অণুগল্প : নীলা

নীলা তন্ন তন্ন করে ব্যার্থ সার্টিফিকেট খুঁজছে। এ ঘরে ও ঘরে। হঠাৎ যেন বুকের ঠিক মধ্যখানে চিনচিন করে উঠলো। স্বপ্ন গড়ে স্বপ্ন ভাঙে স্বপনেরও খেলা ঘরে। ছোট্ট একটা চিঠির ভাঁজে আঙ্গুল ছুঁয়ে নিমিষে চলে গেলো কক্সবাজার।

বয়স তখন ১৮ কি ১৯। বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার গিয়েছিলো। সেই কবেকার কথা। আঁধার রাতে দুই মাতাল বন্ধুর খুনসুটি আর কত গল্প কত কথা। ধোঁয়াটে রুমে আধো আলোতে ভাসলো দুটি পাখি মেঘের ভেলায়। ঝুম বৃষ্টি নামলো, চঞ্চল নীলা সে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলো। কখন কিভাবে দুটি ঠোঁট, ঠোঁটের ভেতর নীল স্বপ্নের মতন ছুঁয়ে রইলো অনন্ত আদি প্রেমের দুই যুগল।

নীলার হাতে তখনও ছোট্ট চিঠিখানা ধরা। নীলার পুত্র যখন এসে বললো, মা তোমার ফোন বাজছে. নীলা যেন, চিলের ডানায় চড়ে চলে এলো বর্তমানে. আদা, রসুন পেঁয়াজ, বাড়ি ভাড়া, সংসারের সস্তা নিয়মে।

বুকের চিনচিন ব্যথার দিকে তাকানোর সময় নেই নীলার। নীলার মেয়ে অনবরত যত্রতত্র মেঘের মূত্র ত্যাগ করছে। নীলা একবার মুছে এসে আবারও সার্টিফিকেট খুঁজছে। এর মধ্যে নীলার মায়ের ফোন এলো। ফোন ধরেই নীলা বললো, হ্যালো মা- ভালোবাসি মা, তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। মা তুমি কি জানো, বিষয় সম্পত্তি, নাম ডাক হাঁক কোনো কিছুর লোভ আমার কোনো কালে ছিল না। ছিলাম কাঙ্গাল ভালোবাসার। মাগো, ভালোবাসা কেন কাঁদালো আমাকে ? কোনো ভাবালো আমাকে? দরকষাকষিতে ব্যস্ত জীবনে আমার আবির্ভাব কেনই বা ঘটলো !!

নীলার মা এত কথার ফুলঝুরিতে কেমন যেন ঘাবড়ে গেলো। নীলা নিজেকে সামলে হো হো করে হেসে মা কে বললো, অবাক হচ্ছ ? ধুর মা… আমি তো আমার শব্দের বাগানের কিছু কুয়াশায় ভেজা গল্পের লাইন বলছিলাম।
মা মেয়ে দুজনই খুব হাসলো।

16 thoughts on “অণুগল্প : নীলা

  1. আমি তো আমার শব্দের বাগানের কিছু কুয়াশায় ভেজা গল্পের লাইন বলছিলাম।

    * বিমুগ্ধ, সুপ্রিয়…. https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. ধন্যবাদ আজাদ ভাই। ব্লগে সময় কম দিন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন।

  2. বিষয়বস্তু খুব ভালো। পাঠে মুগ্ধ হলাম।শুভেচ্ছা রইলো প্রিয়কবির জন্য। জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।