-মমিন, ও মমিন।
-কে? ও চাচা? আসেন। বসেন।
মমিন বারান্দায় একটা চৌকি পেতে দিতে দিতে বলে- তা, চাচা, এহেবারে বিহানবেলায়!
জমিজিরাত না থাকায় মমিন জনমজুরি করে পরের ক্ষেতে। আর চাচা মানে রহমত মালিতা এলাকার ধনী কৃষক। অনেক জমি আছে তার মাঠে। রহমত চাচার ক্ষেতেই বেশিরভাগ সময় কাজ করে মমিন।
রহমত চাচা বলেন- বলতিছি কি, দক্ষিণির মাঠের পাটগুলোন তো কাটার দরকার। আজ থেকে তাহলি লেগে যা মমিন। আব্দুলকেও বলিছি। তুই আর আব্দুল দুইজনে কাটবি।
পাটক্ষেতের কথা শুনেই মমিনের বুকের ভেতরে যেন ছ্যাঁত করে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে চারবছর আগের এক করুণ ছবি।
সেও এই রহমতচাচার পাটক্ষেত। পাটগাছ কাটতে গিয়েছিল মমিন আর পাশের বাড়ির দিলু। পাটক্ষেতের কাছে যেতেই একটা পচা দুর্গন্ধ তাদের নাকে এল। দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে সেদিন তারা যা দেখেছিল, সেই মর্মান্তিক দৃশ্য আজও ভুলতে পারেনি। তারপর থেকে মমিন আর কোনোদিন পাট কাটতেও যায়নি কারো ক্ষেতে। পাটক্ষেতের নাম শুনলেই তার মুখটা যেন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তাকাতে পারে না কোনো পাটক্ষেেতের দিকে। একটা বিভৎস্য ভয়, একটা অসহ কষ্ট তার বুকে চেপে বসে যেন।
অল্পবয়েসের একটা মেয়ের নগ্ন পচাগলা দেহ। গলায় ওড়নার ফাঁস। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়ের দাগ। পেট, মুখ, বুক যেন কোনো হিংস্র পশু বিষাক্ত দাঁত দিয়ে খুবলেছে। পুলিশ এসেছিল। জানা গিয়েছিল মেয়েটা দূরের কোনো এক গাঁয়ের। যারা ওকে রেপ করে এভাবে খুন করেছিল তাদের শেষপর্যন্ত পুলিশ খুঁজে পেয়েছিল কিনা সে খবর আর পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম প্রথম ওদেরও কয়েকবার থানায় যেতে হয়েছিল।
-কি হল, কতা বলতিছিস নে কেন? কী ভাবতিছিস মমিন?
এতক্ষণ মমিন সেই চার বছর আগেকার ভয়ঙ্কর স্মৃতির মধ্যেই ডুবেছিল। চাচার ডাকে স্বাভাবিক হল। ফিরে এল বর্তমানে।
অস্ফূট ভয়ার্ত কণ্ঠে “অ্যাঁ” উচ্চারণ করে মমিন।
-বলতিছি, তা’লি যাচ্ছিস তো পাট কাটতি?
মমিন আস্তে আস্তে বলল- শরীরডা ভাল না চাচা।
পরীক্ষামুলক মন্তব্য
ধন্যবাদ
অণুগল্পটি পড়লাম মি. শংকর দেবনাথ। আমারও শরীর ছমছম করে উঠলো।
ধন্যবাদ
গ্রামের এসব পাট ক্ষেতে এমন ঘটনা নাকি হয়ে থাকে। তা কখনো নিজের চোখে দেখিনি। আপনার লেখনী পড়ে নিজেই যেন নিজের চোখে সামনে দেখতে পাচ্ছি। পঁচা দুর্গন্ধ যেন নাকে আসতে লাগলো।
ধন্যবাদ
পাটক্ষেত নিয়ে এমন অসংখ্য ঘটনা আমি শুনেছি। কেন জানিনা ভয় হয় আমার দাদা।
ধন্যবাদ
অণুগল্পটি পড়লাম দাদা।
ধন্যবাদ