খুশি সেখানে চলে যাব।
– না, অমন কাজ কখনও করিস নে ঘুড়ি। টানহীন বেঁচে থাকা যায় না। সে জীবন বড় বিপদের।
লাটাই সুতো ছাড়তে ছাড়তে ঘুড়িকে বলে – যা, একটু উড়ে আয়। মন ভাল হয়ে যাবে দেখবি ‘খন।
ঘুড়ি কোনো উত্তর দেয় না। ওর মনের ভেতর একটা গোপন অভিসন্ধি দানা বাঁধতে থাকে। আজ যেভাবেই হোক সে ভোকাট্টা হবে।
ঘুড়ি উড়ছে। উড়ছে। উড়ছে—
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া। আর সাথে সাথে ঘুড়িটি পাশের ঘুড়িটির সুতোয় নিজেকে জড়িয়ে নেয়। হেচকা টান দিয়ে সুতো ছিঁড়ে ফেলে ঘুড়ি। আর সাথেসাথে মুক্তির আনন্দে হো হো করে হেসে ওঠে। চিৎকার করে লাটাইকে বলে- আমি চললাম। তোমার দাসত্ব থেকে আজ আমি মুক্ত। চললাম আমার ইচ্ছেমত —-
লাটাইয়ের বুক একটা অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠল। – যাস নে ঘুড়ি। বিপদে পড়ে যাবি। যাস নে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। ঘুড়ি এখন মুক্তিপাগল। ফুরফুরে তার মন। উড়ছে। শুধু উড়ছে। অসীম যেন তাকে ডাকছে। বন্ধনহীনতার আনন্দদমকায় পাক খেতে খেতে ভাসতে থাকে ঘুড়ি। হা হা হা। কি আনন্দ! কি আনন্দ! এই জীবনই তো সে চেয়ে এসেছে এতদিন ধরে।
উচ্ছল বাতাসের ধাক্কায় ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে ঘুড়ির রঙিন কাগুজে দেহ। তবু ঘুড়ি আপ্রাণ উড়তে চায়।
হঠাৎ দমকা হাওয়ার মত্ততা থেমে যায়। ঘুড়ি আর বাতাসের ভালবাসায় ভর দিয়ে যেন ভেসে থাকে পারছে না। বৈরী হাওয়া তাকে জোর করে ঠেলে দিতে চাইছে নিচের দিকে। শত চেষ্টা করেও ঘুড়ি আর ভেসে থাকতে পারছে না। ছেঁড়া ছেঁড়া দেহের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সমস্ত ভাস-শক্তি।
নিচের দিকে তাকায়। আসন্ন বিপদের আশংকায় কেঁপে ঘুড়ির বুক। দেখে – সে যেখানে পড়তে চলেছে সেখানে অথই কালো জলরাশি। বিশাল বাঁওড়। বড্ড অসহায় বোধ করে ঘুড়ি। ভয়ে বুকের জল যেন শুকিয়ে আসছে তার। এতক্ষণে ঘুড়ি বুঝতে পারে লাটাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সে খুব ভুল করেছে। চিৎকার করে বলে – লাটাই, আমাকে বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই…
লাটাইও বুঝতে পারে তার প্রিয় ঘুড়ির পরিণতী কোনদিকে যেতে চলেছে। কিন্তু কিছুই যে তার করার নেই আর।
– আমি জলে পড়ে যাচ্ছি লাটাই। আমাকে বাঁ..চাও…
নিরুপায় লাটাই কুয়াশাভরা চোখে তাকিয়ে তার ভালবাসার ঘুড়ির দিকে।
–
অসাধারণ মি. শংকর দেবনাথ। আপনার জন্য অভিনন্দন।
ধন্যবাদ দাদা
দারুণ শংকর দা।
ধন্যবাদ দিদি
ঘুড়ি-লাটাই জীবন কথোপকথন। এই ধরণের লিখা আপনার হাতে অসাধারণ আসে শংকর দা। আমার পছন্দ হয়।
ধন্যবাদ দাদা
খুব ভালো লেগেছে। এক নিঃশ্বাসে পড়লাম!
ধন্যবাদ
* আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছি…
ধন্যবাদ