খাবার

খাবার

নোংরা ন্যাংটো ছেলেটা
মায়ের শতচ্ছিন্ন আঁচল টেনে ধরছিল বারবার,
-ও মা, খেতে দে!

মূহুর্তে লক্ষ হাউই হাওয়া ফালাফালা করে উড়ে গেল
আলো হয়ে গেল সুবেশ সুবেশার ভাগ্যাকাশ,
গুরুগম্ভীর অশোকার সূর্য উচ্ছলিত ব্যাঙ্কোয়েট হল
দাঁড়িয়ে পড়লো, ব্যান্ডে বাজলো জাতীয়সঙ্গীত,
যাজক এগিয়ে এলেন রাজদন্ড-মুকুট হাতে-
নতুন রাজা অভিষিক্ত হলেন।

মখমলি সোফায় সামন্ত রাজা রানীরা
যারা কদিন আগেও হবুরাজাকে ল্যাজে খেলাচ্ছিলেন,
দিচ্ছিলেন সংবিধানসম্মত মাপা হাততালি,
রাজার মুখে প্রোটোকলসম্মত মাপা হাসি।
দেশী বিদেশী দিলখুশ খাদ্যপাহাড়ের সামনে
অজস্র সুগন্ধী বক্তৃতার পর
রাজা এগিয়ে এলেন-
নখের ডগায় একটু খাবার খুঁটে রাজা গন্ধ শুঁকলেন।
ঝলসে উঠলো চারপাশে ফ্ল্যাশবাল্ব-
ছলকে উঠলো খবরের রঙীন শিরোনাম-
এত খাবার থাকতে রাজা নিলেন করলাসেদ্ধ…!
আহা! মেরা রাজা মহান হ্যায়…!

ছেলেটা মার কাছে খেতে চাইছিল
ঝলসানো ইঁদুর কিম্বা কন্দমূল।

সে ভাত কখনো চোখেই দেখেনি।

সৌমিত্র চক্রবর্তী সম্পর্কে

পরিচিতিঃ জন্ম বিহারের এক অখ্যাত বনাঞ্চলে বাবার চাকরীস্থলে। রসায়নে স্নাতকোত্তর এবং ম্যানেজমেন্ট পাশ করে কিছুদিন সাংবাদিকতা। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একাধারে নাট্যকার, কবি এবং গল্পকার। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, পুস্তক পর্যালোচনা, বিভিন্ন ধরনের লেখা ছড়িয়ে আছে দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্র পত্রিকায় ও সংবাদপত্রে। উৎপল দত্ত সহ বহু বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের কাছে শিখেছেন থিয়েটার। বহু বিচিত্র ও ব্যাপ্ত ময় তাঁর জীবন। বন, জঙ্গল, পশু, পাখি, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে তাঁর দীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। কবিতা ও বিভিন্ন লেখা লেখিতে তিনি মস্তিস্কের থেকে হৃদয়ের ভুমিকাকে বড় করে দেখেন। কবিতা, গল্প, নাটক এবং মুক্তগদ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা নয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো বইছে লু, থিয়েটার কথা, তিতলিঝোরা, নীলপাখিকে উড়ো চিঠি, রাত্রি আমার নৈশপ্রিয়া, ব্রিজের নীচে বৃষ্টি, ২ একাঙ্ক, প্রতিলিপি এবং বেবুশ্যে চাঁদ, খণ্ড ক্যানভাস। ইতিপূর্বে অঙ্গন সহ কয়েকটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বর্তমানে অক্ষর বৃত্ত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। নেশা ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ।

2 thoughts on “খাবার

  1. বাহ্যিক ধোপ-দুরস্ত মানুষ আর চাকচিক্যের আবহের বাইরেও আমাদের যে সত্য-চিত্র লুকিয়ে থাকে; এ সত্য কোন মতেই অস্বীকারের সুযোগ নেই। অভাব এখনও সর্বত্র। :(

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।